ডিজিটাল হাট

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ০৭: ২৮

ঘটনাটা ভয়াবহ। সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য দেদার বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে, যেখানে কোনো হাট বসার জন্য মানুষের ভিড় থাকে না। প্রযুক্তির বদৌলতে অসৎ মানসিকতার সরকারি লোকজন মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে দিচ্ছে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় মঙ্গলবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ‘গোপন তথ্যের হাজারো হাট’ শিরোনামে।

জানা যায়, টেলিগ্রাফ অ্যাপের ৪৯টি গ্রুপে এনআইডি ও মোবাইলের তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এসব গ্রুপে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ২২টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে ৫ হাজার সদস্য। সবচেয়ে বেশি সদস্য ফেসবুকের ৭২৫টি গ্রুপে। এতে ৩২ লাখ সদস্য রয়েছে। এসব গ্রুপে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও এনআইডির তথ্য কেনাবেচা হয়। অনলাইনে এসব চক্রের পরিচিত নাম ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ গ্রুপ। যে কেউ চাইলে তাদের মাধ্যমে এসব গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এনটিএমসি তদন্তে এসব বিষয় জানা গেছে। এনটিএমসি হলো ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার’। এখানেই দেশের সব মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র ও টেলিফোনে যোগাযোগের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদে ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের নানা আন্তর্জাতিক সনদেও তা উল্লেখ আছে। একজন ব্যক্তির তথ্য কোনোভাবে বেহাত হলে তিনি নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। এতে তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রাইভেসি নষ্ট হয় এমন তথ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ফোন নম্বর বা ই-মেইল আইডি, কল রেকর্ড ইত্যাদি। ব্যক্তির গোপনীয় তথ্য মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও আমাদের দেশে এর ব্যত্যয় ঘটছে নানা ক্ষেত্রে।

সে জন্য ব্যক্তির তথ্য প্রকাশ রোধ রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্র কোনোভাবেই তা অবহেলা করতে পারে না। পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং এর প্রতিটি আইনি সংস্থার দায়িত্বশীলেরা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করতে পারে না। এই অপকর্মে দুটি সংস্থার সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই দুই সংস্থায় একজন পুলিশ সুপারসহ চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

অরক্ষিত ওয়েবসাইটের কারণে এমন অবস্থা যে হয়েছে, তা স্পষ্ট। এই ফাঁসের ঘটনায় প্রমাণ হলো, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটের নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল। কয়েক বছর ধরে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটছে।

এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের কোনো দোষ নেই। কারণ ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষিত থাকে এনটিএমসিতে। এনটিএমসির ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পাচার হওয়ার দায় তাদেরই নিতে হবে। অপরাধী যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু এই গ্যাংয়ের সবাইকে আইনের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত