বিবাহিত ও অছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি

মুলাদী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৭
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৫৪

মুলাদীতে বিবাহিত ও অছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূলের নেতারা। কয়েকটি ইউনিয়নে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পকেটে কমিটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনিয়মের অভিযোগ থাকায় ইতিমধ্যে বাটামারা ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গাছুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই অনিয়ম থাকায় অন্যান্য ইউনিয়ন কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও বিব্রত হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব স্বাক্ষরিত ৭টি ইউনিয়ন ছাত্রদলের নতুন কমিটি প্রকাশ করা হয়। এরপরই ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। উপজেলার কয়েকজন সাবেক ছাত্রদল নেতার যোগসাজশে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।

সফিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আওলাদ হোসেন রনিকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সরকারি শামছুর রহমান কলেজ ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি এলাকায় থাকেন না, ঢাকায় চাকরি করেন। তাঁর ছাত্রত্ব নেই, তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ রাখেন না। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হলে ত্যাগী নেতারা কমিটিতে স্থান পেতেন।

একই ইউনিয়নে ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক বিল্লাল সিকদার বলেন, ‘যারা ১৪ বছর ধরে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তাঁদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে এনে একটি ভুয়া কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির ৬-৭ জন নেতা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।’

গাছুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী হাসিবুর রহমান বলেন, ‘জহিরুল ইসলাম দিপুকে সভাপতি এবং মো. সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে গাছুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা দুজনেই বিবাহিত। ইতিমধ্যে জহিরুল ইসলাম দিপুকে জেলা ছাত্রদলের নেতারা অব্যাহতি দিয়েছেন। কিন্তু সুজনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

নাজিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আরাফাত রহমান বলেন, ‘ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠনে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন উপজেলার নেতারা। টাকা দিতে না পারায় সহসভাপতি পদে রাখা হয়েছে আমাকে। ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও ইমরান নামের একজনকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পদে বসানো হয়েছে। উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব কারও সঙ্গে সমন্বয় না করেই নামমাত্র একটি কমিটি করা হয়েছে।’

চরকালেখান ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আল আমিন বলেন, ‘ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল হোসেন এবং সহসভাপতি নাজমুল হোসেন বিবাহিত এবং লেখাপড়া করেন না। তাঁদের দিয়ে কমিটি গঠন করে উপজেলা ছাত্রদল নেতারা অনিয়ম করেছেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন ঢালী সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব জুলফিকার আহমেদ বিল্লাল জানান, কমিটি গঠনে টাকার লেনদেন হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটি করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু বলেন, ‘মুলাদী উপজেলা ছাত্রদলের ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি জেনেছি। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বাটামারা ইউনিয়ন কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত