শহিদুল ইসলাম
হীরক রাজার দেশের ‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’ শাসকশ্রেণির মনের কথা। কিন্তু জ্ঞান অনুসন্ধান যে কত আনন্দের, তা ৮০ বছরে পা রেখে নতুন করে বুঝলাম। আমরা সবাই এত দিন দুই ধরনের বাস্তবতা বা রিয়েলিটির কথা জেনে এসেছি—অবজেক্টিভ রিয়েলিটি ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি।
আইনস্টাইন যখন সময়কে বস্তুর চতুর্থ ডাইমেনশন হিসেবে প্রমাণ করলেন, তখন আমরা অবাক ও নতুন একটি জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি ছাড়াও যে আরও একটি রিয়েলিটির অস্তিত্ব আছে, সে সম্বন্ধে তেমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান আমাদের ছিল না।
ইয়ুভাল নোয়া হারারি তাঁর ‘হোমো দিউস’ বইতে অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে তৃতীয় একটি রিয়েলিটির কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। যেসব কথা উদাহরণসহযোগে বলেছেন, তা নতুন নয়। আমরা সবাই জানি। কিন্তু তিনি সেই তৃতীয় রিয়েলিটিকে একটি শব্দের মাঝে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা নতুন। তাই এই ৮০ বছর বয়সে সেটা পড়ে যুবকের মতো আত্মহারা হয়ে গেছি! এখানেই সরাসরি বই পড়ার অগ্রাধিকার কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। নতুন বইয়ের নতুন চিন্তা বয়সকে ছাপিয়ে যায়।
আমরা জানি, হারারির ভাষায়, ‘ইন অবজেক্টিভ রিয়েলিটি, থিংগস এক্সিস্ট ইনডিপেন্ডেন্টলি অব আওয়ার বিলিফস অ্যান্ড ফিলিংস... সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি, ইন কন্ট্রাস্ট, ডিপেন্ডস অন মাই পারসোনাল বিলিফস অ্যান্ড ফিলিংস।’ তিনি তৃতীয় যে রিয়েলিটির কথা বলছেন, তার নাম ‘ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি’, যা আছে বলে আমরা শক্তভাবে বিশ্বাস করি, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তার কোনো অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, এ রকম কিছু বস্তুহীন বাস্তবতার নাম হারারি দিয়েছেন ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি। বাংলায় বলা যায় আন্তবিষয়ী বাস্তবতা। যেমন—‘অর্থ’। অর্থের কোনো অবজেক্টিভ মূল্য নেই।
কিন্তু কোটি কোটি মানুষ যখন বিশ্বাস করে, তখন সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য, মদ, কাপড়, গয়না কেনা যায়। কিন্তু রাষ্ট্র যদি সেগুলো বাতিল ঘোষণা করে, তখন কেউ তা দিয়ে একটা শিঙাড়াও দেবে না। এই আরোপিত মূল্যকে তিনি ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি বলছেন।
স্বাধীনতার পর যখন পাকিস্তানি টাকা নিষিদ্ধ করা হয়, তখন আমার এবং আরও অনেকের বহু টাকা সাদা কাগজে পরিণত হয়। আজ যে ক্রেডিট কার্ডে সবাই বাজার করে, সমস্ত সুপারমার্কেট যদি সেগুলো গ্রহণে অস্বীকার করে, তাহলে ক্রেডিট কার্ডের অস্তিত্ব সত্ত্বেও তা মূল্যহীন।
তেমনি একসময় বাতাসে ইথারে বিশ্বাস ছিল সর্বজনীন। কিন্তু ১৭৭২ সালে অক্সিজেন আবিষ্কারের পর ইথারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। তেমনি নিউটনের আগেও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপস্থিতি থাকলেও তা আবিষ্কারের জন্য নিউটনকে সম্মান দেওয়া হয়। তেমনি আত্মা। বহু মানুষ, এমনকি ডাক্তাররা পর্যন্ত আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কিন্তু বিজ্ঞান আজ আত্মার ধারণা সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছে।
তেমনি আজ উনিশ শতকের গণতন্ত্র অচল মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। এমনি অনেক উদাহরণের সঙ্গে হারারি যুক্তিযুক্তভাবে ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটির অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। যখন মানুষ বিশ্বাস করত যে সূর্যই পৃথিবীর চারধারে ঘোরে, তখন সেটাই ছিল সেই সময়ের ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি।
হারারি এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, সব সময় অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটির সঙ্গে ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটিসহ অবস্থান করে। আজকের জন্যও তা সত্য। পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এমন কিছুতে বিশ্বাস করে, যার কোনো বাস্তব উপস্থিতি তারা প্রমাণ করতে পারবে না। এটাই অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটির মধ্যবর্তী স্তর।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
হীরক রাজার দেশের ‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’ শাসকশ্রেণির মনের কথা। কিন্তু জ্ঞান অনুসন্ধান যে কত আনন্দের, তা ৮০ বছরে পা রেখে নতুন করে বুঝলাম। আমরা সবাই এত দিন দুই ধরনের বাস্তবতা বা রিয়েলিটির কথা জেনে এসেছি—অবজেক্টিভ রিয়েলিটি ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি।
আইনস্টাইন যখন সময়কে বস্তুর চতুর্থ ডাইমেনশন হিসেবে প্রমাণ করলেন, তখন আমরা অবাক ও নতুন একটি জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি ছাড়াও যে আরও একটি রিয়েলিটির অস্তিত্ব আছে, সে সম্বন্ধে তেমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান আমাদের ছিল না।
ইয়ুভাল নোয়া হারারি তাঁর ‘হোমো দিউস’ বইতে অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে তৃতীয় একটি রিয়েলিটির কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। যেসব কথা উদাহরণসহযোগে বলেছেন, তা নতুন নয়। আমরা সবাই জানি। কিন্তু তিনি সেই তৃতীয় রিয়েলিটিকে একটি শব্দের মাঝে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা নতুন। তাই এই ৮০ বছর বয়সে সেটা পড়ে যুবকের মতো আত্মহারা হয়ে গেছি! এখানেই সরাসরি বই পড়ার অগ্রাধিকার কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। নতুন বইয়ের নতুন চিন্তা বয়সকে ছাপিয়ে যায়।
আমরা জানি, হারারির ভাষায়, ‘ইন অবজেক্টিভ রিয়েলিটি, থিংগস এক্সিস্ট ইনডিপেন্ডেন্টলি অব আওয়ার বিলিফস অ্যান্ড ফিলিংস... সাবজেক্টিভ রিয়েলিটি, ইন কন্ট্রাস্ট, ডিপেন্ডস অন মাই পারসোনাল বিলিফস অ্যান্ড ফিলিংস।’ তিনি তৃতীয় যে রিয়েলিটির কথা বলছেন, তার নাম ‘ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি’, যা আছে বলে আমরা শক্তভাবে বিশ্বাস করি, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তার কোনো অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, এ রকম কিছু বস্তুহীন বাস্তবতার নাম হারারি দিয়েছেন ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি। বাংলায় বলা যায় আন্তবিষয়ী বাস্তবতা। যেমন—‘অর্থ’। অর্থের কোনো অবজেক্টিভ মূল্য নেই।
কিন্তু কোটি কোটি মানুষ যখন বিশ্বাস করে, তখন সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য, মদ, কাপড়, গয়না কেনা যায়। কিন্তু রাষ্ট্র যদি সেগুলো বাতিল ঘোষণা করে, তখন কেউ তা দিয়ে একটা শিঙাড়াও দেবে না। এই আরোপিত মূল্যকে তিনি ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি বলছেন।
স্বাধীনতার পর যখন পাকিস্তানি টাকা নিষিদ্ধ করা হয়, তখন আমার এবং আরও অনেকের বহু টাকা সাদা কাগজে পরিণত হয়। আজ যে ক্রেডিট কার্ডে সবাই বাজার করে, সমস্ত সুপারমার্কেট যদি সেগুলো গ্রহণে অস্বীকার করে, তাহলে ক্রেডিট কার্ডের অস্তিত্ব সত্ত্বেও তা মূল্যহীন।
তেমনি একসময় বাতাসে ইথারে বিশ্বাস ছিল সর্বজনীন। কিন্তু ১৭৭২ সালে অক্সিজেন আবিষ্কারের পর ইথারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। তেমনি নিউটনের আগেও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপস্থিতি থাকলেও তা আবিষ্কারের জন্য নিউটনকে সম্মান দেওয়া হয়। তেমনি আত্মা। বহু মানুষ, এমনকি ডাক্তাররা পর্যন্ত আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কিন্তু বিজ্ঞান আজ আত্মার ধারণা সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছে।
তেমনি আজ উনিশ শতকের গণতন্ত্র অচল মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। এমনি অনেক উদাহরণের সঙ্গে হারারি যুক্তিযুক্তভাবে ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটির অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। যখন মানুষ বিশ্বাস করত যে সূর্যই পৃথিবীর চারধারে ঘোরে, তখন সেটাই ছিল সেই সময়ের ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটি।
হারারি এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, সব সময় অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটির সঙ্গে ইন্টারসাবজেক্ট রিয়েলিটিসহ অবস্থান করে। আজকের জন্যও তা সত্য। পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এমন কিছুতে বিশ্বাস করে, যার কোনো বাস্তব উপস্থিতি তারা প্রমাণ করতে পারবে না। এটাই অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ রিয়েলিটির মধ্যবর্তী স্তর।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
২ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪