৫৫ বছর ধরে নরসুন্দর

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৩৬
Thumbnail image

একসময় হাট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলে পিঁড়িতে বসে চুল-দাঁড়ি কেটে নিতেন সকল বয়সী পুরুষ। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামাঞ্চলের এই ঐতিহ্য। আর এই ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে চুল-দাঁড়ি কাটতে এখনো গ্রামাঞ্চলে ছোটেন নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের খোর্দগোবিন্দপুর গ্রামে মাটিতে বসে চুল কাটতে দেখা যায় নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীলকে (৭১)।

জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে প্রত্যেকটি হাট-বাজারে সারিবদ্ধভাবে বসে চুল-দাঁড়ি কামানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন নরসুন্দর পেশাজীবীরা। আর মাটিতে পিঁড়ি-ইটের ওপরে বসে মাথার চুল কেটে নেওয়াসহ দাঁড়ি শেভ করে নিতে সিরিয়ালে অপেক্ষা করতেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পুরুষেরা। এরপর নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে কাজ করিয়ে নিতেন অপেক্ষমাণ পুরুষেরা। এ সময় নরসুন্দরদের কেচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত নাপিত পট্টি।

শুধু হাট-বাজারই নয়, গ্রামাঞ্চলের গাছের ছায়ার তলে নরসুন্দরদের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে চুল-দাঁড়ি কেটে নিত শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধরা। সেই সময়ে শেভ করতে ছিল না ব্লেড। লোহার তৈরি ধারালো খুর দিয়ে দাঁড়ি কাটা হতো। আর দাঁড়ি নরম করতে মুখে লাগানো হতো সাবান। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্য। এখন আর দেখা যায় না নরসুন্দরদের হাট-বাজারে সারিবদ্ধ বসে থাকা। এটি এখন দখল করে নিয়েছে হেয়ার কাটিং সেন্টার, সেলুন। যার ফলে সেই সময়ের অনেক নরসুন্দর ছিটকে গেছে এ পেশা থেকে।

নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল জানান, ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি এ পেশায় এসেছেন। প্রায় ৫৫ বছর ধরে নরসুন্দর পেশায় জড়িত। আগের দিনে হাট-বাজার ও গ্রামের গাছতলায় বসে চুল-দাঁড়ি কামানোর কাজটি করতেন। এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু এখন আর আগের মত কেউ কাজ করায় না। সবাই বিভিন্ন সেলুনে কিংবা নিজেই বাড়িতে শেভ করে নেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে এখনো ধরে রেখেছি পেশাটি। এখনো গ্রামাঞ্চলের কতিপয় প্রবীণ পুরুষেরা আমার কাছে কাজ করিয়ে নেয়। প্রত্যেক জনের চুল কাটা ২০ টাকা ও সেভ করা ১০ টাকা হারে কাজটি করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত