Ajker Patrika

গ্যাস-সংকটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৫১
গ্যাস-সংকটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি চরমে

‘এই যে মাস গেলে দুই চুলার লিগা তিতাসকে ১ হাজার ৮০ টাকা দেওয়া হয়, পুরাই ফাউ। এখন বিকেল ৪টা বাজে প্রায়, পেটে ইট বাইন্ধা বইসা আছি। দিনের আলো ফোটার আগে চুলার গ্যাস চলে যায়, আসে মধ্যরাতের পর। আমার বাসার সব ঝগড়া, ঝামেলার মূল কারণ এই গ্যাস না থাকা, সময়মতো রান্না না হওয়া।’ গ্যাস-সংকট নিয়ে এভাবেই ঢাকার খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের বাসিন্দা আহমেদ দীপ্ত গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন।

রাজধানীতে কয়েক দিন ধরেই গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে গ্যাস থাকছে না আবাসিকে। কোনো কোনো এলাকায় দুপুরের পর একটু এলেও অনেক এলাকায় মধ্যরাতের আগে গ্যাস পাওয়া যায় না। রাজধানীর দিলু রোড, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট, দোলাইরপাড়, দনিয়া, বনশ্রী, ডেমরা, সেগুনবাগিচা, মগবাজার, শেওড়াপাড়া, মণিপুরীপাড়া, মোহাম্মদপুরসহ উত্তর ও দক্ষিণ সিটির অনেক এলাকায়ই গ্যাস থাকছে না।

রাজধানীর বাসিন্দারা বলছেন, গ্যাস না থাকায় ভোগান্তি তো আছেই, খরচও বাড়ছে। প্রতি মাসে সরকারি সংযোগের বিল পরিশোধ করেও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। অনেকেরই আবার হোটেল থেকে খাবার কিনতে হচ্ছে।

দিলু রোডের বাসিন্দা স্বপ্না পাল বলেন, সারা দিন গ্যাস থাকে না। কখনো কখনো দুপুরে এলেও তাতে রান্না হয় না। আর আসে মধ্যরাতে। এই শীতে খুব ভোরে উঠে রান্না করা লাগে।

বনশ্রীর বাসিন্দা ফারজানা ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই চুলায় গ্যাস থাকে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও গ্যাসের গতি বাড়ে না। সারা দিনের রান্না করতে হচ্ছে মধ্যরাতে।

দনিয়ার বাসিন্দা বাড়ির মালিক মো. হাসান বলেন, প্রতিদিন ভাড়াটেদের একই অভিযোগ—গ্যাস নেই। তাঁর এলাকায় রাতেও গ্যাস থাকে না।

জানা গেছে, এবার শীতের আগেই গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি বন্ধ রয়েছে নভেম্বর থেকে। এতে গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। দৈনিক প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস একটি টার্মিনাল থেকে গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৫০ কোটি ঘনফুট।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) কামরুজ্জামান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্ধ একটি এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে গ্যাস-সংকট কিছুটা কমবে। চট্টগ্রামের গ্যাসের সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এলএনজি কারিগরি ত্রুটির কারণে এমন হচ্ছে। এটি শুক্রবার (গতকাল) রাতেই ঠিক হয়ে যাবে। ঢাকার সংকটের বিষয়েও তিনি বলেন, এটিও এলএনজি টার্মিনালটির কারণে হয়েছে। তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

এদিকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী মার্চের মধ্যে গ্যাস-সংকটের সমাধান হবে। দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি সংস্কারের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে শীতে গ্যাস-সংকট আরও বেড়েছে। এলএনজি টার্মিনালটি সংস্কার শেষে দেশে না আসা পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো পেট্রোবাংলার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত