অরুণ কর্মকার
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক পরিবর্তনের এক অমিত সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি মানে রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক দল।
বলতে দ্বিধা নেই যে আমাদের দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় চিন্তা ও চর্চায় এমন এক গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছে, যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের অপরিহার্য অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরমতসহিষ্ণুতারও বিন্দুমাত্র সেখানে নেই। এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া নিজেদের গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসার মানসিকতাও তাদের আছে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফলে তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুটি।
এক. তারা সংস্কার চাই বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সব সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ। দুই. ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের যে ধরনের রাজনৈতিক নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন, নিজ নিজ দলে সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেই অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নের কৌশল থাকে। আমাদের বিদ্যমান দলগুলোরও আছে। কিন্তু এর কোথাও উদার গণতান্ত্রিক ভাবনাচিন্তার কোনো স্থান নেই। সংস্কার-ভাবনাও নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রচলিত ধারার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। এই আকাঙ্ক্ষা এখন জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে
ফলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন এই ভাবনার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈপরীত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য-বিবৃতিতে। একবার তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করার কথা। কয়েক দিনের মধ্যে বলে অন্য কথা। একবার বলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা। আবার বলে, কত সময় তা নির্দিষ্ট করে জানানোর কথা। এই বৈপরীত্যের অবসান ঘটানোই অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত চাপ সামলে অন্তর্বর্তী সরকার সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসও এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে আজ ৫ অক্টোবর থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনায় বসছে। এর একটা কারণ হলো, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে রাজনৈতিক দলগুলোর অজ্ঞাতসারে কিছু করতে চায় না, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েই যে যাবতীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে চায় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ।
সরকার জানে, জনগণও বোঝে যে যত সংস্কার প্রস্তাবই তৈরি করা হোক না কেন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুমাদন না থাকলে তা বাস্তবায়িত হবে না। কেননা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করবে রাজনৈতিক দলগুলোই। রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবই নাকচ করে দেওয়া বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোনো বিষয় হবে না, হয় না যার প্রমাণ ইতিপূর্বে আমরা পেয়েছি তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং আরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং দেশে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন সংস্কার দরকার যাতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আগের পথ অনুসরণ না করে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রকৃতপক্ষেই মনোযোগী হয়।
লক্ষ করার বিষয় যে আমরা সবাই রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বেশ জোরেশোরেই বলছি। কিন্তু সেভাবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের কথা কেউ বলছেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল দিয়ে তা সম্ভব হবে না বলেও সবাই মনে করেন। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের সংস্কারও অপরিহার্য। কিন্তু কে করবেন এই সংস্কার? অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, আরপিও সংস্কার প্রভৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব সংস্কার হলে তার অনেকটা প্রভাবই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর পড়বে। অর্থাৎ ওইসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোও আর প্রচলিত ধারায় চলতে পারবে না। দলের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন তাদের আনতে হবে। তারপরও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে, বিশেষ করে সেই দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে তা তো আমরা সবাই জানি।
তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তোলার উপায় কী? এই প্রসঙ্গে অনেকেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি (স্ট্রাইকিং ফোর্স) ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে তেমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথাও ইতিমধ্যে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন একটি সম্ভাবনা যে ছাত্র-তরুণেরা নাকচ করে দিচ্ছেন তেমনও নয়। সারা দেশে নাগরিক কমিটি গঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকেও উড়ো খবর কিংবা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিষয়টি বাস্তব এবং প্রয়োজনীয়ও।
কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ কাজ। তার পরের কথা হলো নতুন দলের গণভিত্তি ও জনসমর্থন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-তরুণদের প্রতি জনসমর্থন থাকবে বলেও যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও নতুন দলের প্রতি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই প্রশ্নও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা আশা করা বাতুলতামাত্র। তাই অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৯৬৯ কিংবা ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতোই পরিণতি হবে ২০২৪-এরও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুরোনো ধারার রাজনৈতিক শক্তিই কি হবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক? অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এবারও হবে না? এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে এ কথাও ঠিক যে ২০২৪-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান। এই অভ্যুত্থানের নায়কেরা ঘরে ফিরে যাননি। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হিসেবে যেমন আছেন, তেমনি সক্রিয় আছেন রাজপথে এবং সমাজেও। এই অভ্যুত্থানের সুফল ঘরে তোলার বিষয়ে তাঁরা সমানভাবে সক্রিয়। কাজেই অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর ‘সকলই গরল ভেল’ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে হয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে