শ্রমিক মরলে মালিকের জরিমানা ৫০০ টাকা!

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১২
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ২১

চট্টগ্রামের ভারী শিল্প এলাকায় দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক নিহত হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবারকে দেওয়া হয় ২ লাখ টাকা। তবে দুর্ঘটনায় মালিকপক্ষের গাফিলতি থাকলে তাঁদের জরিমানা করা হয় মাত্র ৫০০ টাকা। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয় নিহত শ্রমিকের স্বজনদের। চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন রিরোলিং মিল, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও কলকারখানায় ২১১টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯১ জন। শুধুমাত্র রিরোলিং মিলগুলোতেই নিহত হয়েছেন ৮৯ শ্রমিক।

২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রম আদালত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হতো এক লাখ টাকা করে। ২০১৯ সাল থেকে তা বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়। তবে এই ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় নিহত শ্রমিকের স্বজনদের। স্ব স্ব জেলা থেকে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে চট্টগ্রামের শ্রমিক ক্ষতিপূরণ প্রথম শ্রম আদালত থেকে টাকা নিতে হয় তাঁদের। এ সময় আদালতে অন্তত ১০ ধরনের কাগজ জমা দিতে হয়। এ সবের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কর্তৃক মৃত্যুর সনদপত্র, ওয়ারিশ সনদপত্র ও প্রত্যয়ন পত্র, জবানবন্দি, মেডিকেল সার্টিফিকেট রয়েছে। কাগজপত্রসহ আবেদন করলে শুনানির পর ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া যায়।

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের নানিরাবাদ এলাকার সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মো. হামিদুল হক নামের এক শ্রমিক। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার আব্দুলপুর ইউনিয়নের হযরতপুর মণ্ডলপাড়া থেকে এসে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে যান তাঁর মা হাছিনা বেগম ও বাবা আবদুল হাকিম। এর আগে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মামলা হয়। পরের বছরের ১৯ জানুয়ারি তাঁরা দুই লাখ টাকার চেক নিয়ে যান।

অপর দিকে সীতাকুণ্ডের জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রণজিৎ সেন ও এর পরদিন পুলক সেন নামের দুজন শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম পরিচালক আলমাস শিমুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ২০০৬ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রথম শ্রম আদালতে ফৌজদারি মামলা হয়। এ মামলার রায়ে এদের চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁদের প্রত্যককে ৫০০ টাকা করে মোট দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নিহত শ্রমিক রণজিৎ সেনের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জে। ২০১৯ সালের ৭ মে নিহতের স্বজনেরা দুই লাখ টাকার চেক নেন।

সীতাকুণ্ড থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে জিপিএইস ইস্পাত কারখানাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আইনে বলা আছে কারখানায় দুর্ঘটনায় মারা গেলে দুই লাখ টাকা দেওয়ার। এ ছাড়া আমরা অন্য ভাবে নিহতের পরিবারকে সাহায্য করি।’

২০২০ সালের ৬ জুন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে বিএসআরএম রিরোলিং মিলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫ জন। এরা হলেন শ্রমিক আবুল কাসেম, গিয়াস উদ্দিন ও নুর মোহাম্মদ, টেকনিশিয়ান মো. মহি উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম। তাঁদের প্রত্যেকের মৃত্যুর ঘটনায় শ্রম আদালতে মামলা হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

নিহত আবুল কাসেমের শ্যালক ও মামলার বাদী মো. বজলুর রহিম বলেন, ‘এ মামলা করে আমরা অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি। আমরা শ্রম আদালত থেকে যে টাকা পেয়েছি তার বিরাট অংশ খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমার বোন তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন।’

বিএসআরএম কারখানার নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী আমরা দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত বলেন, আইনে কলকারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত