ত্রাণ পৌঁছাক দুর্গম এলাকায়

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিন দশকে এই অঞ্চলে এ রকম বন্যা হয়নি। মূলত প্রতিবছর উত্তরবঙ্গসহ দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়।

এই অঞ্চলে বন্যা হওয়ার তেমন রেকর্ড নেই। কিন্তু দেশের পূর্ব সীমান্তের ১২ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যা যে তাণ্ডব তৈরি করেছে, তা এককথায় ভয়াবহ। বন্যার তোড়ে বহু ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, গাছপালা, গবাদিপশু ও শস্য ভেসে গেছে। বন্যায় ভেসে যাওয়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি রিকশাওয়ালা পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এর আগে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা ত্রাণের জন্য দুর্গত মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখেছি। এবার আমরা এর উল্টো চিত্র দেখতে পেলাম।

দেশে চলমান বন্যায় ১২ জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যখানে। বন্যাদুর্গত অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছালেও, সেখানকার প্রান্তিক পর্যায়ে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। মূলত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের আশপাশের কেউ কেউ কয়েক দফা ত্রাণ পেলেও, দুর্গম এলাকার অনেকে কিছুই পাচ্ছে না। লাখো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তারা বাড়ির ছাদে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। এসব মানুষ খাওয়ার জন্য কিছুই পাচ্ছে না। ত্রাণ না পেয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা শহর বা বড় সড়কের কাছে অবস্থান করছে, তারাই বেশি পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। দুর্গম এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।

মূলত স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ যাচ্ছে, সেই সব ত্রাণ বিতরণে একটা স্থানীয় সেল থাকতে হবে। সেই সেলই নির্ধারণ করবে, কোথায় কোথায় ত্রাণ পৌঁছাতে হবে। তাহলে সমবণ্টন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বন্যায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব স্বেচ্ছাসেবক দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন, তাঁদের কারোর ওই সব এলাকা সম্পর্কে হয়তো ধারণা নেই। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণ পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা মোকাবিলায় সমন্বয়ের কাজটি যথাযথভাবে করতে হবে। আবার অনেক স্বেচ্ছাসেবী যাঁরা দুর্গত এলাকায় গেছেন উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ কার্যক্রমে, তাঁদেরও নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

এখন স্থানীয় প্রশাসনেরই ত্রাণ কার্যক্রম সুসমভাবে বণ্টর করতে হবে, যাতে বন্যাকবলিত মানুষ ত্রাণসহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত