কক্সবাজারে নালা-নর্দমা প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৯

কক্সবাজারের নালা-নর্দমা ও খাল যেন প্লাস্টিক বর্জ্যের স্তূপে পরিণত হয়েছে। এসব বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে বাঁকখালী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়বে। শুধু শহরের বর্জ্য নয়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সমুদ্রতীরবর্তী নদী ও খাল দিয়ে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের পানি। ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

গত বুধবার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির এক সভায় পর্যটন নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ বৈঠকে অংশ নেন।

এদিকে গত সপ্তাহে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট ও অলিগলিতে নালা থেকে ওঠা বর্জ্যে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। কয়েক দিন ধরে নালার কাদা, পানি ও ময়লায় শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কক্সবাজার পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরে পানি নিষ্কাশনে ৫২ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এসব নালার বেশির ভাগই নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। পৌরসভা, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সড়ক বিভাগ নালার নির্মাণকাজ করছে। ফলে বেশির ভাগ নালা এখন বদ্ধ। এ ছাড়া অন্যান্য নালা ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে।

পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন কক্সবাজার শহরে ৯০ টনের ওপর ময়লা-আবর্জনা বের হয়। সব আবর্জনা পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় অপসারণ করা সম্ভব হয় না। পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শহরের অদূরে চেইন্দা এলাকায় ময়লা ফেলার একটি ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী এ কে এম তারিকুল আলম বলেন, ‘শহরের বর্জ্য অপসারণে রাত-দিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। নালাগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। মূলত লোকজন ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে নালা-নর্দমায় ফেলেন।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরে ছোট-বড় ১৯টি খাল ও পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। এসব খাল ও ছড়া সরাসরি অথবা বাঁকখালী নদী হয়ে সাগরে মিশেছে। এ ছাড়া জেলার ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভা এবং ৭১ ইউনিয়নের খাল ও ছড়াগুলো কোনো না কোনোভাবে সাগরের সঙ্গে যুক্ত।

এসব খাল-নদী-ছড়া ও জলাধারে ফেলা বর্জ্য বৃষ্টি ও ঢলের তোড়ে সাগরে নেমে যাচ্ছে। এ নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা নানা সময় অভিযোগ তুললেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বাঁকখালী নদীতেই পৌরসভার ময়লার গাড়ি করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে নদী ভরাটের পাশাপাশি বর্জ্য সাগরে পড়ছে। কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রকৃতি গবেষক আহমদ গিয়াস বলেন, পাহাড় থেকে সৃষ্ট খাল ও ছড়াগুলোর পানি এক সময় মানুষ ব্যবহার করত। এখন দূষণের কারণে পশু-পাখিদেরও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পানি বিষাক্ত থাকায় সমুদ্র মোহনার নিকটবর্তী জেলার অধিকাংশ খাল এখন মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যসহ নানা দূষণের কারণে বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সাগর দূষণমুক্ত করতে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।’

সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম ও সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকতের পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। 
সেন্ট মার্টিনকে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত করতে জনসচেতনতা তৈরির জন্য সম্প্রতি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে একটি মাছের ভাস্কর্য তৈরি করেন।

গত ১৯ মার্চ কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় হাজার হাজার মরা মাছ তীরে আছড়ে পড়ে। প্রায় সময় সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রাণী মারা পড়ছে। দুই বছর আগে শহরের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্যসহ নানা ময়লা-আবর্জনা ভেসে আসে। গত বছর ৯ ও ১০ এপ্রিল দুটি মরা তিমি ভেসে আসে। সামুদ্রিক দূষণের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত