অরুণ কর্মকার
আজকের লেখার বিষয়-ভাবনা ছিল বুয়েটে ছাত্র বি-রাজনীতি নিয়ে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার চেনা-জানা এত বেশি অগ্রজ-অনুজ গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন যে আমি কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়েছি। আমাকে আরও কিছুটা বিভ্রান্ত করেছে তাঁদের মতভিন্নতা। ইতিমধ্যে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমলা, যাঁদের অধিকাংশ ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত, দেশীয় পণ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমন একটি কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন যে আমি সেদিকেই বেশি মাত্রায় ঝুঁকে পড়ি। তবে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাপ্রসূত কয়েকটি কথা না বললে স্বস্তি পাচ্ছি না।
গত শতাব্দীর আশির দশকে আমরা ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই আমরা যারা যুক্ত ছিলাম, তাদের দৈনন্দিন সম্মিলনস্থল ছিল দুটি। দিনের বেলায় মধুর ক্যানটিন ও ডাকসু ভবন। আর রাতের বেলায় বুয়েটের অহসানউল্লাহ হলের ক্যানটিন ও ইউকসু ভবন। বুয়েটে তখন ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ এবং আরও দুয়েকটি সংগঠনের সরব ও উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। কয়েকটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান নেতারাও ছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী। পরবর্তীকালে তাঁদের প্রত্যেকে কর্মজীবনে সুনামের সঙ্গে সফল হয়েছেন। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনে সক্রিয়দের মধ্যে অনেকে বুয়েট, ডুয়েট, চুয়েট, রুয়েটে শিক্ষক হয়েছেন। অনেকে বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা-গবেষণা করে যশস্বী হয়েছেন। তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ছাত্ররাজনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। জাতি উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি।
অবশ্য এরপর ছাত্ররাজনীতিতে লাঠিয়ালিপনা, সন্ত্রাস-হত্যার পর্ব শুরু হয়। বুয়েটেও এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এ জন্য ছাত্ররাজনীতিকে দায়ী করা অসংগত। জাতীয় পর্যায়ের অপরাজনীতি আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতিকে ওই অবস্থানে নিয়ে গেছে। ফলে এখন সকল পর্যায়ের এবং সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী রাজনীতিবিমুখ।
ছাত্রদের বি-রাজনীতিকরণের এ কাজটি পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে করা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না এলে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতিবিমুখতা বন্ধ হবে না।
তবে রাজনীতিবিমুখতা যে আরেক ধরনের অপরাজনীতিচর্চার অপার সুযোগ সৃষ্টি করে, সে কথা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে। বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে এক জরিপের ফল উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানকার ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। সেখানে এ কথাও বলা হয়েছে যে হিযবুত তাহ্রীরের মতো একটি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বই তাঁরা স্বীকার করেন না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কথা বলছেন, তারা যে প্রবলভাবেই আছে, এমনকি তাঁদের আশপাশে কিংবা তাঁদের মধ্যেও থাকতে পারে, তা কি অস্বীকার করতে পারেন? শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে ওই সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীরই পোয়াবারো।
আরেকটি বিষয় হলো, যে শিক্ষার্থীরা আজ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট চাইছেন, আমি নিশ্চিত যে কর্মজীবনে তাঁদের রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে উপায় থাকবে না। তখন হয় তাঁরা রাজনীতিতে যুক্ত হবেন, না হলে রাজনীতির অসহায় শিকার হবেন। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। তবে ছাত্ররাজনীতিকে অবশ্যই হতে হবে সুস্থ ধারার। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ছাত্রসমাজের কল্যাণের অনুষঙ্গী। সেই ধারা পুনরুজ্জীবনের জন্য জাতীয় রাজনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
২.
এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খবর পোস্ট করেছেন। ‘পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন আছে কি’ শিরোনামের ওই খবরের সূত্র হিসেবে তিনি বিবিসির কথা উল্লেখ করেছেন। খবরের ভাষ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৭-২৮ লাখ টন, যার পুরোটাই বাংলাদেশের দেশীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার। ড. মজুমদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তাঁর মতে, বছরজুড়ে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলে কৃষক সঠিক দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। আর বাংলাদেশেই বছরে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
শফিউল আলম লিখেছেন, খবরটি পোস্ট করার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর বন্ধুদের, অর্থাৎ সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ আমলাদের মতামত শোনা। তাঁর সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সাবেক সচিবসহ অনেক আমলা (নিশ্চয়ই অন্যান্য পেশাজীবীও রয়েছেন) বিষয়টি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। এই মতামতগুলো বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। প্রত্যেকেই বিষয়টি সম্পর্কে কোনো না কোনো সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে উৎসাহিত হয়ে শফিউল আলম আরও মতামত আহ্বান করে বলেছেন, মতামতগুলো নিয়ে একটি সুন্দর গবেষণাপত্র হতে পারে, যার ওপর ভিত্তি করে সরকার পলিসি প্রণয়ন করতে পারে। বিষয়টিকে টেস্ট কেস হিসেবে তিনি সরকারের কাছে তুলে ধরবেন।
তাঁদের এই সব আলোচনা থেকে আমার প্রথমেই যেটা মনে হলো তা হচ্ছে, প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার এই ছোট্ট দেশে চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রকৃত চাহিদা ও সরবরাহের পরিসংখ্যান, প্রতিটি কৃষিপণ্যের মৌসুমি বৈশিষ্ট্য, কখন কোন পণ্যটি আমদানি করা প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন, এই মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের আমলাতন্ত্রের পরিপূর্ণ কোনো ধারণা নেই। সাবেক কিংবা বর্তমান কোনো পক্ষেরই নেই। ফলে তাঁরা যেটা করেন, সেটাকে বলা যায় ‘ফায়ার ফাইটিং’। যখন কোনো পণ্যের ঘাটতি বা সরবরাহে কমতি দেখা দেয়, তখনই কেবল পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রাণান্ত অথচ হাতুড়ে চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু বাজার একটি জটিল বিষয়।
মুক্তবাজারব্যবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ খুব কম। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সেটা সফলভাবে করতে হলে বিশেষায়িত জ্ঞানের পেশাজীবী দরকার। তার অভাবে কিংবা তেমন লোকদের কাজে না লাগানোয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। ফলে সরকার সমালোচিত হয়। মানুষের কষ্ট বাড়ে।
কয়েকটি মৌলিক বিষয় আমাদের জানা থাকা এবং মনে রাখা জরুরি। প্রথমত, ২০ কোটি মানুষের পূর্ণ চাহিদা পূরণ করার মতো ধান-চাল, তেলবীজ, নানা ধরনের ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, আদা-হলুদ-মরিচ, অন্যান্য মসলাপাতি এবং শাকসবজি উৎপাদন করা এই ছোট্ট ভূখণ্ডে সম্ভব নয়; বিশেষ করে যেখানে ভূমি ব্যবহারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যেটুকু আছে, সেটুকুও কেউ মানে না। দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্যের কিছু মৌসুমি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের সরবরাহ ব্যাহত হবে। কারণ মরিচ খেতে বৃষ্টির পানি জমলে গাছই মরে যায়। বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে হলে এই বৈশিষ্ট্যটি মনে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। তৃতীয়ত, যেকোনো কৃষিপণ্যের একটি মৌসুম শেষ এবং নতুন মৌসুম শুরুর সন্ধিক্ষণে বাজারে ওই পণ্যের সরবরাহ কমবেই। বাজার স্বাভাবিক রাখতে হলে প্রতিটি পণ্যের ওই সন্ধিক্ষণগুলোয় ওই নির্দিষ্ট পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতেই হবে। চতুর্থত, উৎপাদনকারী কৃষক থেকে শুরু করে শহর-বন্দর-নগরের ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা। বাজার ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে জটিল ও কঠিন কাজ এটি। কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে এটি করতেই হবে।
শফিউল আলমের পোস্ট করা খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাবেক ও বর্তমান আমলা বন্ধু এবং অন্যান্য পেশাজীবীর মতামত যদি এই বিষয়গুলোয় করণীয় নির্ধারণের নিশানা সরকারকে দিতে পারে, সেটি হবে এক যুগান্তকারী কাজ। তেমন একটি নিশানা আমাদের দেশের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আজকের লেখার বিষয়-ভাবনা ছিল বুয়েটে ছাত্র বি-রাজনীতি নিয়ে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার চেনা-জানা এত বেশি অগ্রজ-অনুজ গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন যে আমি কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়েছি। আমাকে আরও কিছুটা বিভ্রান্ত করেছে তাঁদের মতভিন্নতা। ইতিমধ্যে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমলা, যাঁদের অধিকাংশ ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত, দেশীয় পণ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমন একটি কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন যে আমি সেদিকেই বেশি মাত্রায় ঝুঁকে পড়ি। তবে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাপ্রসূত কয়েকটি কথা না বললে স্বস্তি পাচ্ছি না।
গত শতাব্দীর আশির দশকে আমরা ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই আমরা যারা যুক্ত ছিলাম, তাদের দৈনন্দিন সম্মিলনস্থল ছিল দুটি। দিনের বেলায় মধুর ক্যানটিন ও ডাকসু ভবন। আর রাতের বেলায় বুয়েটের অহসানউল্লাহ হলের ক্যানটিন ও ইউকসু ভবন। বুয়েটে তখন ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ এবং আরও দুয়েকটি সংগঠনের সরব ও উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। কয়েকটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান নেতারাও ছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী। পরবর্তীকালে তাঁদের প্রত্যেকে কর্মজীবনে সুনামের সঙ্গে সফল হয়েছেন। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনে সক্রিয়দের মধ্যে অনেকে বুয়েট, ডুয়েট, চুয়েট, রুয়েটে শিক্ষক হয়েছেন। অনেকে বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা-গবেষণা করে যশস্বী হয়েছেন। তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ছাত্ররাজনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। জাতি উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি।
অবশ্য এরপর ছাত্ররাজনীতিতে লাঠিয়ালিপনা, সন্ত্রাস-হত্যার পর্ব শুরু হয়। বুয়েটেও এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এ জন্য ছাত্ররাজনীতিকে দায়ী করা অসংগত। জাতীয় পর্যায়ের অপরাজনীতি আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতিকে ওই অবস্থানে নিয়ে গেছে। ফলে এখন সকল পর্যায়ের এবং সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী রাজনীতিবিমুখ।
ছাত্রদের বি-রাজনীতিকরণের এ কাজটি পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে করা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না এলে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতিবিমুখতা বন্ধ হবে না।
তবে রাজনীতিবিমুখতা যে আরেক ধরনের অপরাজনীতিচর্চার অপার সুযোগ সৃষ্টি করে, সে কথা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে। বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে এক জরিপের ফল উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানকার ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। সেখানে এ কথাও বলা হয়েছে যে হিযবুত তাহ্রীরের মতো একটি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বই তাঁরা স্বীকার করেন না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কথা বলছেন, তারা যে প্রবলভাবেই আছে, এমনকি তাঁদের আশপাশে কিংবা তাঁদের মধ্যেও থাকতে পারে, তা কি অস্বীকার করতে পারেন? শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে ওই সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীরই পোয়াবারো।
আরেকটি বিষয় হলো, যে শিক্ষার্থীরা আজ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট চাইছেন, আমি নিশ্চিত যে কর্মজীবনে তাঁদের রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে উপায় থাকবে না। তখন হয় তাঁরা রাজনীতিতে যুক্ত হবেন, না হলে রাজনীতির অসহায় শিকার হবেন। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। তবে ছাত্ররাজনীতিকে অবশ্যই হতে হবে সুস্থ ধারার। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ছাত্রসমাজের কল্যাণের অনুষঙ্গী। সেই ধারা পুনরুজ্জীবনের জন্য জাতীয় রাজনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
২.
এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খবর পোস্ট করেছেন। ‘পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন আছে কি’ শিরোনামের ওই খবরের সূত্র হিসেবে তিনি বিবিসির কথা উল্লেখ করেছেন। খবরের ভাষ্য: বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৭-২৮ লাখ টন, যার পুরোটাই বাংলাদেশের দেশীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার। ড. মজুমদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তাঁর মতে, বছরজুড়ে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলে কৃষক সঠিক দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। আর বাংলাদেশেই বছরে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
শফিউল আলম লিখেছেন, খবরটি পোস্ট করার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর বন্ধুদের, অর্থাৎ সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ আমলাদের মতামত শোনা। তাঁর সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সাবেক সচিবসহ অনেক আমলা (নিশ্চয়ই অন্যান্য পেশাজীবীও রয়েছেন) বিষয়টি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। এই মতামতগুলো বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। প্রত্যেকেই বিষয়টি সম্পর্কে কোনো না কোনো সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে উৎসাহিত হয়ে শফিউল আলম আরও মতামত আহ্বান করে বলেছেন, মতামতগুলো নিয়ে একটি সুন্দর গবেষণাপত্র হতে পারে, যার ওপর ভিত্তি করে সরকার পলিসি প্রণয়ন করতে পারে। বিষয়টিকে টেস্ট কেস হিসেবে তিনি সরকারের কাছে তুলে ধরবেন।
তাঁদের এই সব আলোচনা থেকে আমার প্রথমেই যেটা মনে হলো তা হচ্ছে, প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার এই ছোট্ট দেশে চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রকৃত চাহিদা ও সরবরাহের পরিসংখ্যান, প্রতিটি কৃষিপণ্যের মৌসুমি বৈশিষ্ট্য, কখন কোন পণ্যটি আমদানি করা প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন, এই মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের আমলাতন্ত্রের পরিপূর্ণ কোনো ধারণা নেই। সাবেক কিংবা বর্তমান কোনো পক্ষেরই নেই। ফলে তাঁরা যেটা করেন, সেটাকে বলা যায় ‘ফায়ার ফাইটিং’। যখন কোনো পণ্যের ঘাটতি বা সরবরাহে কমতি দেখা দেয়, তখনই কেবল পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রাণান্ত অথচ হাতুড়ে চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু বাজার একটি জটিল বিষয়।
মুক্তবাজারব্যবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ খুব কম। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সেটা সফলভাবে করতে হলে বিশেষায়িত জ্ঞানের পেশাজীবী দরকার। তার অভাবে কিংবা তেমন লোকদের কাজে না লাগানোয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। ফলে সরকার সমালোচিত হয়। মানুষের কষ্ট বাড়ে।
কয়েকটি মৌলিক বিষয় আমাদের জানা থাকা এবং মনে রাখা জরুরি। প্রথমত, ২০ কোটি মানুষের পূর্ণ চাহিদা পূরণ করার মতো ধান-চাল, তেলবীজ, নানা ধরনের ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, আদা-হলুদ-মরিচ, অন্যান্য মসলাপাতি এবং শাকসবজি উৎপাদন করা এই ছোট্ট ভূখণ্ডে সম্ভব নয়; বিশেষ করে যেখানে ভূমি ব্যবহারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যেটুকু আছে, সেটুকুও কেউ মানে না। দ্বিতীয়ত, কৃষিপণ্যের কিছু মৌসুমি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের সরবরাহ ব্যাহত হবে। কারণ মরিচ খেতে বৃষ্টির পানি জমলে গাছই মরে যায়। বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে হলে এই বৈশিষ্ট্যটি মনে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। তৃতীয়ত, যেকোনো কৃষিপণ্যের একটি মৌসুম শেষ এবং নতুন মৌসুম শুরুর সন্ধিক্ষণে বাজারে ওই পণ্যের সরবরাহ কমবেই। বাজার স্বাভাবিক রাখতে হলে প্রতিটি পণ্যের ওই সন্ধিক্ষণগুলোয় ওই নির্দিষ্ট পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতেই হবে। চতুর্থত, উৎপাদনকারী কৃষক থেকে শুরু করে শহর-বন্দর-নগরের ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা। বাজার ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে জটিল ও কঠিন কাজ এটি। কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে এটি করতেই হবে।
শফিউল আলমের পোস্ট করা খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাবেক ও বর্তমান আমলা বন্ধু এবং অন্যান্য পেশাজীবীর মতামত যদি এই বিষয়গুলোয় করণীয় নির্ধারণের নিশানা সরকারকে দিতে পারে, সেটি হবে এক যুগান্তকারী কাজ। তেমন একটি নিশানা আমাদের দেশের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে