দোলপূর্ণিমায় লালন স্মরণ

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮: ০৯

হাজার হাজার মানুষের পদচারণে মুখর কালীগঙ্গার তীর। মাজারসংলগ্ন এলাকায় লালনের গান গাইছেন বাউলেরা। সে সঙ্গে চলছে গুরু-শিষ্যের ভাববিনিময়। দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ার আক্ষেপ সবাই মিটিয়ে নিতে চাইছেন একলহমায়। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া এখন সংগীতময়। দোতারা, করতাল, বাঁশি, মৃদঙ্গের শব্দ যেন আবহসংগীত হয়ে বাজছে এ পুরো দৃশ্যপটে। এদিকে কালীগঙ্গা নদীর তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জমিয়ে বসেছেন পসরা নিয়ে। ক্রেতাও আসছেন। দেখেশুনে কিনছেন, কিংবা কিনছেন না। তাতে কারও কোনো সমস্যা নেই। একতারা, বাঁশি আর গুবগুবির শব্দে সব অভিযোগ যেন উড়ে যাচ্ছে নিমেষেই।

প্রামাণ্য কোনো দলিল নেই; কিন্তু পরম্পরা মেনে দুই শ বছর ধরে চলে আসছে এ উৎসব। কথিত আছে, ফকির লালন শাহ তাঁর জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতিবছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমার রাতে বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ করতেন। চলত গান আর দর্শনের আলোচনা। দূরদূরান্ত থেকে তাঁর ভক্তরা আসতেন এ সময়। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক লালন সাঁইয়ের মৃত্যুর পরও এই উৎসব চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর ভক্ত ও অনুসারীরা। লালন সাঁই নিজেই যে উৎসব করতেন বলে কথিত আছে, তাঁর মৃত্যুর পর সেই উৎসব তাঁকে স্মরণের আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। এবার এই আনুষ্ঠানিকতা চলবে তিন দিন।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় লালন একাডেমি এ স্মরণোৎসবের আয়োজন করে। ইতিমধ্যে আধ্যাত্মিকগুরু ফকির লালনকে স্মরণ ও নিজেকে চিনে সোনার মানুষ হতে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থী উপস্থিত হয়েছেন ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে।

লালন স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ (এমপি)। এ সময় লালন একাডেমির মূল মঞ্চে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। প্রধান আলোচক ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপ-উপাচার্য ড. শাহিনুর রহমান। আলোচনা শেষে মূল মঞ্চে একাডেমির শিল্পীরা লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করেন।

উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার শবে বরাতের কারণে দুই দিন এগিয়ে আনা হয়েছে অনুষ্ঠানমালা। ঐতিহাসিক এই লালন উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, লালন উৎসব ঘিরে প্রতিদিন লাখো দেশি-বিদেশি লালন অনুসারীর সমাগম ঘটে ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে। তাই এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো ছেঁউড়িয়া এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার এবং মেটাল ডিটেকটর গেট। বিদেশি অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা।

লালনের এ স্মরণ উৎসব শেষ হবে ৬ মার্চ রাতে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত