মুজিববর্ষে আমাদের প্রধান চাওয়াগুলো

আব্দুর রউফ সরকার
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৩৫
Thumbnail image

এ বছর আমরা মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। স্বাধীনতা লাভের পর বিগত ৫০ বছরে আমাদের কতটুকু উন্নতি হয়েছে এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অগ্রগতির ব্যবধান কতটুকু তা আজ মূল্যায়নের সময় এসেছে।

একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, সুখী, সমৃদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বপ্ন তিনি সফলভাবে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। সেই স্বপ্নকে হৃদয়ে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অনেক ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

আমাদের জাতীয় জীবনে গর্ব করার মতো ওই একটি মাত্র জয় ছিল। তারপর থেকে আমরা পরাজিত হয়ে চলেছি। স্বাধীনতা লাভের পরপরই এ দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিছু বিপথগামী মুক্তিযোদ্ধা ক্ষমতার নেশায় স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা চালায়।

দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু যে স্বপ্নগুলো হৃদয়ে ধারণ করে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তার অধিকাংশ অধরাই রয়ে গেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। চাহিদা মতো ক্যালরি না পেলেও ক্ষুধার জ্বালায় আমাদের আর কষ্ট পেতে হয় না। কাপড়ের কষ্ট তেমন নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হচ্ছে। দালানকোঠা বেড়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনমান বেড়েছে। জীবনাচরণে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য এবং আধুনিকতা।

ডিজিটালাইজেশন আমাদের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার এখনো বেহাল দশা। সে কারণে ছোটখাটো অসুখে এ দেশের মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। শিক্ষার অবস্থা আরও করুণ। পৃথিবীর কোনো দেশ আমাদের দেশের একাডেমিক সার্টিফিকেটকে যথাযথ মূল্যায়ন করে না। ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে পৃথিবীর ১০০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।

বর্তমানে অদক্ষতা, নৈতিক স্খলন, ভুল দর্শন, ভুল কর্মকাণ্ডের কারণে রাজনীতিবিদরা মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। জনগণও রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। কার্ল মার্ক্স বলেছেন, ‘তুমি যদি দেশের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা না কর, তার মানে তুমি তোমার চেয়ে নিম্নস্তরের মানুষের দ্বারা শাসিত হতে চাও।’ ঘটেছেও তাই। জনগণ এখন নিম্নস্তরের মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিচ্ছে। ভালো মানুষেরা রাজনীতির মাঠ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সুযোগে দেশের মালিক হয়ে গেছেন আমলারা। তাঁরা এখন আর রাজনীতিবিদদের মূল্যায়ন করতে চান না। আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র এটা নয়। এ অবস্থা চলতে পারে না।

রাজনীতিতে সৎ, কর্মঠ, ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটুক। রাজনীতিবিদরা ফিরে পাক জনগণের আস্থা আর হারানো গৌরব। কর্মচারীরা পালন করুক কর্মচারীর ভূমিকা। জনগণ হয়ে উঠুক প্রকৃত অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস। এগুলোই হোক মুজিববর্ষের প্রধান চাওয়া।

বিগত ৫০ বছরে দুটি বিষয়ে আমাদের খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। একটি হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন অর্থাৎ সুনাগরিক তৈরি, আর অপরটি হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মুজিববর্ষের প্রতিজ্ঞা হোক মানবসম্পদ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া আর সর্ব ক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই কেবল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ কিঞ্চিৎ শোধ হবে তাঁর স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে।

লেখক: অধ্যক্ষ, উত্তর বাংলা কলেজ, কাকিনা, লালমনিরহাট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত