খরচ কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৯
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৫

তারাগঞ্জের জগদীশপুর গ্রামের ফাত্তাজুল ইসলামকে শ্রমিক ব্যবহার করে এক একর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণে খরচ করতে হতো ৬ হাজার টাকা। সেই জমিতে এবার তাঁর ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। চারা রোপণের যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর খরচ এই দুই-তৃতীয়াংশ কমে এসেছে।

সম্প্রতি জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের চারা রোপণের সময় আলাপকালে কৃষক ফাত্তাজুল এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নতুন জাতের ধান, নতুন পদ্ধতিতে রোপণ করলাম। খরচ হলো তিন ভাগের এক ভাগ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তাদের দেওয়া বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান ট্রে পদ্ধতিতে চারা করে তা মেশিনের মাধ্যমে রোপণ করলাম। এতে রোপণ খুব দ্রুত সময়ে হলো। একরে ৪ হাজার টাকা বাঁচল।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জে এবার বীজের জন্য বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান সাত একর জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্দেশ্যে ট্রে পদ্ধতিতে বীজ বপন করে চারা যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করা হচ্ছে। এতে খরচ অনেক কম। ফলে কৃষকেরা যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণে ঝুঁকছেন। স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে শ্রমিক স্বল্পতার সমস্যা মোকাবিলা করে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ। আধুনিক উফশী ধানের বৈশিষ্ট্য থাকা এ ধান সোনালি রঙের, চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। এতে জিংকের পরিমাণ রয়েছে প্রতি কেজিতে ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া চালে অ্যামাইলোজ ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ রয়েছে। এ ধান নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। চালের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো এবং ভাত ঝরঝরে।

কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০-এর পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা হয় ১০১ সেন্টিমিটার। জীবনকাল ১৪৮ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরে আট টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে তেরমাইল মাঠে পাঁচ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের প্রদর্শনী খেত করা হয়েছে। সেখানে কথা হয় জগদীশপুর গ্রামের আরেক কৃষক ছকিমুদ্দিনের সঙ্গে।

ছকিমুদ্দিন বলেন, ‘কৃষকেরা যত দিন আবাদের খরচ কমার পাবার নেয়, তত দিন ফসল ফলে লাভ হবার নেয়। এইবার সরকার থাকি বঙ্গবন্ধুর নামের ধানের বীজ দিছে। তাক কৃষি অফিসারগুলা দাঁড়ে থাকি যত্ন করে নিছে। অ্যালা গাড়ি দিয়া ধান নাগাইনো। কিষান কম নাগিল। অর্ধেক টাকাতে ধান গাড়া হইল। এমতোন সুবিধা থাকলে হামার কৃষকের কোনো দিন লোকসান হবার নেয়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম জানান, বঙ্গবন্ধু-১০০ সম্পূর্ণ নতুন জাতের ধান। সারা দেশে এ বছর মাঠ পর্যায়ে এ ধানের চাষ শুরু হয়েছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি জিংক, প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ। উপজেলায় সাত একর জমিতে এ ধানের চাষ হচ্ছে। বীজ-সারসহ কৃষকদের সব রকম সহায়তা দিতে কৃষি বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।

ঊর্মি তাবাসসুম আরও বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করলে কৃষকের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এভাবে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো এবং ধান কাটা সহজ হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত