হাসপাতালে অনীহা, প্রাণ ঝরছে তাসলিমাদের

অর্চি হক, ঢাকা
Thumbnail image

কৈশোর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয় তাসলিমা আক্তারের। পুতুল খেলার বয়সে সংসার সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। আর বয়স ১৭ হতেই হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। পরিবারের সবার খেয়াল রাখত যে মেয়েটি, তার যত্ন করার জন্য ছিল না কেউ। নয় মাসের গর্ভকালে কখনোই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এই কিশোরীর। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম হবে, এমনটিই চেয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তাই অসুস্থ শরীরেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বদলে সংসারের সব কাজ করতে হয়েছে তাকে, যার মূল্য চুকাতে হয়ে মৃত্যু দিয়ে। 

তাসলিমার চাচাতো বোন সাজিদা ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, পানি ভাঙার দুই দিন পরও তাসলিমা বাসায় ছিল। যখন বাঁচার আশা একেবারেই ক্ষীণ, তখন তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পাঠানো হয়। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিল সে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করায় সেটা কখনো ধরাই পড়েনি। স্থানীয় ওই ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পর তাসলিমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চারদিন কোমায় থেকে গত ২০ এপ্রিল মারা যায় সে। 

মাতৃত্বকালে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করানোয় এবং বাড়িতে প্রসবের কারণে বহু অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তাসলিমার মতো ভাগ্যবরণ করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪২ শতাংশ নারীই মাতৃত্বকালে হাসপাতালে যান না বা প্রসূতিসেবা পান না। নারীর স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা এবং হাসপাতালগুলোতে ভোগান্তি ও অপ্রতুল সেবার কারণে পরিবারের সদস্যরাই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নিতে চান না। 

এমন প্রেক্ষাপটে আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘হাসপাতালে সন্তান প্রসব করান, মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচান’। 

গর্ভধারণ জটিলতার কারণে, প্রসবকালে এবং প্রসব-পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে প্রাণহানি ঘটলে তা মাতৃমৃত্যু। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৫৩। অর্থাৎ এক লাখ জীবিত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৫৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মাতৃত্বকালীন সেবা আটবার দেওয়ার পরামর্শ দিলেও বাংলাদেশে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় সেটি চারবার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ নারী এই চারবারের সেবাও গ্রহণ করেন না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে সরকারিভাবে মাতৃত্বকালীন সেবার আওতায় আসেন ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রসূতি। এনজিও ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ক্লিনিকের আওতায় আসেন ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশের মতো অন্তঃসত্ত্বা গর্ভকালীন সেবার আওতায় আসেন। বাকি ৪২ শতাংশ কখনোই মাতৃত্বকালীন সেবা নেন না বা পান না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত