Ajker Patrika

সবকিছুরই দাম বাড়ে, চামড়ার কমে কেন

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৩, ০৮: ৪৩
Thumbnail image

এক দশক আগেও কোরবানির ঈদে মৌসুমি ফড়িয়াদের মধ্যে লেগে থাকত চামড়া কেনার প্রতিযোগিতা। তখন মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া কমবেশি ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতেন কোরবানিদাতারা। কিন্তু গত বছর সেই চামড়া বিক্রি হয়েছে বড়জোর ৫০০ টাকা দামে। অনেকেই আবার ক্রেতা না পেয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছেন তা। এদিকে চামড়ার তৈরি পণ্যের দাম কিন্তু বেড়েই চলেছে। এক দশক আগের তুলনায় অন্তত তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে চামড়ার তৈরি জুতা ও অন্যান্য জিনিসের দাম।

বাংলাদেশে সবকিছুর দাম যেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেখানে পশুর চামড়ার দাম কমছে কেন? সম্ভাবনায় রপ্তানি খাত চামড়াশিল্পের দুরবস্থার কারণই-বা কী—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। তাঁদের কেউ দুষছেন চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের। কেউ বলছেন ট্যানারির মালিকদের সক্ষমতার অভাব ও সীমাবদ্ধতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, এত বছরেও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি চামড়াশিল্প। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে না পারায় মেলেনি ইউরোপের লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ। ফলে ইউরোপের বাজারে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ।

ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, ২০১৭ সালের দিকে একটি প্রক্রিয়াজাত চামড়া প্রতি বর্গফুট রপ্তানি করা হতো ২-৩ ডলার। সেই চামড়া এখন চীনাদের কাছে প্রতি বর্গফুট ৭০-৮০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে কাঁচা চামড়ার দামও কমে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সরকার-নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৮৫-৯০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৭৫-৮০ টাকা দরে কেনা হয়। তখন সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। কিন্তু ৯ বছরের ব্যবধানে কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসে সরকার। সরকার-নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, গত বছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৭-৫২ টাকা ও ঢাকার বাইরে ছিল ৪০-৪৪ টাকা। আর খাসির চামড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকার-নির্ধারিত এই দামেও চামড়া কেনার মতো ক্রেতা পাওয়া যায়নি গতবার।

চামড়ার ব্যাপারী নবী হোসেন জানান, গত বছর তাঁরা ঢাকায় প্রতি পিস কাঁচা চামড়া লবণ ছাড়া ২০০-৮০০ টাকায় আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। আর আড়তদার আফতাব উদ্দিন জানান, প্রতি পিস চামড়ায় লবণ খরচ ১৪০-১৬০ টাকা এবং শ্রমিক ৬০ টাকা ব্যয় হয়। লবণযুক্ত চামড়া তাঁরা ট্যানারির কাছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এবার লবণ ও শ্রমিকের দাম বাড়বে। এতে তাঁদের খরচও বাড়বে। এতে চামড়ার দামও কিছুটা বাড়বে। 

এবার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়তে পারে—এমন আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনটির সভাপতি আফতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে। তবে এটি নিশ্চিত করতে বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর ঈদের আগে শুধু দাম ঘোষণা করেই বসে থাকে।

ট্যানারির মালিকেরা রপ্তানির বেহাল এবং আড়তদারেরা লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিকে কারণ দেখালেও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বলছে অন্য কথা। সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ঈদের আগে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনতে বিশেষ সুবিধায় ব্যাংক ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু এসব টাকা তাঁরা অন্য খাতে ব্যয় করছেন। দেশে কোরবানির সময় ১ কোটি ২০ লাখ এবং সারা বছর আরও প্রায় সমপরিমাণ পশু জবাই হয়। এসব চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা ট্যানারির মালিকদের নেই। তাঁরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাঁম কমিয়ে রাখেন। তাঁদের কাছে সবাই রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে। 

ট্যানারিপল্লি কতটুকু প্রস্তুত 
দেশে যত পশু জবাই হয়, তার সব চামড়ার চূড়ান্ত গন্তব্য একটাই—সাভারের ট্যানারিপল্লি। দূষণমুক্ত ট্যানারিশিল্প গড়ে তুলে দেশীয় কাঁচামাল-নির্ভর রপ্তানিমুখী চামড়াশিল্পের প্রতি বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারিপল্লি গড়ার এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এর ১৪ বছর পর ২০১৭ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের ওই ট্যানারিপল্লিতে স্থানান্তর করা হয় সব চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই কাজটি করা হয়েছিল পুরোপুরি প্রস্তুতি না নিয়ে। এই শিল্পনগরীতে তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য যে সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) আছে, সেটির ২৫ হাজার কিউবিক মিটার পানি শোধন করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু কোরবানির সময় সেখানে কার্যক্রমে থাকা ১৪২টি ট্যানারিতে পানি লাগে প্রায় ৩৫ হাজার কিউবিক মিটার। এত পানি পরিশোধনের সক্ষমতা সিইটিপির নেই। এ ছাড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগই এখনো এখানে গড়ে ওঠেনি সেখানে। গড়ে তোলা হয়নি ডাম্পিং ইয়ার্ড।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইলিয়াছুর রহমান বাবুল বলেন, প্রতিবছর ট্যানারিতে দেড় কোটি চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের সক্ষমতা এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) পরিবেশ স্বীকৃতি না থাকায় তাঁরা ইউরোপে চামড়া রপ্তানি করতে পারছেন না। একসময় চামড়ার জন্য বায়াররা ট্যানারি অফিসে অপেক্ষা করতেন। এখন সে চিত্র আর নেই। সাভারে যাওয়ার পর নানা সংকটে পড়েছেন শিল্পমালিকেরা।

জানতে চাইলে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোস্তাক আহমেদ বলেন, সিইটিপির ক্যাপাসিটির তুলনায় পানি বেশি খরচ হচ্ছে। তবে চামড়া রপ্তানির জন্য মোট নম্বর লাগে ১৭১০। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ নম্বর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধাগারের জন্য। অবশিষ্ট ১৪১০ নম্বর ট্যানারির মালিকদের অর্জন করতে হবে। সিইটিপির সক্ষমতার বিষয়ে কাজ চলছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত