দখল হচ্ছে ‘শুকনা দীঘি’

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৫৩
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৩২

পুকুরটির নাম ‘শুকনা দীঘি’। তবে পানি থাকে সারা বছর। তাই প্রায় ৯ বিঘার বেশি আয়তনের পুকুরটি সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। শহরের জলাধার সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে আরও ২১টি পুকুরের সঙ্গে শুকনা দীঘিরও নাম পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। অথচ এখন এ শুকনা দীঘিই পড়েছে প্রাণসংকটে।

লম্বা আকারের পুকুরটি শহরের সপুরা এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে। এটির প্রকৃত মালিক কে বা কারা অথবা কতজন, তা নিশ্চিত করা কঠিন। এলাকার অনেকেই এটির মালিকানা দাবি করেন। এক পক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষের মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে একটু একটু করে সংরক্ষিত পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা চলছে।

অথচ পুকুর ভরাট না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। তা-ও গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বালু ফেলে আবার পুকুরটির একাংশ ভরাটের কাজ শুরু কর হয়। খবর পেয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের একটি দল গিয়ে ভরাট কাজে বাধা দেয়। তারপর সারা রাত পুলিশ পুকুরটি পাহারা দেয়। সকাল ৮টার দিকে পুকুরপাড় থেকে পুলিশ চলে যায়।

গতকাল শনিবার সকালে পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা থেকে ফুটপাতের টাইলসের ওপর দিয়ে ট্রাক গেছে পুকুরে বালু ফেলতে। ফলে ফুটপাতের টাইলস চুরমার হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, পুকুরের উত্তর পাড়ে ফুটপাতে এক ব্যক্তির চায়ের দোকান ছিল। রাতেই সেটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ট্রাক যাওয়ার রাস্তা করা হয়েছে। পুকুরের পূর্ব পাড়ের কিছু জায়গা কিছুদিন আগে ভরাট করে কলাগাছ লাগানো হয়েছে। সে স্থানটিতেও রাতে বালু ফেলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রাতে সোহরাব ও সুমন নামের দুই ব্যক্তি ভরাটের কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন রাসিকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন। এ পুকুরের কিছুটা অংশের মালিকানা দাবি করে থাকেন কাউন্সিলরের স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজা। তবে কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন দাবি করেন, পুকুরে তাঁদের কোনো মালিকানা নেই। তিনি নিজে পুকুরটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা কারণে পেরে উঠছেন না।

পুকুরটির ক্রেতাদের একজন হিসেবে নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীরও নাম পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শেলি নামের একজন আইনজীবীর কাছ থেকে আমরা ছয়জন পুকুরটি কিনেছিলাম। কিন্তু সেখানে কিছুই করতে পারছিলাম না। তাই আবার বেচে দিয়েছি। এখন পুকুর কে বা কারা ভরাট করছে তা বলতে পারব না।’

রাতে পুকুর ভরাট শুরু হলে হারুন-আর-রশিদ নামের এক ব্যক্তি পুলিশে খবর দেন। যাঁরা যাঁরা পুকুরের মালিকানা দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে আইনি লড়াই চালান তিনি। হারুন দাবি করেন, এ পুকুর তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি। তাঁদের বংশের অন্তত ১২ জন এর মালিক। কিন্তু তাঁরা পুকুর ভরাট করছেন না। অন্য একটি পক্ষ পুকুর ভরাট করছেন। তিনি আটকাচ্ছেন। এখন কাউন্সিলরের সহায়তায় সুমন ও সোহরাব পুকুর দখল করছেন। তবে এ ব্যাপারে জানার জন্য এ দুজনের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।

রাতভর পুকুর পাহারা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুর ভরাট এখন নিষিদ্ধ। তা-ও একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। দোষ পড়ছে পুলিশের ওপর। পুলিশ নাকি টাকা খেয়ে পুকুর ভরাটে বাধা দিচ্ছে না। এই বদনাম এড়াতে রাতভর পুকুরটি পাহারা দেওয়া হয়েছে। খবর পেলে শুকনা দীঘি তো বটেই, অন্য কোনো পুকুরও পুলিশ ভরাট করতে দেবে না।’

রাসিকের সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকার ২২টি পুকুর সংস্কার করে সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ পুকুরগুলোর কোনোটি সরকারি আবার কোনোটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ২২ পুকুরের তালিকায় শুকনা দীঘিও আছে। প্রকল্পটি পাস হলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানার পুকুরও অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু প্রকল্প এখনো পাস না হওয়ায় তাঁরা এ কাজে হাত দিতে পারছেন না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত