বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব লক্ষ্মীপুরের ৩ লাখ কৃষক

আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ০৭

লক্ষ্মীপুরে এবার ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। এই দুই খাতেই ক্ষতি হয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার সদর উপজেলায়। 

এ ছাড়া বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। তার মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন প্রায় তিন লাখ কৃষক। বন্যার দেড় মাস পার হলেও এখনো ২০টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। 

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ২০ বছরের মধ্যে এত পানি আর জলাবদ্ধতা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ। বন্যার দেড় মাস পার হলেও অনেক এলাকা থেকে এখনো পানি নামেনি। এখন পর্যন্ত রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এদিকে গত দুদিনের বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় আবার জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি ও বন্যা। এতে জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে একের পর এক গ্রাম ও শহর পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েন পাঁচ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। ভেসে যায় ৫০ হাজার পুকুর ও ঘেরের ২৫০ কোটি টাকার মাছ। তলিয়ে যায় আমনের বীজতলা-আবাদসহ ৬০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। 

এ ছাড়া পানির তোড়ে ২০০টি ব্রিজ-কালভার্ট এবং কাঁচাপাকা ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অপরদিকে ৯ হাজার ৮৭০ কিমি বিদ্যুৎ লাইন ও ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ ছাড়া ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৬টি গবাদিপশু ভেসে যাওয়াসহ বন্যায় মারা গেছে। সব মিলিয়ে জেলায় বন্যায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এতে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতির শিকার হন। এর মধ্যে পুঁজিসহ সব হারিয়ে নিঃস্ব তিন লাখ কৃষক ও চাষি। কীভাবে সামনের দিনগুলোতে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বানবাসী এসব মানুষের। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতির শিকার প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে কৃষকই তিন লাখ। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। কাজ করে যাচ্ছি।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, আমন আবাদসহ মোট শস্যখেত রয়েছে ৯০ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৫৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল। যার ক্ষয়ক্ষতি ৬৩৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। 

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। পাশাপাশি খালগুলোর বাঁধ অপসারণ ও দুপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন উচ্ছেদ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬৯ টন চাল ও ৬৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে, এটি অব্যাহত থাকবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত