স্বপ্না রেজা
ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এখন নগরের দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প। ওপরে তাকালে এখন কোথাও কোথাও আর আকাশ দেখা যায় না। ইট, পাথর আর রডের আকাশ চোখে পড়ে। গায়ে লাগে মোটাসোটা পিলার। হালকা আঁধার ছেয়ে থাকে। অনেকের ধারণা, এই অবকাঠামোগত উন্নয়নই একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ও টেকসই উন্নয়নে পৌঁছানোর এক অপরিহার্য শর্ত। এই ধারণায় বিশ্বাসীরা, অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণে বরাবরই বেশি মনোযোগী থেকেছেন এবং থাকছেন। অথচ শিক্ষা-দীক্ষায়, মানসিকতায়, নৈতিকতায় তথা মূল্যবোধে একটি জাতির দৃশ্যমান উন্নয়ন না ঘটলে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন টেকসই হয় না, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে না।
রাস্তাজুড়ে ছড়ানো-ছিটানো নির্মাণসামগ্রী চলার পথে বিড়ম্বনা। ঘর থেকে বেরিয়ে এবং আবার ঘরে ফেরার সময় মানুষকে এসব দেখতে হয়। শুধু পথচারীরা জানতে পারেন না যে নির্মাণকাজে তাঁদের জন্য কতটুকু সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বছরের পর বছর সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে নানা ধরনের অনুভূতির জন্ম হয় এই মানুষগুলোর ভেতর। সুখকর অভিজ্ঞতার মতো কষ্টদায়ক কিংবা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা থাকে পাশাপাশি। কারও কারও জীবনে এসব নির্মাণ স্বপ্ন দেখায় নির্বিঘ্নে ও সহজ উপায়ে চলাচলের। তাঁদের কাছে যোগাযোগের আধুনিক স্থাপনা ও নমুনা এসব। এই আধুনিক চলাচলের অভিজ্ঞতা হয়তো একদিন মেঠোপথের কথা, সাঁকোর কথা ভুলিয়ে দেবে। আবার কারও কারও জীবনে এসব অবকাঠামোগত নমুনা নির্মম ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছে, যা কোনো দিন তাঁদের বিস্মৃত হতে দেয় না; বরং আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ হিসেবে এই অভিজ্ঞতা রয়েই যাবে বছরের পর বছর।
উত্তরায় নির্মণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কারের পাঁচ আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক। সড়কে চলাচলকারীদের জন্য ভয়ংকর ভীতির জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য এ ধরনের নির্মাণাধীন প্রকল্প এখন রীতিমতো আতঙ্ক। নিঃসংকোচে বলা যায়, আমি সেই দলের একজন।
বিআরটির মেগা প্রকল্পের এটাই একমাত্র দুর্ঘটনা নয়। এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দুর্ঘটনা ও সাধারণ মানুষের জীবন তাদের কাছে বরাবরই ‘মাইক্রো’ তথা ‘ক্ষুদ্র’ হয়েই থেকেছে। সাধারণ মানুষের জীবন তাদের কাছে ‘মেগা’ বা ‘বড়’ হয়নি কখনো। তাই সাধারণ মানুষ মরলেও তাদের কিছু যায়-আসে না। মেগা প্রকল্পের সংস্কৃতি বোধ হয় এমনই। মেগা প্রকল্প মানেই যেন হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, ব্যবহার, ব্যক্তিস্বার্থের পথ উন্মোচন, দুর্নীতির পাঁয়তারা, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ইত্যাদি। এটা প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পের অনেকগুলোতেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আখের গোছানোর চিন্তা ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করে।
সাধারণত যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে তার নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি ও ঝুঁকি নিরসনে নিয়মনীতি, বিধিসম্মত প্রস্তাবনা থাকে। থাকে সুপারিশ, পরামর্শ, পরামর্শক ও সমন্বয়ক। সেই আলোকে ক্রেন ও গার্ডার নাড়াচাড়া ও সরানোর সময় প্রয়োজনীয় জায়গা ঘিরে রাখার কথা, যেন জনসাধারণের প্রবেশ না ঘটে এবং তাঁদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। সাময়িক সময়ের জন্য ওইটুকু জায়গায় স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ রাখার কথা। এ জন্য পথচারীদের ঝুঁকিমুক্ত করতে নিরাপত্তাকর্মীদেরও থাকার কথা। অথচ যাত্রীদের চলাচলের সময় তাদের মাথার ওপর দিয়ে দিনদুপুরে ক্রেন দিয়ে গার্ডার সরানো হলো। বিষয়টি নিশ্চয়ই নির্মাণকাজের নিয়মনীতির মধ্যে পড়ে না; বরং ভয়াবহ ঝুঁকির বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল।
জানা গেছে, গার্ডারের ওজন ক্রেনের সক্ষমতার চেয়ে বেশি ছিল এবং চালক অদক্ষ হওয়ায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই অভিমত। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ক্রেনচালককে দায়ী করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তদন্ত কমিটি নিয়েও। কারণ, তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন প্রকল্পের সমন্বয়ক, সড়ক ও জনপথের একজন কর্মকর্তা এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা। এই তিন নন-টেকনিক্যাল সদস্যের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তাদের দায় থাকার কথা নয় বলেই অনেকের অভিমত। বন্দুকের নল কেউ কি নিজেদের দিকে নেয়, মোটেও না। এতটা নৈতিকতা বোধ কার ছিল বা আছে? পত্রিকান্তরে জানা যায়, প্রকল্পের নির্মাণকাজ হচ্ছে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে—সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আবার রয়েছে প্রকল্প পরিচালকসহ বাস্তবায়ন ইউনিট এবং তাদের সমন্বয় ও তদারকির জন্য রয়েছে নেতৃত্বদানকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এই প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটের নেতৃত্ব দেন আবার প্রকল্প সমন্বয়ক, যিনি পরামর্শকও। ফলে অনেকের মনে সংশয় তদন্ত নিয়েও।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের। ক্রেনচালক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চালকের ওপর দায় চাপিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিআরটিসহ মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। দায় ও জবাবদিহি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকের মতে, বাঁচিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তাই কি? সংশ্লিষ্টরাই তা ভালো বলতে পারবেন। প্রশ্ন জাগে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ও তত্ত্বাবধানকারীদের কি কোনো দায়িত্ব নেই, ছিল না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিক নিয়মে, সঠিকভাবে এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ বা তদারকি করার? নাকি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা হস্তান্তর করে সরকারি বিভাগগুলো নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে? সময়মতো কেবল তাঁরা বেতন নেন এবং গাড়ি ব্যবহার করেন!
সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, ক্রেনের ধরে থাকা গার্ডারের নিচ দিয়ে সারি সারি গাড়ি চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করে ক্রেন দিয়ে গার্ডার সরানোর কাজ চলে? সেদিন ছিল সরকারি ছুটি। কানে লাগল কে যেন বলছেন, ছুটির দিনে এ কাজ করার কথা না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা নয়, ভালো কথা। তাহলে কেন করল, সেই প্রশ্নের সদুত্তর কোথায় মিলবে? একজন বললেন, আর্থিক সংকট ছিল মেগা প্রকল্প নির্মাণে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার সঙ্গে আর্থিক সংকটের সম্পর্ক কী, বোঝা গেল না। বোঝা গেল, বিআরটির এই নির্মাণকাজ ফ্রি স্টাইলে চলেছে। তাই জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার চাপ নেই তাদের।
সিটি করপোরেশনের কাজ কী? নগর কেন এত অনিরাপদ? নগরের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রথম চিন্তা-ভাবনা থাকার কথা দুই সিটি করপোরেশনের। নগরপিতা তাঁদের নগরবাসীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। বিভিন্ন নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করবেন তাঁরা। অথচ দেখা যাচ্ছে, এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধান, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো কাজ নেই। সড়কে যাত্রীরা কতটা নিরাপদ, নির্মাণকাজ কতটা ঝুঁকি বয়ে আনছে নগরবাসীর জন্য, কেন আবাসিক এলাকায় এখনো প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল কারখানা রয়ে গেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন শ্রমিক—এসব দেখভাল করা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। নগরবাসীর স্বস্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত না করার দায়ও কিন্তু তাঁদের ওপরই বর্তায়।
দায়িত্ব পেলে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার দায় নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। দায়িত্ব শুধু বেতনপ্রাপ্তি ও সুযোগ-সুবিধার জন্য নয়; বরং সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য। আর সেই কল্যাণ নিশ্চিত হয় রাষ্ট্রের জনগণের সার্বিক কল্যাণের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি মর্মাহত ও বিস্মিত। তাঁর সরকারের আওতাধীন প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে তাঁর সেই আবেগ সঞ্চারিত হোক। দায় কিন্তু দায়িত্বশীলকেই নিতে হয়, নিতে শিখতে হয়।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এখন নগরের দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প। ওপরে তাকালে এখন কোথাও কোথাও আর আকাশ দেখা যায় না। ইট, পাথর আর রডের আকাশ চোখে পড়ে। গায়ে লাগে মোটাসোটা পিলার। হালকা আঁধার ছেয়ে থাকে। অনেকের ধারণা, এই অবকাঠামোগত উন্নয়নই একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ও টেকসই উন্নয়নে পৌঁছানোর এক অপরিহার্য শর্ত। এই ধারণায় বিশ্বাসীরা, অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণে বরাবরই বেশি মনোযোগী থেকেছেন এবং থাকছেন। অথচ শিক্ষা-দীক্ষায়, মানসিকতায়, নৈতিকতায় তথা মূল্যবোধে একটি জাতির দৃশ্যমান উন্নয়ন না ঘটলে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন টেকসই হয় না, সেটা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে না।
রাস্তাজুড়ে ছড়ানো-ছিটানো নির্মাণসামগ্রী চলার পথে বিড়ম্বনা। ঘর থেকে বেরিয়ে এবং আবার ঘরে ফেরার সময় মানুষকে এসব দেখতে হয়। শুধু পথচারীরা জানতে পারেন না যে নির্মাণকাজে তাঁদের জন্য কতটুকু সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বছরের পর বছর সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে নানা ধরনের অনুভূতির জন্ম হয় এই মানুষগুলোর ভেতর। সুখকর অভিজ্ঞতার মতো কষ্টদায়ক কিংবা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা থাকে পাশাপাশি। কারও কারও জীবনে এসব নির্মাণ স্বপ্ন দেখায় নির্বিঘ্নে ও সহজ উপায়ে চলাচলের। তাঁদের কাছে যোগাযোগের আধুনিক স্থাপনা ও নমুনা এসব। এই আধুনিক চলাচলের অভিজ্ঞতা হয়তো একদিন মেঠোপথের কথা, সাঁকোর কথা ভুলিয়ে দেবে। আবার কারও কারও জীবনে এসব অবকাঠামোগত নমুনা নির্মম ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছে, যা কোনো দিন তাঁদের বিস্মৃত হতে দেয় না; বরং আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ হিসেবে এই অভিজ্ঞতা রয়েই যাবে বছরের পর বছর।
উত্তরায় নির্মণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কারের পাঁচ আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক। সড়কে চলাচলকারীদের জন্য ভয়ংকর ভীতির জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য এ ধরনের নির্মাণাধীন প্রকল্প এখন রীতিমতো আতঙ্ক। নিঃসংকোচে বলা যায়, আমি সেই দলের একজন।
বিআরটির মেগা প্রকল্পের এটাই একমাত্র দুর্ঘটনা নয়। এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দুর্ঘটনা ও সাধারণ মানুষের জীবন তাদের কাছে বরাবরই ‘মাইক্রো’ তথা ‘ক্ষুদ্র’ হয়েই থেকেছে। সাধারণ মানুষের জীবন তাদের কাছে ‘মেগা’ বা ‘বড়’ হয়নি কখনো। তাই সাধারণ মানুষ মরলেও তাদের কিছু যায়-আসে না। মেগা প্রকল্পের সংস্কৃতি বোধ হয় এমনই। মেগা প্রকল্প মানেই যেন হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, ব্যবহার, ব্যক্তিস্বার্থের পথ উন্মোচন, দুর্নীতির পাঁয়তারা, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ইত্যাদি। এটা প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পের অনেকগুলোতেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আখের গোছানোর চিন্তা ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করে।
সাধারণত যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে তার নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি ও ঝুঁকি নিরসনে নিয়মনীতি, বিধিসম্মত প্রস্তাবনা থাকে। থাকে সুপারিশ, পরামর্শ, পরামর্শক ও সমন্বয়ক। সেই আলোকে ক্রেন ও গার্ডার নাড়াচাড়া ও সরানোর সময় প্রয়োজনীয় জায়গা ঘিরে রাখার কথা, যেন জনসাধারণের প্রবেশ না ঘটে এবং তাঁদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। সাময়িক সময়ের জন্য ওইটুকু জায়গায় স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ রাখার কথা। এ জন্য পথচারীদের ঝুঁকিমুক্ত করতে নিরাপত্তাকর্মীদেরও থাকার কথা। অথচ যাত্রীদের চলাচলের সময় তাদের মাথার ওপর দিয়ে দিনদুপুরে ক্রেন দিয়ে গার্ডার সরানো হলো। বিষয়টি নিশ্চয়ই নির্মাণকাজের নিয়মনীতির মধ্যে পড়ে না; বরং ভয়াবহ ঝুঁকির বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল।
জানা গেছে, গার্ডারের ওজন ক্রেনের সক্ষমতার চেয়ে বেশি ছিল এবং চালক অদক্ষ হওয়ায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই অভিমত। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ক্রেনচালককে দায়ী করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তদন্ত কমিটি নিয়েও। কারণ, তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন প্রকল্পের সমন্বয়ক, সড়ক ও জনপথের একজন কর্মকর্তা এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা। এই তিন নন-টেকনিক্যাল সদস্যের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তাদের দায় থাকার কথা নয় বলেই অনেকের অভিমত। বন্দুকের নল কেউ কি নিজেদের দিকে নেয়, মোটেও না। এতটা নৈতিকতা বোধ কার ছিল বা আছে? পত্রিকান্তরে জানা যায়, প্রকল্পের নির্মাণকাজ হচ্ছে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে—সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আবার রয়েছে প্রকল্প পরিচালকসহ বাস্তবায়ন ইউনিট এবং তাদের সমন্বয় ও তদারকির জন্য রয়েছে নেতৃত্বদানকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এই প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটের নেতৃত্ব দেন আবার প্রকল্প সমন্বয়ক, যিনি পরামর্শকও। ফলে অনেকের মনে সংশয় তদন্ত নিয়েও।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের। ক্রেনচালক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চালকের ওপর দায় চাপিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিআরটিসহ মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। দায় ও জবাবদিহি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকের মতে, বাঁচিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তাই কি? সংশ্লিষ্টরাই তা ভালো বলতে পারবেন। প্রশ্ন জাগে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ও তত্ত্বাবধানকারীদের কি কোনো দায়িত্ব নেই, ছিল না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিক নিয়মে, সঠিকভাবে এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ বা তদারকি করার? নাকি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা হস্তান্তর করে সরকারি বিভাগগুলো নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে? সময়মতো কেবল তাঁরা বেতন নেন এবং গাড়ি ব্যবহার করেন!
সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, ক্রেনের ধরে থাকা গার্ডারের নিচ দিয়ে সারি সারি গাড়ি চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করে ক্রেন দিয়ে গার্ডার সরানোর কাজ চলে? সেদিন ছিল সরকারি ছুটি। কানে লাগল কে যেন বলছেন, ছুটির দিনে এ কাজ করার কথা না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা নয়, ভালো কথা। তাহলে কেন করল, সেই প্রশ্নের সদুত্তর কোথায় মিলবে? একজন বললেন, আর্থিক সংকট ছিল মেগা প্রকল্প নির্মাণে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার সঙ্গে আর্থিক সংকটের সম্পর্ক কী, বোঝা গেল না। বোঝা গেল, বিআরটির এই নির্মাণকাজ ফ্রি স্টাইলে চলেছে। তাই জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার চাপ নেই তাদের।
সিটি করপোরেশনের কাজ কী? নগর কেন এত অনিরাপদ? নগরের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রথম চিন্তা-ভাবনা থাকার কথা দুই সিটি করপোরেশনের। নগরপিতা তাঁদের নগরবাসীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। বিভিন্ন নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করবেন তাঁরা। অথচ দেখা যাচ্ছে, এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধান, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো কাজ নেই। সড়কে যাত্রীরা কতটা নিরাপদ, নির্মাণকাজ কতটা ঝুঁকি বয়ে আনছে নগরবাসীর জন্য, কেন আবাসিক এলাকায় এখনো প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল কারখানা রয়ে গেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন শ্রমিক—এসব দেখভাল করা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না, তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। নগরবাসীর স্বস্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত না করার দায়ও কিন্তু তাঁদের ওপরই বর্তায়।
দায়িত্ব পেলে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার দায় নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। দায়িত্ব শুধু বেতনপ্রাপ্তি ও সুযোগ-সুবিধার জন্য নয়; বরং সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য। আর সেই কল্যাণ নিশ্চিত হয় রাষ্ট্রের জনগণের সার্বিক কল্যাণের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি মর্মাহত ও বিস্মিত। তাঁর সরকারের আওতাধীন প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে তাঁর সেই আবেগ সঞ্চারিত হোক। দায় কিন্তু দায়িত্বশীলকেই নিতে হয়, নিতে শিখতে হয়।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে