সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে ও ভেঙে ৩০০ বিঘা জমির ধান প্লাবিত হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরসংলগ্ন বাঁধ উপচে ও গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গলগলিয়া ও পানার হাওরের ধানের খেত তলিয়ে যায়। এদিকে গুরমার হাওরের এ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় পাশের মধ্যনগর উপজেলার ছোট-বড় কয়েকটি হাওর হুমকির মুখে রয়েছে।

গতকাল রোববার সকাল থেকে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরে পাড় উপচে পানি প্রবেশ করতে থাকে। অপর দিকে বেলা সাড়ে তিনটায় গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়।

এতে তাহিরপুর উপজেলার গলগলিয়া ও পানার হাওরে পানি ঢুকে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। ফলে ডুবে যাওয়া পাকা ও আধা পাকা ধান নিয়ে বর্তমানে দিশেহারা কৃষকেরা।

জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টিসহ উজান থেকে নেমে আসা ভারতের পাহাড়ি ঢলে অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বাড়তে থাকে।

পানার হাওরের কৃষক সাইফুল ইসলাম শেখ জানান, তিনি এ হাওরে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। গতকাল ২৭ নম্বর প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে তাঁর জমির আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে।

গলগলিয়া হাওরের কৃষক শফিক নুর বলেন, ‘গলগলিয়া হাওরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি কৃষক পরিবার জমি চাষাবাদ করেছিল। কিন্তু গুরমার হাওরের একটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।’

মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের কৃষক হাবিব মিয়া বলেন, ‘তাহিরপুরের গুরমার হাওরে পানি প্রবেশ করায় সব হাওর এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় আমাদের হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শিমুল আহমেদ বলেন, নদীতে অস্বাভাবিক পানি বাড়ায় গতকাল বিকেলে হঠাৎ গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে যায়। এতে ৮ থেকে ১০টি গ্রামের কৃষকের জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়।

এদিকে ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, গুরমার হাওরের ২৭ নম্বর বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় গলগলিয়া ও পানার হাওরের প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কিছু ধান কৃষক ইতিমধ্যে কেটে ফেলেছেন।

কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, হাওরের পাকা ধান কাটায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। দুটি হাওরেই ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। বাঁধের কাজে গাফিলতি থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, ‘পাউবোর অধীনে ২৭ নম্বর প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেছে। বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদীতে অস্বাভাবিক পানি বাড়ায় হয়তোবা বাঁধটি ভেঙে যায়। আমরা ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করব।’