জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ানো ঠিক হবে না

শরিফুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২২, ০৬: ৫০
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৬: ২৩

আজকের পত্রিকা: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। দেশে এর প্রভাব কেমন হতে পারে? 
ম তামিম: ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সব দেশেই জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতি কোথাও দেখা যায়নি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বড় ঘাটতি দেখা দেবে এ আশঙ্কায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতেও এ রকম ঘটেছে। এখন সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নির্ভর করছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকালীন অবস্থা কতদিন বিরাজ করে তার ওপর। এ জন্য হয়তো কিছুদিন জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি থাকবে। তবে আমি মনে করি, এখনই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরও কিছুদিন দেখা উচিত। স্বল্পকালীন সময়ে হলেও সরকার হয়তো ভর্তুকি দিয়ে দাম সমন্বয় করতে পারবে। কিন্তু যদি পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে চলে যায়, তখন সরকারের পক্ষে মূল্যবৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। বাড়তি চাপ নেওয়ার মতো সক্ষমতা কি সাধারণ মানুষের আছে?
ম তামিম: দেশে তেলের এক দফা মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানির মূল্য ২৩ শতাংশ বৃদ্ধিতে পরিবহন ভাড়া বেড়েছিল সর্বনিম্ন ২৮ শতাংশ। যেখানে পরিবহনের ভাড়া সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি বাড়া ঠিক না। তাই তেলের দাম যদি কিছুটা বাড়ানোও হয়, তবু আমি মনে করি, পরিবহনের ভাড়ায় স্থিতি রাখা উচিত। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা জানি, ২০০৮ সালে তেলের মূল্য একপর্যায়ে ১৪০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। তখনো কিন্তু ওই রকম মূল্যবৃদ্ধি করা হয়নি।

আজকের পত্রিকা: জাহাজ ভাড়া বাড়ায় বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এটি কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব? 
ম তামিম: এটা ঠিক যে জাহাজে ভাড়া বেড়ে গেছে। তবে কতটুকু বেড়েছে। সমস্যাটা হচ্ছে বাংলাদেশে যতটুকু দাম বেড়েছে সেটাকে অজুহাত দেখিয়ে অনেক বেশি দাম বাড়ানো হয়। যতটুকু বেড়েছে সেটা যদি সত্যিকারভাবে  বাজারে প্রতিফলিত হতো, তাহলে হয়তো এত বেশি বাড়ত না। জাহাজের ভাড়া বাড়ার জন্য যদি কিছু মূল্যবৃদ্ধিও হয়—এটা কী লিটারে ১ টাকা, নাকি ১০ টাকা, নাকি ২০ টাকা। এটা তো জানা যায়। এটা কিন্তু হিসাব করে বের করা যায়। বিইআরসি তো প্রতি মাসে জাহাজমূল্যের ওপর এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করছে। সয়াবিন তেল আনতে জাহাজে কত খরচ হলো—সেটা আগে কত ছিল, এখন কত আছে। কত লিটার সয়াবিন আসছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কতটুকু বাড়তে পারে। সেই হিসাব করা কোনো কঠিন কিছু না। কিন্তু আমাদের এখানে যে যার খুশিমতো মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে, কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

আজকের পত্রিকা: এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ কি খোলা আছে?
ম তামিম: একটা বাসের ভাড়া কতটুকু হতে পারে, ডিজেলের খরচ কত এবং তাতে তার কী পরিমাণ মুনাফা থাকবে—এটা হিসাব করার ফর্মুলা আছে। বিভিন্ন কমিটি সেই ফর্মুলা ক্যালকুলেট করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে, এটা মানা হয় না। এবং তার চেয়ে বেশি চাওয়া হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: এলপিজির দামও আবার বেড়েছে। এটাকে কি কমিয়ে রাখা যেত?
ম তামিম: একটা মুনাফা ধরে এলপিজি মূলত বাজারমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের তেল, গ্যাস কিন্তু সেই বাজারমূল্যে আমরা পাচ্ছি না। আমরা ভর্তুকির মাধ্যমে পাচ্ছি। ভোক্তারা সরাসরি যেটা কেনে সেই পণ্যের দাম বাড়ানো বা কমানো যায়। যেমন—এলপিজি সরাসরি ভোক্তা কিনছে বলে দামের ওঠানামা বুঝতে পারছে। কিন্তু ডিজেল সরাসরি কেউ কেনে না। ডিজেল কেনে পরিবহন। এটার মূল্য নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগী পরিবহন মালিকদের হাতে। আমরা যদি তেলের দাম কমাই তাহলে কি পরিবহন ভাড়া কমবে? আমরা জানি কমবে না। 

আজকের পত্রিকা: এ অবস্থায় করণীয় কী হতে পারে?
ম তামিম: যেহেতু তেলের মূল্য কম ছিল, তাই গত সাত বছরে সরকারের কোষাগারে ৪০ হাজার কোটি টাকা গেছে। আমরা সেই সুফলটা পাইনি। এই টাকা যদি অন্য খাতেও খরচ হয়, সেটা জনগণের জন্য খরচ হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের পকেটে গেলেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এটা যদি ব্যবসায়ীদের পকেটে থেকে যায়, তাহলে তা ঠিক হবে না। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত