শিকলে বাঁধা সোহাগীর জীবন

আনিছুর লাডলা, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১৩: ৪৯

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা-বাবা নিরুপায় হয়ে মেয়েকে ঘর থেকে বাইরে এনে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখেন। সন্ধ্যা হলে একইভাবে শোবার ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রাখেন তাঁরা। এভাবে এক যুগের বেশি সময় ধরে শিকলে বাঁধা জীবন কাটাচ্ছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মানসিক ভারসাম্যহীন সোহাগী বেগম (১৮)।

সোহাগী বেগম আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি কদমতলা মোড় এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, দুলাল মিয়ার চার মেয়ের মধ্যে মেজ সোহাগী। চার বছর বয়সে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে ডুবে আহত হন তিনি। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পেট থেকে পানি বের করেন। পেট থেকে পানি বের করার সময় সোহাগীর পা ধরে ঘোরানো হয়। এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। এতে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানসিক সমস্যা। অভাবের সংসারে আদরের সন্তানকে সুস্থ করতে চেষ্টাও করে তাঁর পরিবার, কিন্তু সুস্থ হননি। বাইরে ছুটে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করেন সোহাগী।

প্রতিবেশীরা একপর্যায়ে বিরক্ত হলে তাঁকে ঘরে আটকে রাখে তাঁর পরিবার। হারানোর ভয় আর অন্যের ক্ষতি করার আশঙ্কায় নিরুপায় সোহাগীর পরিবার ১২ বছরের বেশি সময় ধরে পায়ে শিকলে বেঁধে রাখে। ভোর হলে বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে তাঁর পায়ের শিকল পরানো হয়। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না সোহাগী।

সোহাগীর মা সাবিনা বেগম বলেন, ‘পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ পেটের সন্তানকে শিকলে বেঁধে রাখা। এই কাজ প্রতিদিন করতে হচ্ছে। সোহাগীর প্রস্রাব-পায়খানাযুক্ত কাপড় পরিষ্কার করতেও কষ্ট হয় না। বুক ছিঁড়ে যায় যখন মেয়েকে গরু-ছাগলের মতো গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখি। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে সোহাগী সুস্থ হতো। এ জন্য বিত্তবানেরা এগিয়ে এলে মেয়ের চিকিৎসাটা করানো যেত।’

সোহাগীর বাবা দুলাল মিয়া বলেন, ‘প্রথম দিকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ করেছি। কোনো কাজ হয়নি। মেয়ের চিকিৎসা করাতেই নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

সোহাগীর প্রতিবেশী পলাশী ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, মেয়েটির চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পরিবারটি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত