Ajker Patrika

আপন নীড়ে ফিরল ১৮৫টি সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চা

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৪২
আপন নীড়ে ফিরল ১৮৫টি সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চা

কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের পেঁচারদ্বীপ সৈকত। উঁচু পাহাড় ঘেঁষে গেছে মেরিন ড্রাইভ। সড়কের পশ্চিম পাশে লাগোয়া একটু এগুলোই চোখ জুড়ানো ঝাউ বাগান। তারপর দিগন্ত ছোঁয়া সমুদ্র জলরাশি। নির্জন এ সৈকতের বালুচরে গত দুই মাসে প্রায় দুই হাজার ডিম পেড়েছে অলিভ রিডলে জাতের সামুদ্রিক কচ্ছপ। এসব ডিম সংগ্রহ করে সাগরতীরের হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ১৮৫টি কচ্ছপের বাচ্চা গত সোমবার সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার দুপুর ২টার দিকে বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা হ্যাচারি থেকে বের করা হয় ৬৫টি কচ্ছপের বাচ্চা। এক বা দুই দিন বয়সী এসব বাচ্চাগুলো ভেজা বালুতে ছাড়া হয়। তখন পায়ে হেঁটে সমুদ্রের দিকেই পাড়ি জমায় বাচ্চাগুলো। একইভাবে সকালে পাশের উখিয়ার উত্তর সোনারপাড়া আরও ১২০টি বাচ্চা ছাড়া হয়।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহায়তায় নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কচ্ছপের বাচ্চা সংরক্ষণ ও অবমুক্ত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন বিভাগ ও নেকমের উদ্যোগে প্রতিবছর এই মৌসুমে সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করে বাচ্চা ফুটানো হয়। গভীর সমুদ্র থেকে এসে একটি কাছিম ৭০ থেকে ১৮০টি ডিম পাড়ে। এসব ডিম সংগ্রহ করেই কচ্ছপের প্রজনন বাড়ানো হচ্ছে।

নেকমর প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা (এনআরএম) ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম জানান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে তাদের ৫টি হ্যাচারি রয়েছে। এসব হ্যাচারিতে এখন সাড়ে ৫ হাজার কাছিমের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। অলিভ রিডলে জাতের কাছিম সৈকতের বালুচরে ডিম পাড়লে তা তাদের কর্মীরা সংগ্রহ করে।

তিনি জানান, ডিমগুলো সংগ্রহের পর হ্যাচারিতে রেখে বালির নিচে বিশেষ কায়দায় ফুটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রায় ৬০ দিন বা আরও বেশি সময়ের পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে।

নেকমের প্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, এক সময় অসংখ্য কাছিম মারা যেতো। জেলে ও স্থানীয় লোকজনও কাছিম দেখলে পিটিয়ে মারতো। এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত ৪টি কাছিমের মৃতদেহ পাওয়া গেছে সৈকতে। তিনি বলেন, সৈকতে ডিম পাড়তে এসে কাছিম কুকুর ও বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়। সেন্টমার্টিনে কুকুর কাছিমের ডিম খেয়ে ফেলে। তারপরও বেশ কয়েক বছর ধরে কাছিমের ডিম সংরক্ষণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় তাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সরওয়ার আলম জানান, কাছিম সাগরের সুইপার (পরিষ্কার করা)। সমুদ্রের আবর্জনাগুলো খেয়ে সাফ করে ফেলে কাছিম। এ জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এ প্রাণীর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের অবাধে চলাফেরায় আবাস সংকটে পড়েছে কাছিম। অনেক সময় জেলেদের জালে আটকা পড়েও কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে।

কাছিম অবমুক্তের সময় কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন, সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমানসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত