বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাঁচা-মরার প্রশ্ন। জীবন বাঁচাতে হলে দেশের বাইরে যেতেই হবে তাঁকে। সরকারের অনুমতি ছাড়া সেটা সম্ভব নয় জেনে এ বিষয়ে পরিবার, দল ও বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে দাবি, আবেদন ও আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনুমতি না দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ এসেছে সরকারি দলের পক্ষ থেকে। তবে এমন পরামর্শকে পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি। ‘ক্ষমা’ চাওয়াকে ‘অপমানজনক’ মনে করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবি আদায়ে আন্দোলনের পথেই হাঁটছে দলটি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। এ কথা জানানোর সপ্তাহখানেক পরেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। নানাবিধ শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে হাসপাতালের বিছানায় একেকটি দিন পার করতে হচ্ছে তাঁকে। বর্তমানে ‘পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ’ তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে।

গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রধান অসুখটা এখন পরিপাকতন্ত্রের। ঠিক কোন জায়গায় তাঁর রক্তপাত হচ্ছে, এটা বের করতে আমাদের এখানের ডাক্তাররা কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রকম কাজ করেছেন। চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে তাঁরা কাজ করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তাঁরা আর এগোতে পারছেন না। কারণ, তাঁদের কাছে আর কোনো প্রযুক্তি নেই, যা দিয়ে তাঁরা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। যে কারণে তাঁকে বারবার অ্যাডভান্স সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা।’

এই অবস্থায় বিএনপির করণীয় জানতে চাইলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আজকের পত্রিকাকে জানান, সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তাঁদের কোনো আগ্রহ নেই। এটা তাঁদের জন্য ‘অপমানজনক’ বলে মনে করছেন তাঁরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করবে দল।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কেমন কর্মসূচি আসবে, সেটা পরে দেখা যাবে। এখনই আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। যে কর্মসূচি দেওয়া আছে, সেটাই আপাতত চলবে। এরপর আলোচনা করে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা করলে খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই করতে পারতাম। ফালতু কথা। এসব অবান্তর কথা বলে লাভ নাই।’

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২৫ নভেম্বর থেকে সারা দেশে আট দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো। ঘোষিত এসব কর্মসূচি বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল ও দোয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর আগেও একই দাবিতে গণ-অনশন ও সমাবেশ করেছে দলটি। ঘোষণা অনুযায়ী দাবি আদায়ে আজ রোববার সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

আগামী দিনে বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, কিংবা কঠোর কোনো কর্মসূচির দিকে যাবেন কি না—জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি দিতে চাই। কোনো ধরনের হিংসা চাই না। এমন কোনো কর্মসূচি দিতে চাই না, যাতে সেটার ছুতোয় সরকার সুযোগ নিতে পারে।’

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটলে পরিবারের আবেদনে দণ্ড স্থগিত করে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত তাঁর সাজার স্থগিতাদেশ তিন দফা বাড়ানো হয়েছে।

বিএনপি চায় খালেদা মারা যাক

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বিএনপি চায় খালেদা মারা যাক। দেশের ভেতর একটা অস্থিতিশীলতা করে, জ্বালাও-পোড়াও করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা তাদের উদ্দেশ্য। একজন লন্ডনে বসে স্বপ্ন দেখেন, আর মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখেন। এই দেশে এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।’

বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে হানিফ বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করব, আপনারা সেটাতে (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া) কেন যাচ্ছেন না? সত্যিকার অর্থে যদি খালেদা জিয়ার প্রতি আপনাদের মায়া, দরদ থাকত, তাহলে আপনাদের প্রথম কাজ ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।’