স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পণ্য পরিবহনে ভাড়ার তালিকা নির্দিষ্ট হয়নি চট্টগ্রামে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না। পরিবহন কোম্পানিগুলোর কথিত এজেন্টদের নির্ধারিত ভাড়ায় বন্দর থেকে দেশের নানা স্থানে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে সব ধরনের পণ্যের খরচ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা এই মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের হাতে এক রকম জিম্মি।

এই মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতিদিন দিনের নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রামের কদমতলী, নিমতলা ও সল্ট গোলা ক্রসিং এলাকায় সমবেত হন। তাঁরাই নির্ধারণ করেন কাভার্ড ভ্যান, লরি ও ট্রাকের ভাড়া। কদমতলীতে গেলে মিলবে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক। নিমতলা ও মাঝিরঘাটে খোলা লোকাল ট্রাক এবং সল্টগোলা মসজিদ মার্কেট এলাকায় গেলে মিলবে লরি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই জায়গাগুলো থাকে জমজমাট। এখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্ধারিত ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম নগরীর সল্ট গোলা এলাকার মেসার্স সোনার বাংলা লজিস্টিক সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী হোসাইন আহাম্মদ লিটন বলেন, পণ্য পরিবহনের ভাড়ার নির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। প্রতিদিনের বাজার অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। বন্দরে পণ্য ডেলিভারি বেশি হলে গাড়ি ভাড়া বেড়ে যায়। কম থাকলে গাড়ি ভাড়াও কমে।

বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহাম্মদ জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ বা দেশের অন্যান্য এলাকায় পণ্য পরিবহনের নির্ধারিত কোনো ভাড়া নেই। দৈনিক বাজারের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হয়।

সম্প্রতি তাঁরা ভাড়া বাড়ানোর যে দাবি তুলেছেন, তা কিসের ভিত্তিতে জানতে চাইলে জাফর আহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের কিছু কোম্পানির সঙ্গে নির্ধারিত চুক্তি আছে। সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।’

এ সময় তিনি আরও জানান, আগামী সোমবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর সেতু ভবনে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁদের সংগঠনের সভা আছে। সেখানে পণ্য পরিবহন ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় প্রতিদিন পরিবহন মালিকদের ইচ্ছামতো ভাড়া গুনতে হয়। চট্টগ্রামে এমনিতেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের থেকে ভাড়া অনেক বেশি। অনেক সময় বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে উচ্চ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।

এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের অফডকে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। ফলে পোশাকশিল্পে ব্যয় আরও বেড়েছে।

ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট মেসার্স মিলফা বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী মো. হাসান মুরাদ বলেন, ‘পণ্য পরিবহনের ভাড়া নির্ধারিত হয় প্রতিদিনের বাজার থেকে। আমাদের সে হিসেবে পরিবহন ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।’

এসব বিষয় স্বীকার করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্। তিনি বলেন, মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে পরিবহন ভাড়া নির্ধারিত হয়।