কিশোর গ্যাং আবার সক্রিয়

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৭: ৩৯
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ১২

পুলিশি অভিযানের কারণে কিছুদিন নীরব থাকলেও, কুষ্টিয়া শহরে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে আত্মপ্রকাশ করা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা জেলা শহরে চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচার, অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডের মতো নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব কিশোর গ্যাংকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ জোগাচ্ছেন স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা–কর্মী। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেও, তা খুব একটা কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার যুব ও ছাত্রনেতারা এ সব কিশোরদের তথাকথিত বড় ভাই। নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব কিশোরকে প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানছেন। আর কিশোরেরা জড়াচ্ছে নানা অপরাধে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরতলির হাটশ হরিপুর বাজারে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় আকাশ ও ইমন নামের দুই কিশোর। এ ঘটনায় আরেক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। আটকের কয়েক দিন পরেই অপ্রাপ্ত বয়স্কের অজুহাতে এবং ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে আইনের ফাঁক দিয়ে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে ওই কিশোর।

গত ১২ নভেম্বর বিকেলে জেলা শহরের থানাপাড়া এলাকার কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর জখম হন সজিব শেখ (২২)। প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাং জিবি গ্রুপের সদস্যরা তাঁকে ডেকে নিয়ে এ হামলা চালায় বলে কুষ্টিয়া মডেল থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। আহত সজিব ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে পৌর ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার জেরে ১৫ নভেম্বর দুপুরে সজিবের নেতৃত্বে সাদ্দাম বাজার এলাকার বাসিন্দা সোহানকে (২২) অপহরণ করে আটকে রাখা হয়। পরে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে সোহানের বাবা অভিযোগ দেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহৃত সোহানকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আটক করে।

এদিকে গত বছরের সালের ১৯ নভেম্বর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র লাবিব আসলামকে মারধর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয় হামলাকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রের বাবার করা মামলায় অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়া চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কিশোরদের একাধিক অভিভাবক বলেন, অল্প বয়সী এসব কিশোরদের নিয়ে নিজেরাও সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে শাসন করেও কাজ হচ্ছে না। এলাকার অনেক ভালো কিশোররাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বলেন, ‘সবক্ষেত্রে আইন দিয়ে সবকিছু হয় না। কোমলমতি এসব বাচ্চার যত দিন পর্যন্ত না নিজের ভালো-মন্দের বোধ গড়ে উঠবে, তত দিন পর্যন্ত তাদের করা সব দায়ই অভিভাবকদের ওপর বর্তাবে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের। না হলে এ ধরনের অপরাধ বাড়বে।’

কুষ্টিয়ায় শিশু অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বরত প্রবেশন অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে এ জেলায় সংঘটিত অন্তত ৪০টি শিশু-কিশোর অপরাধের ঘটনায় জড়িত শিশু-কিশোর–কিশোরীদের নিয়ে কাজ করছি। অপরাধ সংঘটনের পর শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে তাদের আইনি সহায়তাসহ সব রকম পরিচর্যা করা হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, ‘কিশোর অপরাধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যথাযথ তৎপর রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তাঁদের সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে এবং কী করছে। অভিভাবকদের সচেতনতা ছাড়া শুধু পুলিশের পক্ষে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত