বাংলা সিনেমার নিকট অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি। সিনেমা দেখার জন্য টিকিটই পাওয়া যাচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাই অনেকেই পোস্ট শেয়ার করেছেন আফসোস জানিয়ে। ঢাকার সিনেপ্লেক্সগুলো বেশির ভাগ সময়ই দখলে থাকে হলিউড সিনেমার। এই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের পাঁচ আউটলেটের তিন-চতুর্থাংশই দখলে নিয়েছে ঢালিউড সিনেমা। আজ মুক্তি পাচ্ছে ‘হাওয়া’ সিনেমা। জানা গেছে, এই সিনেপ্লেক্সটিতে প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন রেকর্ড ২৬টি শো পেয়েছে ‘হাওয়া’। এ ছাড়া সামরিক জাদুঘরের হলটিতে ৩১ জুলাই থেকে বাড়তি ৩টি শো চলবে। এর আগে কোনো বাংলা চলচ্চিত্র এত শো নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পায়নি। অবশ্য আগের তুলনায় এখন হলও বেড়েছে।

মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহেও বেশ চমক দেখাচ্ছে ‘পরাণ’। শরিফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত সিনেমাটি এ সপ্তাহে পেয়েছে দৈনিক ১৬টি শো। এটিও একটি রেকর্ড। অনন্ত-বর্ষা অভিনীত ‘দিন: দ্য ডে’ তৃতীয় সপ্তাহে পেয়েছে দৈনিক ৪টি শো। অন্যদিকে হলিউডের দুটি সিনেমা পেয়েছে মোট ১১টি শো। অর্থাৎ, ৫৯টি শোর ৪৬টিই বাংলা চলচ্চিত্রের দখলে।

গত কয়েক সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সে লাগাতার হাউসফুল শো উপহার দিয়েছে ‘পরাণ’। এখন অগ্রিম টিকিট বিক্রির চমক দেখাচ্ছে ‘হাওয়া’। মাল্টিপ্লেক্সটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা বাংলা সিনেমা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, তাঁরাই এখন টিকিটের জন্য ফোন দিচ্ছেন। এমন অবস্থা শুধু হলিউড সিনেমার বেলাতেই দেখা যেত। দিন পাল্টেছে, বাংলা সিনেমার সুদিন আসছে। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের ব্যাপার। “হাওয়া” সিনেমাটির প্রথম তিন দিনের টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। অন্যদিকে তৃতীয় সপ্তাহে এসে “পরাণ”-এর ১৬টি শো চলছে। প্রথম থেকেই ছবিটি হাউসফুল যাচ্ছে। গল্প ও নির্মাণশৈলী ভালো হলে এ দেশের দর্শক বাংলা সিনেমাটাই আগে দেখতে চায়।’

এরই মধ্যে দেশের প্রায় সব কটি মাল্টিপ্লেক্সে ‘হাওয়া’ সিনেমার দুই-তিন দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিট নিয়ে দর্শকের আগ্রহ আশাবাদী করছে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের। তাঁরা বলছেন, তরুণ নির্মাতারা এভাবে একের পর এক সিনেমা নির্মাণ করতে থাকলে, দর্শকের যে জোয়ার তৈরি হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। প্রযোজকেরা সিনেমায় আবার লগ্নি করতে শুরু করবেন, বাড়বে হলের সংখ্যাও।

মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ও প্রযোজক ইফতেখার নওশাদ জানান, তাঁর হলে গত সপ্তাহে ‘পরাণ’ চলেছে। আজ থেকে চলবে ‘হাওয়া’। সিনেমাটির অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বাংলা সিনেমার ভালো ব্যবসা নিয়ে নিজের আনন্দের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদে মুক্তি পাওয়া “পরাণ’’ দিয়ে দারুণ সাড়া পেয়েছি। আগে দর্শকের অভাবে আমার হলের নাইট শো প্রায়ই বন্ধ থাকত। এখন নিয়মিতই চলছে। অনলাইনে টিকিট বিক্রির সুযোগ থাকলে আরও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করতে পারতাম।’

‘হাওয়া’র তিন দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল মুভি থিয়েটারের অর্থ ব্যবস্থাপক আশীষ পাল, ‘আমাদের এখানে ১৯০ আসনের থিয়েটার হলের তিন দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন পরের দিনগুলোর টিকিট বিক্রি চলছে।’

একই রকমের খবর দিলেন নারায়ণগঞ্জের সিনে স্কোপের নির্বাহী পরিচালক রবি। তিনি বলেন, ‘আগামী তিন দিনের টিকিট সোল্ডআউট। যদিও আমাদের থিয়েটার হলটি মাত্র ৩৫ আসনের। গতকালও ২০০ টিকিট বিক্রি করেছি। সিনেমাটির “সাদা সাদা কালা কালা” গানটির গীতিকার ও সুরকার হাশিম মাহমুদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এই সিনেমা নিয়ে এখানকার মানুষ তাই দারুণ উচ্ছ্বসিত।’ সিনেমাটি ঢাকার বাইরে সিলেট, পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জেও মুক্তি পাচ্ছে।

অন্যদিকে সারা দেশে নতুন ১৭টি প্রেক্ষাগৃহসহ মোট ৬০টি প্রেক্ষাগৃহে চলবে ‘পরাণ’। সিনেমাটির পরিবেশক ‘দ্য অভি কথাচিত্র’র কর্ণধার জাহিদ হাসান অভি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার থেকে ৬০টি হলে চলবে পরাণ। নতুন করে যোগ হয়েছে ১৭টি হল।’

এ ছাড়া ঈদে মুক্তি পাওয়া অনন্ত-বর্ষা অভিনীত ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমাটির হলসংখ্যা কমছে এ সপ্তাহে। তবে আগামীকাল ১০০ জন প্রতিবন্ধী মানুষকে নিয়ে সিনেমা দেখার কথা রয়েছ অনন্ত-বর্ষার। এ সপ্তাহ থেকে সিনেমাটি বিদেশের মাটিতে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রথম সপ্তাহে সিনেমা নিয়ে বাহরাইনে যাওয়ার কথা রয়েছে অনন্তর।