করোনায়ও পোশাক রপ্তানিতে চমক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫: ১৭
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১৫

করোনা মহামারির চাপ সামলে চাঙাভাব ফিরে এসেছে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে। উদ্যোক্তাদের মতে, কোভিডের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর ক্রেতারা ব্যাপকভাবে রপ্তানি আদেশ দিয়েছিলেন, যার প্রভাবে এখনো রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। সেই সঙ্গে ফিরে পায় হারানো গৌরব। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল। কিন্তু করোনার প্রথম বছর ভিয়েতনামের কাছে সেই অবস্থান হারায় বাংলাদেশ।

তবে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সাত মাসে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ ১৯৩ কোটি ৬৯ লাখ ইউএস ডলারের পোশাক রপ্তানি বেশি করেছে।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বছর ভালোই গেল। শেষ কয়েক মাস ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল। তবে পরের মাসগুলো কেমন যাবে, সেটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কারণ, ওমিক্রনের কারণে অনেক দেশেই আউটলেট বন্ধ। সেখানে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। বায়াররা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলে বাজারের গতি অনেকটাই মন্থর।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য থেকে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি এবং চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার।

তবে আশার কথা হলো, গত এক বছরে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র খাত। ইতিমধ্যে দেশে ১৫০টি পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপিত হয়েছে। পরিবেশবান্ধব আরও কিছু কারখানা নির্মাণাধীন।

এ বছরই রপ্তানিকারকেরা একের পর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছেন। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে, যেটি এক মাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইপিবির তথ্যে, গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এই আয় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। অক্টোবরের আয় সেপ্টেম্বরের ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের রেকর্ডও ভেঙেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। সাধারণত দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। বেশ কিছু কারণে গত মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও মিয়ানমারে পোশাক উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশের বেশ কিছু অর্ডার আমাদের দেশে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর সায়মা হক বিদিশা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যদি ওমিক্রন সংক্রমণের আগের অবস্থা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতি এবং সার্বিকভাবে বৈশিক অর্থনীতি একধরনের রিকভারির পথে হাঁটছে। মোটামুটিভাবে অনেক খাত রিকভার করেও গেছে। যেহেতু গত কিছু সময় একটা মন্দা ভাব ছিল। সুতরাং আমাদের যাঁরা ব্যবসায়ী আছেন, তাঁরাও সেটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার বিদেশে ক্রিসমাসসহ অন্যান্য উৎসব ঘিরে যে চাহিদা তৈরি হয়, সেটাও আগের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। সুতরাং রপ্তানিতে ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত