মামুনুর রশীদ
ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্টমাস্টার গল্পটি পড়ে খুবই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। প্রথম কারণ, গল্পটি যে বেদনাবিধুর আবেগ তৈরি করে রতনের জন্য, সেই বয়সে তা রীতিমতো অশ্রু ঝরিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, আমার বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার। গ্রাম, আধা শহর, শহর এবং শেষ পর্যন্ত জেলা শহরের প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার হয়েছিলেন। বড় হয়ে আবারও রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর পড়ি। সেখানেও অমলের ডাকপিয়নের জন্য অপেক্ষাটিও খুবই দাগ কেটেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে ডাকঘর এসেছে, এসেছে ডাকপিয়ন। চলচ্চিত্রেও ডাকপিয়ন একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যেদিন থেকে চিঠিপত্র এসেছে, সেদিন থেকেই ডাকঘর আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভীষণ জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ডাকঘরে জাতীয় পতাকা ওড়ে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ভারত যেখানেই গিয়েছি, ডাকঘর সসম্মানে বিরাজ করছে। আমার বাবা যেহেতু ডাকঘরে চাকরি করতেন, তাই আমার খুব গর্ব হতো। পোস্ট অফিসে গিয়ে একটি পোস্টকার্ড কিনে বাবাকে চিঠি লিখতাম। পোস্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাবার পরিচয় দিয়ে কথা বলতাম। বাল্যকালের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরা ডাকঘরে কাজ করেন, তাঁরা সমাজে খুবই সম্মানিত। এলাকায় মান্যগণ্য লোকেরা পোস্ট অফিসের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ কেউ ভেতরে আসার সৌভাগ্য অর্জন করতেন। ডাকঘরগুলোর গুরুত্ব বুঝে টেলিগ্রাফ থাকত কোথাও কোথাও। সেই টরেটক্কা শব্দকে আবিষ্কার করে ভাষা রূপান্তরিত হতো। সম্প্রতি এক সংবাদে দেখা গেল, পোস্ট অফিস যেহেতু লোকসানের বিষয়, তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতীতেও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কলকারখানার বড় একটা অংশ পানির দামে বিক্রি হয়ে গেছে। খবরটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিও ইতিহাসের বিষয় হতে চলেছে। আজকের প্রজন্ম এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না।
জানা গেছে, বছরে ৭০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় এই প্রতিষ্ঠানের জন্য। সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কি, যেখানে লোকসান গুনতে হয় না? রেল, সড়ক, পরিবহন থেকে শুরু করে সবই তো লোকসানের কাতারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে লোকসান একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু বিপুল পরিমাণ জনশক্তি এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকে, তাদের কথা ভেবেও এসব বন্ধ করা হয় না। আদমজী জুট মিল হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতো বলে বন্ধ করে দেওয়া হলো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী ছিল প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ। এখন লোকসান কেন হয়? এ-ও আমরা জানি। ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা, দুর্বল পরিকল্পনা এবং সর্বময় দুর্নীতি। এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয় রাজনৈতিক দল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংগত কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত করার একটা হিড়িক পড়ে যায়; যা সে সময় প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু একেবারেই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগগুলো হয়েছিল। যোগ্যতা দেখার অবকাশও ছিল না। এ সময় শ্রমিকশ্রেণিও তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। পরে সেনাশাসনের সময় বিরাষ্ট্রীকরণ শুরু হয়। বড় বড় কলকারখানা পানির দামে বিক্রি হয়। রেলওয়ের বড় বড় ওয়ার্কশপের নাট-বল্টু বিক্রি হয়ে যায়। অবাক লাগে, মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাকালে সিনেমা হল, হোটেল—এসবও লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়। বড় বড় স্থাপনা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। শোনা গেছে, পোস্ট অফিসের মধ্যেও নাকি দুর্নীতি ঢুকে গিয়েছিল। অথচ পোস্ট অফিসের প্রতি আস্থা যেন মানুষের না হারায়, সে জন্য কর্মচারীদের লঘু পাপে গুরু দণ্ডও দেওয়া হতো।
এসব সবার জানা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী হবে এর ভবিষ্যৎ? পোস্ট অফিস চিঠিপত্র বিলিব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধরনের কাজে যুক্ত থাকত। সেভিংস ব্যাংক, রেডিও লাইসেন্স, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় থেকে অনেক কিছু। আমেরিকায় পাসপোর্ট বিলির কাজটিও করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। শত শত বছরের আস্থা অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করার পরিবর্তে বন্ধ করতে হবে কেন? তাই যদি হবে, তবে এত অর্থ ব্যয়ে আগারগাঁওয়ে পোস্ট অফিসের আদলে এই সুদৃশ্য ভবনটি নির্মিত হলো কেন? এই ভবনের যে আদল, সেখানে অন্য কোনো দপ্তর কি বসানো যাবে। বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিস অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা আমার জানা নেই। সারা বিশ্বে পোস্ট অফিসই দ্রুত বিলি বা ডকুমেন্টস বিলির জন্য স্পিট পোস্টের ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু এটি সরকারি, তাই নিরাপত্তাও অন্যদের চেয়ে বেশি।
ডাকঘর বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাম্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। স্ট্যাম্পের নান্দনিকতা ও ব্যবহারও শেষ হয়ে যাবে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ে যুক্ত হওয়া নানা নান্দনিকতারও অবসান ঘটবে। এ কথা সত্যি, সেলফোন এসে যোগাযোগের অন্য ব্যবস্থাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও এতগুলো কুরিয়ার সার্ভিস কী করে চলছে? পোস্ট অফিসের সঞ্চয়ী হিসাবটির ওপর মানুষের আস্থা ব্যাপক। একটা পাসবুক নিয়ে অনেকেই টাকা রাখে। অনেক ধরনের দুর্নীতি থেকে পোস্ট অফিস বাঁচাতেও পারে। নানা ধরনের আইনবিষয়ক ঘটনারও এই প্রতিষ্ঠান সাক্ষ্য দিয়ে থাকে।
একদা শোনা যেত, ডাক বিভাগের আয় থেকে অন্য সব প্রতিষ্ঠান চলত। তাই প্রতিষ্ঠানটির ক্ষয়টা কবে থেকে শুরু হলো, কীভাবে শুরু হলো, তারও একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ প্রয়োজন? হয়তো এসব বিচার-বিবেচনা এত দিনে শেষ হয়ে গেছে। বিজ্ঞ আমলারা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। একসময় বাংলাদেশে অবকাঠামোর অভাব ছিল নিদারুণ, এখন অনেকাংশে সেই অভাব পূরণ হয়েছে। প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় স্থাপনাও তৈরি হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনার পরিধি দেখলে মনে হয় শিক্ষা-বাণিজ্যের কী দারুণ প্রসার ঘটেছে। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন সত্যিকার শিক্ষিত, সংস্কৃতিমান মানুষ বেরিয়ে আসছে, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এসব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এসবের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁরাও নানা ধরনের কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হয়েছেন। তাই সংখ্যা বড় নয়, গুণও বড় করে বিবেচনা করা উচিত। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে বিশাল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। আবার বিশালসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত বেকারও বাড়ছে। শিক্ষার গুণগত মান এমনভাবে পড়ে যাচ্ছে যে তাতে জাতি গঠনের কাজটিও দুরূহ হয়ে পড়ছে। এই উচ্চশিক্ষিতরা যদি যথাযোগ্য নিয়োগ না পায়, তাহলে তারাও দুর্নীতির পথ ধরবে।
একটা পথ এখন বেশ খোলা তা হলো—রাজনীতি। রাজনীতির ব্যবসাটাও বেশ রমরমা। রাজনীতিবিদেরাই বা এত টাকা কোথায় পান? সম্প্রতি ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম এত টাকার খেলায় কীভাবে মেতে উঠলেন? অধিকাংশ এমপির বিলাসবহুল জীবন এবং জনকল্যাণবিমুখতা আমাদের কী জানান দেয়? পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার বিপুল-বিশাল অর্থের মালিকানা একটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা কোথায় নিয়ে যায়? কী করে এসব হয়? এসব প্রশ্ন সর্বক্ষণ এখন সচেতন মানুষের মাথায়। অথচ সামান্য লোকসানের জন্য ডাকঘর বন্ধ করে দিতে হবে কেন? ব্যাংক যেভাবে প্রতিবছর লোপাট হয়ে যাচ্ছে, তা যদি সত্যি দেশের শিল্পায়নে নিয়োগ করা যেত, তাহলে দেশে শিল্পবিপ্লবও সম্ভব হতো। আবার এই টাকা দেশেও থাকছে না। অবলীলায় পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ডাকঘরের অমল রাজা চিঠির জন্য অসুস্থতা নিয়েও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত। ডাকপিয়ন কখনো সুসংবাদ দেয়, কখনো দুঃসংবাদ। কিন্তু যদি ডাকঘরই না থাকে, তাহলে কোন সুসংবাদের অপেক্ষা করব।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্টমাস্টার গল্পটি পড়ে খুবই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। প্রথম কারণ, গল্পটি যে বেদনাবিধুর আবেগ তৈরি করে রতনের জন্য, সেই বয়সে তা রীতিমতো অশ্রু ঝরিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, আমার বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার। গ্রাম, আধা শহর, শহর এবং শেষ পর্যন্ত জেলা শহরের প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার হয়েছিলেন। বড় হয়ে আবারও রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর পড়ি। সেখানেও অমলের ডাকপিয়নের জন্য অপেক্ষাটিও খুবই দাগ কেটেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে ডাকঘর এসেছে, এসেছে ডাকপিয়ন। চলচ্চিত্রেও ডাকপিয়ন একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যেদিন থেকে চিঠিপত্র এসেছে, সেদিন থেকেই ডাকঘর আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভীষণ জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ডাকঘরে জাতীয় পতাকা ওড়ে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ভারত যেখানেই গিয়েছি, ডাকঘর সসম্মানে বিরাজ করছে। আমার বাবা যেহেতু ডাকঘরে চাকরি করতেন, তাই আমার খুব গর্ব হতো। পোস্ট অফিসে গিয়ে একটি পোস্টকার্ড কিনে বাবাকে চিঠি লিখতাম। পোস্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাবার পরিচয় দিয়ে কথা বলতাম। বাল্যকালের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরা ডাকঘরে কাজ করেন, তাঁরা সমাজে খুবই সম্মানিত। এলাকায় মান্যগণ্য লোকেরা পোস্ট অফিসের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কেউ কেউ ভেতরে আসার সৌভাগ্য অর্জন করতেন। ডাকঘরগুলোর গুরুত্ব বুঝে টেলিগ্রাফ থাকত কোথাও কোথাও। সেই টরেটক্কা শব্দকে আবিষ্কার করে ভাষা রূপান্তরিত হতো। সম্প্রতি এক সংবাদে দেখা গেল, পোস্ট অফিস যেহেতু লোকসানের বিষয়, তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতীতেও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কলকারখানার বড় একটা অংশ পানির দামে বিক্রি হয়ে গেছে। খবরটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিও ইতিহাসের বিষয় হতে চলেছে। আজকের প্রজন্ম এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না।
জানা গেছে, বছরে ৭০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় এই প্রতিষ্ঠানের জন্য। সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কি, যেখানে লোকসান গুনতে হয় না? রেল, সড়ক, পরিবহন থেকে শুরু করে সবই তো লোকসানের কাতারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে লোকসান একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু বিপুল পরিমাণ জনশক্তি এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকে, তাদের কথা ভেবেও এসব বন্ধ করা হয় না। আদমজী জুট মিল হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতো বলে বন্ধ করে দেওয়া হলো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী ছিল প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ। এখন লোকসান কেন হয়? এ-ও আমরা জানি। ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা, দুর্বল পরিকল্পনা এবং সর্বময় দুর্নীতি। এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয় রাজনৈতিক দল।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংগত কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত করার একটা হিড়িক পড়ে যায়; যা সে সময় প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু একেবারেই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগগুলো হয়েছিল। যোগ্যতা দেখার অবকাশও ছিল না। এ সময় শ্রমিকশ্রেণিও তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। পরে সেনাশাসনের সময় বিরাষ্ট্রীকরণ শুরু হয়। বড় বড় কলকারখানা পানির দামে বিক্রি হয়। রেলওয়ের বড় বড় ওয়ার্কশপের নাট-বল্টু বিক্রি হয়ে যায়। অবাক লাগে, মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাকালে সিনেমা হল, হোটেল—এসবও লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়। বড় বড় স্থাপনা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। শোনা গেছে, পোস্ট অফিসের মধ্যেও নাকি দুর্নীতি ঢুকে গিয়েছিল। অথচ পোস্ট অফিসের প্রতি আস্থা যেন মানুষের না হারায়, সে জন্য কর্মচারীদের লঘু পাপে গুরু দণ্ডও দেওয়া হতো।
এসব সবার জানা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী হবে এর ভবিষ্যৎ? পোস্ট অফিস চিঠিপত্র বিলিব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ধরনের কাজে যুক্ত থাকত। সেভিংস ব্যাংক, রেডিও লাইসেন্স, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় থেকে অনেক কিছু। আমেরিকায় পাসপোর্ট বিলির কাজটিও করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। শত শত বছরের আস্থা অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করার পরিবর্তে বন্ধ করতে হবে কেন? তাই যদি হবে, তবে এত অর্থ ব্যয়ে আগারগাঁওয়ে পোস্ট অফিসের আদলে এই সুদৃশ্য ভবনটি নির্মিত হলো কেন? এই ভবনের যে আদল, সেখানে অন্য কোনো দপ্তর কি বসানো যাবে। বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিস অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা আমার জানা নেই। সারা বিশ্বে পোস্ট অফিসই দ্রুত বিলি বা ডকুমেন্টস বিলির জন্য স্পিট পোস্টের ব্যবস্থা করেছে। যেহেতু এটি সরকারি, তাই নিরাপত্তাও অন্যদের চেয়ে বেশি।
ডাকঘর বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাম্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। স্ট্যাম্পের নান্দনিকতা ও ব্যবহারও শেষ হয়ে যাবে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ে যুক্ত হওয়া নানা নান্দনিকতারও অবসান ঘটবে। এ কথা সত্যি, সেলফোন এসে যোগাযোগের অন্য ব্যবস্থাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও এতগুলো কুরিয়ার সার্ভিস কী করে চলছে? পোস্ট অফিসের সঞ্চয়ী হিসাবটির ওপর মানুষের আস্থা ব্যাপক। একটা পাসবুক নিয়ে অনেকেই টাকা রাখে। অনেক ধরনের দুর্নীতি থেকে পোস্ট অফিস বাঁচাতেও পারে। নানা ধরনের আইনবিষয়ক ঘটনারও এই প্রতিষ্ঠান সাক্ষ্য দিয়ে থাকে।
একদা শোনা যেত, ডাক বিভাগের আয় থেকে অন্য সব প্রতিষ্ঠান চলত। তাই প্রতিষ্ঠানটির ক্ষয়টা কবে থেকে শুরু হলো, কীভাবে শুরু হলো, তারও একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ প্রয়োজন? হয়তো এসব বিচার-বিবেচনা এত দিনে শেষ হয়ে গেছে। বিজ্ঞ আমলারা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। একসময় বাংলাদেশে অবকাঠামোর অভাব ছিল নিদারুণ, এখন অনেকাংশে সেই অভাব পূরণ হয়েছে। প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় স্থাপনাও তৈরি হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনার পরিধি দেখলে মনে হয় শিক্ষা-বাণিজ্যের কী দারুণ প্রসার ঘটেছে। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন সত্যিকার শিক্ষিত, সংস্কৃতিমান মানুষ বেরিয়ে আসছে, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এসব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এসবের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁরাও নানা ধরনের কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হয়েছেন। তাই সংখ্যা বড় নয়, গুণও বড় করে বিবেচনা করা উচিত। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে বিশাল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। আবার বিশালসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত বেকারও বাড়ছে। শিক্ষার গুণগত মান এমনভাবে পড়ে যাচ্ছে যে তাতে জাতি গঠনের কাজটিও দুরূহ হয়ে পড়ছে। এই উচ্চশিক্ষিতরা যদি যথাযোগ্য নিয়োগ না পায়, তাহলে তারাও দুর্নীতির পথ ধরবে।
একটা পথ এখন বেশ খোলা তা হলো—রাজনীতি। রাজনীতির ব্যবসাটাও বেশ রমরমা। রাজনীতিবিদেরাই বা এত টাকা কোথায় পান? সম্প্রতি ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম এত টাকার খেলায় কীভাবে মেতে উঠলেন? অধিকাংশ এমপির বিলাসবহুল জীবন এবং জনকল্যাণবিমুখতা আমাদের কী জানান দেয়? পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার বিপুল-বিশাল অর্থের মালিকানা একটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা কোথায় নিয়ে যায়? কী করে এসব হয়? এসব প্রশ্ন সর্বক্ষণ এখন সচেতন মানুষের মাথায়। অথচ সামান্য লোকসানের জন্য ডাকঘর বন্ধ করে দিতে হবে কেন? ব্যাংক যেভাবে প্রতিবছর লোপাট হয়ে যাচ্ছে, তা যদি সত্যি দেশের শিল্পায়নে নিয়োগ করা যেত, তাহলে দেশে শিল্পবিপ্লবও সম্ভব হতো। আবার এই টাকা দেশেও থাকছে না। অবলীলায় পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ডাকঘরের অমল রাজা চিঠির জন্য অসুস্থতা নিয়েও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করত। ডাকপিয়ন কখনো সুসংবাদ দেয়, কখনো দুঃসংবাদ। কিন্তু যদি ডাকঘরই না থাকে, তাহলে কোন সুসংবাদের অপেক্ষা করব।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে