অরুণ কর্মকার
আমাদের জ্বালানি খাতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দীর্ঘকালের। এই খাত নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ ও পরিকল্পনা কখনোই খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি মেটানো, দাম নির্ধারণ, আমদানির পরিকল্পনা এবং দেশীয় জ্বালানিসম্পদ আহরণ ও ব্যবহার বাড়ানোর ভাবনা দেখা যায়নি। জ্বালানি নিরাপত্তার কথা অবশ্য এখন আর কেউই তেমন একটা বলেন না। কারণ হয়তো ধরে নিয়েছেন, ‘সকলই গরল ভেল’।
তবু একেক সময় একেকটা বিষয়ে কথা ওঠে। সেসব শুনতে হয়। কিছু বলতেও হয়। তেমনই একটি বিষয় সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস)। এ বিষয়ে কথা উঠেছে দুই কারণে—প্রথমত, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও কনভারশন ওয়ার্কশপ মালিক সমিতি (সিএনজি অ্যাসোসিয়েশন) এই খাতের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁদের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো বিশ্লেষক কিছু মতামত প্রকাশ ও সুপারিশ করেছেন।
ওই সব মতামতের কোনো কোনোটিতে সিএনজি খাতকে বিদায় জানানোর কথাও বলা হয়েছে। এর পক্ষে প্রধান যুক্তি হলো, যেখানে দেশের আয়বর্ধক, কর্মসংস্থানের সহায়ক ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা যথেষ্ট গ্যাস পায় না, সেখানে সিএনজির জন্য আমরা গ্যাস দিই কোন বিবেচনায়? তা ছাড়া সিএনজি এখন আর ব্যয়সাশ্রয়ী নয়। এটা সংগ্রহ করতে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় এবং সিএনজিকে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন জ্বালানিও বলা যায় না।
সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যের বিষয়ে যাওয়ার আগে বিশ্লেষকদের মতামতের বিষয়ে দু-একটি কথা বলে নেওয়া দরকার। প্রথম কথা হলো, দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি দীর্ঘদিনের। এর কারণ দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি উপেক্ষা করা এবং গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রেও অবকাঠামোগত ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা। ফলে গ্যাসের কোনো শ্রেণির গ্রাহকই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পায় না। তা সত্ত্বেও আয়বর্ধক, কর্মসংস্থানের সহায়ক ও রপ্তানিমুখী হিসেবে শিল্পকারখানা গ্যাস প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে। কিন্তু কথা হলো, সিএনজি খাতেও তো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ লোক কাজ করে। সিএনজি বন্ধ করা হলে এই সব লোকের কর্মসংস্থানের কী হবে? সিএনজিতে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তা শিল্পে দিলে এই কয়েক লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হবে কি?
এর পরের কথা হলো, সিএনজিকে বিদায় জানানো হলে যানবাহনের জন্য যে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল (মূলত ডিজেল) আমদানি করতে হবে, তার জন্য বছরে ব্যয় হবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। জ্বালানি তেল ও সীমিত পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে অতিরিক্ত টাকা লাগবে। এমনিতেই এখন বৈদেশিক মুদ্রার নাজুক অবস্থায় যদি জ্বালানি আমদানি করতে আরও ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। ফলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা সিএনজি খাতটি একটি রুগ্ণ শিল্প খাতে পরিণত হবে। তা ছাড়া সরকার সবচেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করে সিএনজি খাতে। প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা, অন্যান্য খাতে যা এর অর্ধেক বা কিছু বেশি। এলএনজি আমদানি করে সিএনজি খাতে গ্যাস দিলেও সরকারের লোকসান নেই।
এবার আসি সিএনজি নিতে সময়ের অপচয়ের বিষয়ে। এই হিসাব যদি করতে হয়, তাহলে যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন কত হাজার গাড়ি কত ঘণ্টা বসে থাকে, তাতে কত জ্বালানির অপচয় হয় এবং মানুষের কত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেই হিসাবও করতে হবে। মনে হয়, সিএনজির জন্য যে সময় অপচয় হয়, তার চেয়ে যানজটে অপচয়ের পাল্লাটা অনেকগুণ বেশি ভারী হবে। সুতরাং অপচয় যেখানে পদে পদে, সেখানে সিএনজি নিতে বেশি সময় লাগার ওপর দায় চাপানো যায় কি? তা ছাড়া সময় বেশি লাগার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সিএনজি স্টেশনগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাসের চাপ না থাকা। সে জন্য সিএনজি খাতের কেউ দায়ী নয়।
এরপর পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কথা যদি ওঠে তাহলে বলতে হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির (ফসিল ফুয়েল) মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে গ্যাস। এর সঙ্গে যদি আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির তুলনা করতে, যাই তাহলে বিষয়টি সঠিক হবে না। তার পরও বলা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে পানিকে প্রায় পরিহারই করা হচ্ছে। কারণ পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ করতে গেলে পরিবেশের বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। আমাদের কাপ্তাই, আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের ফারাক্কা হলো এর বড় উদাহরণ। সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ করতে গেলেও ভূমির অপচয়সহ বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো নগণ্য বটে। তবে সবকিছু তো আর সৌর কিংবা বায়ুবিদ্যুৎ দিয়ে চলবে না, অন্যান্য জ্বালানিও লাগবে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস হলো সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন। প্রায় আড়াই দশক আগে যখন দেশে সিএনজি প্রবর্তন করা হয়, তখন বিষয়টি অন্যতম প্রধান বিবেচ্য ছিল। ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য স্থানের ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণ সিএনজি নয়।
সুতরাং সিএনজিকে বিদায় দিলেই আমাদের বড় ধরনের সাশ্রয় হবে, শিল্প খাতে গ্যাস-সংকটের বড় সমাধান হয়ে যাবে—বিষয়টি একেবারেই তেমন নয়। দেশীয় জ্বালানিসম্পদের উন্নয়নকে উপেক্ষা করে যে সংকটে দেশকে ফেলা হয়েছে, তা থেকে শিগ্গির উদ্ধার পাওয়ার পথ নেই। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রবর্তনের কথা যদি ধরি তাহলেও বলব—সময় লাগবে। অনেকটাই সময় লাগবে। প্রসঙ্গত, শিল্পে গ্যাস-সংকটের কিছু সুরাহা কিন্তু করছে সিএনজি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় এনে বিশেষ ব্যবস্থায় শিল্পে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক শিল্প সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস নিয়েও শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এবার সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের প্রসঙ্গে আসি। তাদের বক্তব্য খুব সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার। ২০১৫ সালের পর তাদের মার্জিন (গ্যাস বিক্রি করে যে মুনাফা সরকার নির্ধারণ করে দেয়) বাড়ানো হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সরকার বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস সংকুচিত (কম্প্রেসড) করতে অনেক বিদ্যুৎ লাগে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, যেসব জায়গা ইজারা নিয়ে তারা সিএনজি স্টেশন করেছে, সরকার সেই জায়গার ইজারামূল্য বাড়িয়েছে প্রায় শতগুণ। সিএনজি স্টেশন চালানোর জন্য অনেকগুলো লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলোর বার্ষিক নবায়ন ফি’র অঙ্কও নেহাত কম নয়।
তাদের হিসাবমতে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে তারা সরকারনির্ধারিত ৪৩ টাকায়। এর মধ্যে ৩৫ টাকা সরকারের, ৮ টাকা স্টেশন মালিকের। এই ৮ টাকা থেকে এখন বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে ৫ টাকা ৪ পয়সা। ২৮ পয়সা যাচ্ছে লাইসেন্স ফি ও ইজারামূল্য পরিশোধ করতে। অবশিষ্ট ২ টাকা ৬৮ পয়সা যাচ্ছে তাদের পকেটে। সেখান থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, স্টেশনের মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সব খরচ বহন করতে হয়। স্টেশনের কর্মচারীদের সরকারনির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি-বোনাস দিতে হয়। রয়েছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। ব্যাংকঋণের সুদ আছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খুচরা যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ওই টাকায় এসব ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং তাদের দাবি, বিদ্যুতের বাড়তি বিল সমন্বয়সহ মোট ৫ টাকা ১০ পয়সা মার্জিন বাড়ানো হোক।
এই দাবি তারা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। সরকারও এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। এমনকি ২০১৩ সালে একবার এবং ২০১৭ সালে আরও একবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় সিএনজি স্টেশনের বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করাসহ বেশ কিছু বিষয় অনুমোদন করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে পাঠিয়েছিল, কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এখন আবার তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে বিষয়টি উপস্থাপন করেছে। সরকার যদি সিএনজিকে ‘আল বিদা’ বলতে না চায়, তাহলে বিষয়টির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আমাদের জ্বালানি খাতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দীর্ঘকালের। এই খাত নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ ও পরিকল্পনা কখনোই খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি মেটানো, দাম নির্ধারণ, আমদানির পরিকল্পনা এবং দেশীয় জ্বালানিসম্পদ আহরণ ও ব্যবহার বাড়ানোর ভাবনা দেখা যায়নি। জ্বালানি নিরাপত্তার কথা অবশ্য এখন আর কেউই তেমন একটা বলেন না। কারণ হয়তো ধরে নিয়েছেন, ‘সকলই গরল ভেল’।
তবু একেক সময় একেকটা বিষয়ে কথা ওঠে। সেসব শুনতে হয়। কিছু বলতেও হয়। তেমনই একটি বিষয় সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস)। এ বিষয়ে কথা উঠেছে দুই কারণে—প্রথমত, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও কনভারশন ওয়ার্কশপ মালিক সমিতি (সিএনজি অ্যাসোসিয়েশন) এই খাতের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁদের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো বিশ্লেষক কিছু মতামত প্রকাশ ও সুপারিশ করেছেন।
ওই সব মতামতের কোনো কোনোটিতে সিএনজি খাতকে বিদায় জানানোর কথাও বলা হয়েছে। এর পক্ষে প্রধান যুক্তি হলো, যেখানে দেশের আয়বর্ধক, কর্মসংস্থানের সহায়ক ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা যথেষ্ট গ্যাস পায় না, সেখানে সিএনজির জন্য আমরা গ্যাস দিই কোন বিবেচনায়? তা ছাড়া সিএনজি এখন আর ব্যয়সাশ্রয়ী নয়। এটা সংগ্রহ করতে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় এবং সিএনজিকে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন জ্বালানিও বলা যায় না।
সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যের বিষয়ে যাওয়ার আগে বিশ্লেষকদের মতামতের বিষয়ে দু-একটি কথা বলে নেওয়া দরকার। প্রথম কথা হলো, দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি দীর্ঘদিনের। এর কারণ দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি উপেক্ষা করা এবং গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রেও অবকাঠামোগত ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা। ফলে গ্যাসের কোনো শ্রেণির গ্রাহকই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পায় না। তা সত্ত্বেও আয়বর্ধক, কর্মসংস্থানের সহায়ক ও রপ্তানিমুখী হিসেবে শিল্পকারখানা গ্যাস প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে। কিন্তু কথা হলো, সিএনজি খাতেও তো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ লোক কাজ করে। সিএনজি বন্ধ করা হলে এই সব লোকের কর্মসংস্থানের কী হবে? সিএনজিতে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তা শিল্পে দিলে এই কয়েক লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হবে কি?
এর পরের কথা হলো, সিএনজিকে বিদায় জানানো হলে যানবাহনের জন্য যে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল (মূলত ডিজেল) আমদানি করতে হবে, তার জন্য বছরে ব্যয় হবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। জ্বালানি তেল ও সীমিত পরিমাণ এলএনজি আমদানি করতে অতিরিক্ত টাকা লাগবে। এমনিতেই এখন বৈদেশিক মুদ্রার নাজুক অবস্থায় যদি জ্বালানি আমদানি করতে আরও ১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। ফলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা সিএনজি খাতটি একটি রুগ্ণ শিল্প খাতে পরিণত হবে। তা ছাড়া সরকার সবচেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করে সিএনজি খাতে। প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা, অন্যান্য খাতে যা এর অর্ধেক বা কিছু বেশি। এলএনজি আমদানি করে সিএনজি খাতে গ্যাস দিলেও সরকারের লোকসান নেই।
এবার আসি সিএনজি নিতে সময়ের অপচয়ের বিষয়ে। এই হিসাব যদি করতে হয়, তাহলে যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন কত হাজার গাড়ি কত ঘণ্টা বসে থাকে, তাতে কত জ্বালানির অপচয় হয় এবং মানুষের কত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেই হিসাবও করতে হবে। মনে হয়, সিএনজির জন্য যে সময় অপচয় হয়, তার চেয়ে যানজটে অপচয়ের পাল্লাটা অনেকগুণ বেশি ভারী হবে। সুতরাং অপচয় যেখানে পদে পদে, সেখানে সিএনজি নিতে বেশি সময় লাগার ওপর দায় চাপানো যায় কি? তা ছাড়া সময় বেশি লাগার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সিএনজি স্টেশনগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাসের চাপ না থাকা। সে জন্য সিএনজি খাতের কেউ দায়ী নয়।
এরপর পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কথা যদি ওঠে তাহলে বলতে হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির (ফসিল ফুয়েল) মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে গ্যাস। এর সঙ্গে যদি আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির তুলনা করতে, যাই তাহলে বিষয়টি সঠিক হবে না। তার পরও বলা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে পানিকে প্রায় পরিহারই করা হচ্ছে। কারণ পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ করতে গেলে পরিবেশের বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। আমাদের কাপ্তাই, আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের ফারাক্কা হলো এর বড় উদাহরণ। সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ করতে গেলেও ভূমির অপচয়সহ বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো নগণ্য বটে। তবে সবকিছু তো আর সৌর কিংবা বায়ুবিদ্যুৎ দিয়ে চলবে না, অন্যান্য জ্বালানিও লাগবে। সে ক্ষেত্রে গ্যাস হলো সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন। প্রায় আড়াই দশক আগে যখন দেশে সিএনজি প্রবর্তন করা হয়, তখন বিষয়টি অন্যতম প্রধান বিবেচ্য ছিল। ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য স্থানের ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণ সিএনজি নয়।
সুতরাং সিএনজিকে বিদায় দিলেই আমাদের বড় ধরনের সাশ্রয় হবে, শিল্প খাতে গ্যাস-সংকটের বড় সমাধান হয়ে যাবে—বিষয়টি একেবারেই তেমন নয়। দেশীয় জ্বালানিসম্পদের উন্নয়নকে উপেক্ষা করে যে সংকটে দেশকে ফেলা হয়েছে, তা থেকে শিগ্গির উদ্ধার পাওয়ার পথ নেই। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রবর্তনের কথা যদি ধরি তাহলেও বলব—সময় লাগবে। অনেকটাই সময় লাগবে। প্রসঙ্গত, শিল্পে গ্যাস-সংকটের কিছু সুরাহা কিন্তু করছে সিএনজি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় এনে বিশেষ ব্যবস্থায় শিল্পে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক শিল্প সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস নিয়েও শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এবার সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের প্রসঙ্গে আসি। তাদের বক্তব্য খুব সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার। ২০১৫ সালের পর তাদের মার্জিন (গ্যাস বিক্রি করে যে মুনাফা সরকার নির্ধারণ করে দেয়) বাড়ানো হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সরকার বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস সংকুচিত (কম্প্রেসড) করতে অনেক বিদ্যুৎ লাগে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, যেসব জায়গা ইজারা নিয়ে তারা সিএনজি স্টেশন করেছে, সরকার সেই জায়গার ইজারামূল্য বাড়িয়েছে প্রায় শতগুণ। সিএনজি স্টেশন চালানোর জন্য অনেকগুলো লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলোর বার্ষিক নবায়ন ফি’র অঙ্কও নেহাত কম নয়।
তাদের হিসাবমতে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করে তারা সরকারনির্ধারিত ৪৩ টাকায়। এর মধ্যে ৩৫ টাকা সরকারের, ৮ টাকা স্টেশন মালিকের। এই ৮ টাকা থেকে এখন বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে ৫ টাকা ৪ পয়সা। ২৮ পয়সা যাচ্ছে লাইসেন্স ফি ও ইজারামূল্য পরিশোধ করতে। অবশিষ্ট ২ টাকা ৬৮ পয়সা যাচ্ছে তাদের পকেটে। সেখান থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, স্টেশনের মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ সব খরচ বহন করতে হয়। স্টেশনের কর্মচারীদের সরকারনির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি-বোনাস দিতে হয়। রয়েছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি। ব্যাংকঋণের সুদ আছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খুচরা যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ওই টাকায় এসব ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং তাদের দাবি, বিদ্যুতের বাড়তি বিল সমন্বয়সহ মোট ৫ টাকা ১০ পয়সা মার্জিন বাড়ানো হোক।
এই দাবি তারা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। সরকারও এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। এমনকি ২০১৩ সালে একবার এবং ২০১৭ সালে আরও একবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় সিএনজি স্টেশনের বিদ্যুৎ বিল সমন্বয় করাসহ বেশ কিছু বিষয় অনুমোদন করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে পাঠিয়েছিল, কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এখন আবার তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে বিষয়টি উপস্থাপন করেছে। সরকার যদি সিএনজিকে ‘আল বিদা’ বলতে না চায়, তাহলে বিষয়টির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে