Ajker Patrika

এখনো টিকা পায়নি ৫০ লাখ শিশু

আজাদুল আদনান, ঢাকা
এখনো টিকা পায়নি ৫০ লাখ শিশু

দেশে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের দুই কোটির বেশি শিশুকে নভেল করোনাভাইরাস-প্রতিরোধী টিকার আওতায় আনার কার্যক্রমে গতি কম। গত ১২ আগস্ট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে জেলা-উপজেলা সদরে, এমনকি কিছু গ্রামাঞ্চলেও। লক্ষ্য ছিল আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষার আগে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সব শিশুর প্রথম ডোজের টিকাদান সেরে ফেলা। কিন্তু তৃতীয় সপ্তাহেও সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৫-১১ বছর বয়সী ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৩১০ শিশু টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ লাখ ৮১ হাজার ২৪৫ শিশু। টিকার আওতার বাইরে আরও প্রায় ৫০ লাখ শিশু।

বিভিন্ন জেলা সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বড় সমস্যা কেন্দ্রের দূরত্ব। ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী এই শিশুদের পক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে টিকা নেওয়া কষ্টকর। এতে অনেক শিশু অসুস্থও হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নিবন্ধনে জটিলতার পাশাপাশি সংক্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক অভিভাবকের অনাগ্রহও আছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশনস) মনীষ চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্র দূরে হওয়ায় কিছু অভিভাবক শিশুদের টিকা দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এ জন্য পরীক্ষার আগেই ওই শিশুদের প্রথম ডোজ এবং পরীক্ষার পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে চায় সরকার। কিন্তু সরকারের সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় দুই শিফট মিলে প্রাথমিকে ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী। কার্যক্রম শুরু হওয়ার দুই মাস পরও টিকাদান শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ১৩ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়। খিলগাঁওয়ের লার্নিং পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকে পড়ুয়া ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা জানান, বয়স্করা ভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে নিতে পারলেও বাচ্চারা ভয় পায়, অনেকে অসুস্থ হয়ে যায়। অভিভাবককে সঙ্গে থাকতেই হয়। তাই টিকা নিজ প্রতিষ্ঠানে দিলে ভালো হতো।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুল আলম বলেন, যাতায়াত জটিলতা এবং পূজার দীর্ঘ ছুটি থাকায় ২৫ অক্টোবর টিকাদানের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তিনটি শাখার শিক্ষার্থীদের টিকাদানের জন্য মতিঝিল শাখা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেভাবে ঠিক করেছে, আমরা সেভাবেই দিচ্ছি।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১০ টি। গত ১২ অক্টোবর সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলা সদরের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেলেও গ্রামাঞ্চলের বড় অংশই এখনো বাকি বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শিশুদের টিকাদানের বিষয়টি শুরু থেকেই আরও সহজ করার দাবি ছিল। এখন প্রতিটি স্কুলে গিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোকবলের সংকটের কারণে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব বলে আশা করছি।’

উপজেলার জিরানী ইউনিয়নের চরকাটিহারী সরকারি প্রাথমিকের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহম্মদ আরব আলী বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিকা নিয়েছে। বাকি শিশুদের না নেওয়ার বড় কারণ অভিভাবকদের অনীহা।’

জাতীয় টিকা বিতরণ কর্মসূচির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রাথমিকের শিশুদের টিকাদান জোরেশোরেই চলছে। পূজার ছুটি ও মাঝে ভ্যাকসিনের একটি শিডিউল দেরিতে আসায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে সেগুলোও এসেছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুদের টিকাদানের বিষয়টি একটু জটিল। খুব সহজে যাতে তারা টিকাটা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আগে অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিষয়টি বোঝাতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত