খুলনা-৪: চ্যালেঞ্জের মুখে সালাম মুর্শেদী

শেখ আবু হাসান, খুলনা
Thumbnail image

খুলনা-৪ আসনের (রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া) বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা।

সালাম মুর্শেদীকে হটাতে দলটির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী এরই মধ্যে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সালাম মুর্শেদী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। তিনি দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। যদিও এসব অভিযোগ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ সংসদ সদস্য।

অন্যদিকে আন্দোলনে থাকা বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচনায় আছেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৈরব-রূপসা-আঠারোবেকি-আতাইঘেঁষা নিয়ে খুলনা-৪ আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দখলে। সে কারণে তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি বেশ মজবুত। কিন্তু সর্বশেষ ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটির মনোনীত প্রার্থীকে রেখে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন এমপি সালাম মুর্শেদী। এতে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে।

একই সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি। নিয়োগ-বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ঢাকার গুলশানে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা বাড়ি বিতর্কের ইস্যুটি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

একাধিক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, সালাম মুর্শেদী নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করেন না, থাকেন ঢাকায়। অসুবিধায় পড়ে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়েও তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। তাঁরা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের মধ্য থেকে কাউকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান।

দিঘলিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সংসদ সদস্য এলাকায় থাকেন না। তিনি কবে এলাকায় আসবেন, তা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানতে পারেন ফেসবুকের কল্যাণে। কতিপয় সুবিধাভোগী ছাড়া তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী: আগের মেয়াদে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন সালাম মুর্শেদী।

 পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। এবারও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেরখাদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, নগর যুবলীগের সভাপতি তরুণ নেতা সফিকুর রহমান পলাশ ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান জামাল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী: বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল এককভাবে আলোচনায় থাকলেও মনোনয়ন চাইতে পারেন দলটির কেন্দ্রীয় সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বক্তব্য: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী সালাম মুর্শেদী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, এই আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। এরই মধ্যে তিনি তাঁর আসনের তিনটি উপজেলার রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, যে কাজ করে, তাঁর সমালোচনা হবে। সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী মূল দলসহ সহযোগী সংগঠনগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে শক্তিশালী করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু বলেন, ‘আমি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই কাজ করছি। ২৭ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগে আছি। ১০ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। তৃণমূল মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করছি। সাধারণ মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। এ জন্য আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী।’

নগর যুবদলের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছি। তৃণমূল মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আমি বুঝি। করোনাকালে আমি অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের সেবা করার জন্য আমি এবার দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘বিএনপি আপাতত সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। মনোনয়ন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। সরকার পতন হলে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত