মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি বৈঠক দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা উপস্থিত সাংগঠনিক সম্পাদকদের অবহিত করেন। বিশ্ব পরিস্থিতি যথেষ্ট প্রতিকূলে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যথাসময়ে তেলের দাম কমিয়ে সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসার কথা তাঁদের জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দলের আন্দোলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলনে তিনি কিংবা সরকার ভীত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থানেও তিনি নেই—এ কথাও জানিয়ে দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে আশা করেন যে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটাই সমাধান দেখা যাবে। বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা, বৈশ্বিক জ্বালানি-সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তার ফলে অক্টোবরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সেটি হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলে পরিবহন, শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও কমে আসবে। সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতি সচেতন মহল দীর্ঘদিন থেকে আস্থাশীল—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে দলীয় সভাপতির আদেশ, নির্দেশ ও চাওয়া-পাওয়ার যথেষ্ট ব্যত্যয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যা যথেষ্ট হতাশার জন্ম দেয়। বিষয়টি সম্পর্কে শেখ হাসিনাও অবহিত বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সভায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচন উপলক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদকদের করণীয় নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যে তাঁর সেই আন্তরিকতার স্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।
শোক দিবস পালনের এক দিন আগে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় প্রধানের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য শুনে তিনি তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দেন। তিনি যেসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তা হচ্ছে: ১. আগামী ডিসেম্বরে দলের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন এবং দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করে দলে ভেড়ানো, ২. দলে গ্রুপিং না করারও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, ৩. সংসদ সদস্য ও নেতারা যাতে দলের ভেতরে পৃথক বলয় সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের সক্রিয় থাকা, ৪. সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে বেশি বেশি করে তুলে ধরা।
দলের সাংগঠনিক কমিটি প্রসঙ্গে বৈঠকে দলের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলার কমিটি ঢেলে সাজানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে দলীয় সভাপতি যেসব কমিটিতে গ্রুপিং ও দূরত্ব রয়েছে, সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন। এমনকি নেতা-কর্মীদের সতর্কভাবে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর স্বচ্ছ অবস্থান সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করে গৃহহীনদের তালিকা প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান।
বোঝাই যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলকে প্রস্তুত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সভাকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণত তিনি ছুটির দিনগুলোতে সাংগঠনিক সভা আহ্বান করেন। কিন্তু এ সভাটি তিনি সাপ্তাহিক কর্মদিবসের মধ্যেও সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বের করে দিয়েছেন, যা দলের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এবং কাজ সাধারণ এবং সচেতন মানুষের আস্থায় কোনো ধরনের দ্বিধা সৃষ্টি করেনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অনেকেই দলীয় সভাপতির নির্দেশনা সব সময় যথাযথভাবে পালন করছেন না। সে কারণেই বিভিন্ন জায়গায় দল এবং অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরে গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরা নানা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা দলের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পনেরোই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি পালনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে, সেটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু এমন দিনেও দলীয় সভাপতির চাওয়া-পাওয়াকে মোটেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়। নেত্রকোনায় জাতীয় শোক দিবসে কাঙালিভোজ আয়োজন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শোক দিবসে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫ জন। বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৬ আগস্ট নরসিংদীর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি, হাতাহাতি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। সর্বত্রই দলে দলীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দূরত্ব থাকায় জাতীয় দিবসগুলো মর্যাদাসহ পালনের আয়োজনও অনেক ক্ষেত্রে হয় না। যেসব স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলোতে মঞ্চে ওঠা, বসা এবং বক্তব্য দেওয়া নিয়ে থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দলীয় উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার তেমন কোনো আয়োজন থাকে না। থাকে না বক্তাদের আলোচনাতেও তেমন কোনো সারবত্তা। অথচ জাতীয় দিবসগুলোতে স্বনামধন্য আলোচকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দিবসটির ইতিহাস সম্পর্কে মানুষকে অবহিত ও সচেতন করার কাজটি করা গেলে অন্তত তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অনেক কিছু জানার সুযোগ পেত। তাতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভে অধিকতর সুযোগ ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি দলের তৃণমূল পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানহীন ও গতানুগতিক হয়। ফলে সেগুলো শিক্ষার্থীদের খুব বেশি আকৃষ্ট করতে পারে না। অনেক সময় আমন্ত্রিত প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সরকারিভাবে পালিত দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতে পারেন না। তাঁদের কারও কারও মধ্যে দিবসটি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব যেমন রয়েছে, আবার অনেকেই জাতির ইতিহাসের এ দিবসটিকে ধারণ করেন না, সেটিও তাঁদের যে শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) থেকে বোঝা যায়। প্রায়ই দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়োজিত সভায় উপস্থিত হন, বক্তব্য দেন। কিন্তু বক্তব্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিজেরাই খুব বেশি ধারণা রাখেন না—এটি খুবই স্পষ্ট। পনেরোই আগস্ট পালন করতে গিয়ে এবার আমাদের যে দুটো ভাইরাল বক্তব্য দেখতে হয়েছে, তা বোধ হয় আওয়ামী লীগের পদ-পদবিপ্রাপ্ত নেতাদের মান নিয়েও সন্দিহান করে তুলেছে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নাম বোধ হয় দেশের বেশির ভাগ মানুষই জানে না। গণমাধ্যমে তাঁকে কথা বলতেও খুব একটা দেখা যায় না। তিনি কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা উদ্ধৃত করাও শোভনীয় মনে করি না। যদিও বক্তব্যটিকে তিনি স্লিপ অব টাং বলে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু এমন স্লিপ অব টাং তো একজন প্রতিমন্ত্রী বা এই পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতার হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগের একজন নারীনেত্রীর প্রায় অনুরূপ একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, যা সচেতন মানুষের মনকে ভীষণভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উভয়ের বক্তব্যে খুশি হয়তো হতে পেরেছে পঁচাত্তরের ঘাতকেরা। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের এ ধরনের স্লিপ অব টাং হওয়ার মূলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়াশোনা ও চর্চার অভাব। এখন রাজনীতিতে অনেকেই তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজনীতির পাঠটি এতই দুর্বল যে তাঁদের হাতে রাজনীতি পিছলে যাওয়া ছাড়া টিকে থাকার কথা নয়। এটি মনে হয় অনেকটা বিশ্বব্যাপীই ঘটে চলছে। বিশ্বের সঙ্গে নাই-বা তুলনা করলাম। কিন্তু যাঁরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগী জাতীয় চার নেতার বক্তৃতা, বিবৃতি ও আলোচনার মানকে রপ্ত না করেই কীভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক-বাহক হবেন বলে দাবি করেন, তাঁরা আসলেই পদে পদে দলকে এভাবে বিতর্কিত করা ছাড়া অন্য কিছু উপহার দিতে পারেন না।
জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও একই অবস্থা বিরাজমান। বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচনে দলের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন হয়নি। আগামী সম্মেলনের আগে তা কতটা হবে, বলা মুশকিল। নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। সুতরাং সাংগঠনিক সম্পাদকেরা দলীয় সভাপতির যে বার্তা পেয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তাঁরা কতটা মাঠ চষে বেড়াবেন, প্রকৃত মেধাবী, যোগ্য, ত্যাগী এবং দলের জন্য প্রয়োজনীয় নেতা-কর্মীদের জড়ো করবেন, দলের সম্পদরূপে কাজে লাগাবেন, সেটি দেখার অপেক্ষায় দলকে থাকতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি বৈঠক দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা উপস্থিত সাংগঠনিক সম্পাদকদের অবহিত করেন। বিশ্ব পরিস্থিতি যথেষ্ট প্রতিকূলে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যথাসময়ে তেলের দাম কমিয়ে সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসার কথা তাঁদের জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দলের আন্দোলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলনে তিনি কিংবা সরকার ভীত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থানেও তিনি নেই—এ কথাও জানিয়ে দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে আশা করেন যে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটাই সমাধান দেখা যাবে। বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা, বৈশ্বিক জ্বালানি-সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তার ফলে অক্টোবরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সেটি হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলে পরিবহন, শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও কমে আসবে। সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতি সচেতন মহল দীর্ঘদিন থেকে আস্থাশীল—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে দলীয় সভাপতির আদেশ, নির্দেশ ও চাওয়া-পাওয়ার যথেষ্ট ব্যত্যয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যা যথেষ্ট হতাশার জন্ম দেয়। বিষয়টি সম্পর্কে শেখ হাসিনাও অবহিত বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সভায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচন উপলক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদকদের করণীয় নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যে তাঁর সেই আন্তরিকতার স্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।
শোক দিবস পালনের এক দিন আগে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় প্রধানের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য শুনে তিনি তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দেন। তিনি যেসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তা হচ্ছে: ১. আগামী ডিসেম্বরে দলের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন এবং দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করে দলে ভেড়ানো, ২. দলে গ্রুপিং না করারও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, ৩. সংসদ সদস্য ও নেতারা যাতে দলের ভেতরে পৃথক বলয় সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের সক্রিয় থাকা, ৪. সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে বেশি বেশি করে তুলে ধরা।
দলের সাংগঠনিক কমিটি প্রসঙ্গে বৈঠকে দলের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলার কমিটি ঢেলে সাজানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে দলীয় সভাপতি যেসব কমিটিতে গ্রুপিং ও দূরত্ব রয়েছে, সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন। এমনকি নেতা-কর্মীদের সতর্কভাবে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর স্বচ্ছ অবস্থান সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করে গৃহহীনদের তালিকা প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান।
বোঝাই যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলকে প্রস্তুত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সভাকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণত তিনি ছুটির দিনগুলোতে সাংগঠনিক সভা আহ্বান করেন। কিন্তু এ সভাটি তিনি সাপ্তাহিক কর্মদিবসের মধ্যেও সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বের করে দিয়েছেন, যা দলের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এবং কাজ সাধারণ এবং সচেতন মানুষের আস্থায় কোনো ধরনের দ্বিধা সৃষ্টি করেনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অনেকেই দলীয় সভাপতির নির্দেশনা সব সময় যথাযথভাবে পালন করছেন না। সে কারণেই বিভিন্ন জায়গায় দল এবং অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরে গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরা নানা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা দলের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পনেরোই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি পালনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে, সেটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু এমন দিনেও দলীয় সভাপতির চাওয়া-পাওয়াকে মোটেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়। নেত্রকোনায় জাতীয় শোক দিবসে কাঙালিভোজ আয়োজন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শোক দিবসে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫ জন। বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৬ আগস্ট নরসিংদীর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি, হাতাহাতি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। সর্বত্রই দলে দলীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দূরত্ব থাকায় জাতীয় দিবসগুলো মর্যাদাসহ পালনের আয়োজনও অনেক ক্ষেত্রে হয় না। যেসব স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলোতে মঞ্চে ওঠা, বসা এবং বক্তব্য দেওয়া নিয়ে থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দলীয় উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার তেমন কোনো আয়োজন থাকে না। থাকে না বক্তাদের আলোচনাতেও তেমন কোনো সারবত্তা। অথচ জাতীয় দিবসগুলোতে স্বনামধন্য আলোচকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দিবসটির ইতিহাস সম্পর্কে মানুষকে অবহিত ও সচেতন করার কাজটি করা গেলে অন্তত তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অনেক কিছু জানার সুযোগ পেত। তাতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভে অধিকতর সুযোগ ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি দলের তৃণমূল পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানহীন ও গতানুগতিক হয়। ফলে সেগুলো শিক্ষার্থীদের খুব বেশি আকৃষ্ট করতে পারে না। অনেক সময় আমন্ত্রিত প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সরকারিভাবে পালিত দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতে পারেন না। তাঁদের কারও কারও মধ্যে দিবসটি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব যেমন রয়েছে, আবার অনেকেই জাতির ইতিহাসের এ দিবসটিকে ধারণ করেন না, সেটিও তাঁদের যে শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) থেকে বোঝা যায়। প্রায়ই দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়োজিত সভায় উপস্থিত হন, বক্তব্য দেন। কিন্তু বক্তব্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিজেরাই খুব বেশি ধারণা রাখেন না—এটি খুবই স্পষ্ট। পনেরোই আগস্ট পালন করতে গিয়ে এবার আমাদের যে দুটো ভাইরাল বক্তব্য দেখতে হয়েছে, তা বোধ হয় আওয়ামী লীগের পদ-পদবিপ্রাপ্ত নেতাদের মান নিয়েও সন্দিহান করে তুলেছে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নাম বোধ হয় দেশের বেশির ভাগ মানুষই জানে না। গণমাধ্যমে তাঁকে কথা বলতেও খুব একটা দেখা যায় না। তিনি কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা উদ্ধৃত করাও শোভনীয় মনে করি না। যদিও বক্তব্যটিকে তিনি স্লিপ অব টাং বলে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু এমন স্লিপ অব টাং তো একজন প্রতিমন্ত্রী বা এই পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতার হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগের একজন নারীনেত্রীর প্রায় অনুরূপ একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, যা সচেতন মানুষের মনকে ভীষণভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উভয়ের বক্তব্যে খুশি হয়তো হতে পেরেছে পঁচাত্তরের ঘাতকেরা। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের এ ধরনের স্লিপ অব টাং হওয়ার মূলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়াশোনা ও চর্চার অভাব। এখন রাজনীতিতে অনেকেই তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজনীতির পাঠটি এতই দুর্বল যে তাঁদের হাতে রাজনীতি পিছলে যাওয়া ছাড়া টিকে থাকার কথা নয়। এটি মনে হয় অনেকটা বিশ্বব্যাপীই ঘটে চলছে। বিশ্বের সঙ্গে নাই-বা তুলনা করলাম। কিন্তু যাঁরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগী জাতীয় চার নেতার বক্তৃতা, বিবৃতি ও আলোচনার মানকে রপ্ত না করেই কীভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক-বাহক হবেন বলে দাবি করেন, তাঁরা আসলেই পদে পদে দলকে এভাবে বিতর্কিত করা ছাড়া অন্য কিছু উপহার দিতে পারেন না।
জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও একই অবস্থা বিরাজমান। বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচনে দলের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন হয়নি। আগামী সম্মেলনের আগে তা কতটা হবে, বলা মুশকিল। নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। সুতরাং সাংগঠনিক সম্পাদকেরা দলীয় সভাপতির যে বার্তা পেয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তাঁরা কতটা মাঠ চষে বেড়াবেন, প্রকৃত মেধাবী, যোগ্য, ত্যাগী এবং দলের জন্য প্রয়োজনীয় নেতা-কর্মীদের জড়ো করবেন, দলের সম্পদরূপে কাজে লাগাবেন, সেটি দেখার অপেক্ষায় দলকে থাকতে হবে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে