আজকের পত্রিকা ডেস্ক
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু হবে আর কয়েক দিন পরেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। বেশির ভাগ যাত্রাই হবে সড়কপথে।প্রতিবারই কোনো না কোনো মহাসড়কে যানজটের কারণে আনন্দযাত্রা হয়ে ওঠে ভোগান্তির। টঙ্গীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, পদ্মাসহ বিভিন্ন বড় সেতুর টোল প্লাজায় ধীরগতি, বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশের অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বিভিন্ন মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র বাস থামানো, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপসহ বিভিন্ন কারণে এবারও সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। যানজটের দুর্ভোগ মাথায় রেখেই রওনা দিতে হবে তাঁদের।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করা নিয়ে গতকাল রোববার মতবিনিময় সভাতেও পদ্মা সেতুসহ বড় সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতির বিষয়টি উঠে আসে। সভায় সেতুসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুতে অটোমেটিক টোল আদায়ের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে তা ঈদের আগে সম্ভব নয়। ঈদে সেতুর ছয়টি টোল প্লাজার পাশাপাশি একটি জরুরি বুথ চালু করা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও আরও দুটি টোল বুথ করা হবে। সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কে দায়িত্ব পালনকারী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ঈদযাত্রা সামনে রেখে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন মহাসড়ক ঘুরে দেখেছেন। মহাসড়কগুলোর অবস্থা ও যানজটের সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন মহাসড়কে ভোগান্তির সংশয় থাকলেও ব্যতিক্রম হতে পারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান চওড়া করায় যানজটের তেমন আশঙ্কা নেই।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগ থাকছেই
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করে ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য এবারও ভোগান্তির মুক্তির তেমন সম্ভাবনা নেই। এর প্রধান কারণ চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটির কাজের কারণে টঙ্গীতে মহাসড়কের অনেক অংশ সরু হয়ে কার্যত এক লেন হয়ে গেছে।টঙ্গী থেকে টঙ্গী বিসিক এলাকা পর্যন্ত অংশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। অনেক অংশে কার্পেটিং হয়নি। যানবাহনগুলোকে চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে স্বাভাবিক সময়েই তীব্র যানজট থাকছে। ঈদযাত্রায় বাড়তি যানবাহনের চাপে তা আরও দীর্ঘ হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই মহাসড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি ও উত্তরাঞ্চলের ২৩ জেলার যানবাহন চলে। এই মহাসড়কে রাজধানী থেকে তুরাগ সেতুর দুই লেন দিয়ে যানবাহন টঙ্গীতে ঢুকছে। কিন্তু টঙ্গী থেকে এক লেনে ঢাকায় যাওয়ায় ওই লেনে ধীরগতির কারণে যানজট লেগে আছে। বাটার সামনে ফ্লাইওভার, আজমপুর ফ্লাইওভারের সামনে যানজট লেগে থাকছে। এ ছাড়া মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থান সরু হয়ে পড়েছে। রয়েছে খানাখন্দ।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ বিআরটি কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগির এ রাস্তার সংকট দূর করা সম্ভব নয়। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শিগগির সমস্যা কাটবে না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
দুই লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে তীব্র যানজটে পড়তে হয় ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড এই যানজটের অন্যতম কারণ। মহাসড়কটির নারায়ণগঞ্জ অংশের ২৫ কিলোমিটারে সরেজমিন দেখা যায়, কাঁচপুর মোড়ে রাস্তা আটকে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। তারাব বিশ্বরোড মোড় ঘুরতে বেশি সময় নিচ্ছে যানবাহনগুলো। রূপসী মোড়ে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে অবৈধ লেগুনাস্ট্যান্ডের কারণে। বরপা মোড়েও আছে স্ট্যান্ড, সড়কেও খানাখন্দ। ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে বাজার ও লোকাল বাসের চাপে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। ঢাকা-সিলেট পথের বাসের চালক নাবিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারাব বিশ্বরোড আর ভুলতা অংশে যানজট বেশি হয়। এতে অনেক সময় চলে যায়। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দুই লেন হওয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। আমরা এবার বেশ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করেছি। কেউ অনিয়ম করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও জটের শঙ্কা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে অন্তত চারটি স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এই অংশে বছরের বেশির ভাগ সময়ই যানজট থাকে। শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া এবং মেঘনা টোল প্লাজায় এবার ঈদযাত্রায় যানজট আরও তীব্র হতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ অংশের ওপর দিয়ে অন্তত ১৮ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। ঈদযাত্রার শুরুর দিকে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার। পরে আরও বাড়ে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশ নিয়েই ঈদযাত্রায় দুশ্চিন্তা। এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটির ৬০ কিলোমিটার অংশ ইতিমধ্যে ছয় লেনে উন্নীত করায় যানজটের আশঙ্কা নেই। তবে এলেঙ্গার পর মহাসড়ক দুই লেনের হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে জটও বাড়তে পারে। এ ছাড়া এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে চলমান উন্নয়নকাজও ঈদে যানজট বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এলেঙ্গায় সড়ক উন্নয়নকাজ করা আবদুল মোনেম কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মিজান সারোয়ার বলেন, ঈদের আগেই এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত চার লেনের ১ হাজার ২০০ মিটার কাজ শেষ করা হবে। এতে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমে আসবে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সমন্বয় সভা হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক
ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা জানালেন এই পথে চলাচলকারী বাসচালক ও যাত্রীরা। ইতিমধ্যে এই অংশের ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে, যা সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের নয়টি জেলামুখী মানুষকে ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ঈদের সময় যানবাহনের চাপ অবশ্যই বাড়বে। তা ছাড়া, টোল আদায়েও সময় লাগে। তবে ব্যবস্থাপনা ভালো করা গেলে যানজট কমে আসবে।
শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক সাব্বির হোসেন বলেন, চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত মহাসড়কে কাজ ধীরগতিতে চলছে। এই গতির কাজে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে বগুড়ার চান্দাইকোনা বাজারের পশ্চিম পাশের দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব পাশের দুই লেনের কাজও শেষ হবে।’
পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে বর্তমানে ছয়টি করে মোট ১২টি টোল বুথ রয়েছে। তবে সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি রয়েছে। এ কারণে প্রায়ই সেতুর দুই প্রান্তে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এই জটও দীর্ঘ করতে পারে। যা ভোগান্তিতে ফেলবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলামুখী যাত্রীদের। মাদারীপুর পরিবহনের সুপারভাইজার বিপুল ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় বুথের সংখ্যা কম হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। ঈদে বুথের সংখ্যা বাড়ানো না গেলে যানজটে ভোগান্তি বাড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক মানসম্মত নয়। যানজটের প্রধান হটস্পট হচ্ছে মোড়। ওখান থেকেই জট শুরু হয়। তবে এই বিজ্ঞানটা আমাদের এখানে যাঁরা রাস্তা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা বোঝেন না। তাঁরা মনে করেন রাস্তা চওড়া করলেই হয়তো যানজট কমে যাবে। বরং তাতে যানজট আরও বাড়ে। রাস্তা চওড়া করে আট লেন হলেও সানারপাড় বা সাইনবোর্ড মোড়–এসব জায়গার যানজট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমাদের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাজীপুর প্রতিনিধি]
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু হবে আর কয়েক দিন পরেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। বেশির ভাগ যাত্রাই হবে সড়কপথে।প্রতিবারই কোনো না কোনো মহাসড়কে যানজটের কারণে আনন্দযাত্রা হয়ে ওঠে ভোগান্তির। টঙ্গীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, পদ্মাসহ বিভিন্ন বড় সেতুর টোল প্লাজায় ধীরগতি, বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশের অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বিভিন্ন মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র বাস থামানো, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপসহ বিভিন্ন কারণে এবারও সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। যানজটের দুর্ভোগ মাথায় রেখেই রওনা দিতে হবে তাঁদের।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করা নিয়ে গতকাল রোববার মতবিনিময় সভাতেও পদ্মা সেতুসহ বড় সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতির বিষয়টি উঠে আসে। সভায় সেতুসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুতে অটোমেটিক টোল আদায়ের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে তা ঈদের আগে সম্ভব নয়। ঈদে সেতুর ছয়টি টোল প্লাজার পাশাপাশি একটি জরুরি বুথ চালু করা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও আরও দুটি টোল বুথ করা হবে। সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কে দায়িত্ব পালনকারী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ঈদযাত্রা সামনে রেখে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন মহাসড়ক ঘুরে দেখেছেন। মহাসড়কগুলোর অবস্থা ও যানজটের সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন মহাসড়কে ভোগান্তির সংশয় থাকলেও ব্যতিক্রম হতে পারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান চওড়া করায় যানজটের তেমন আশঙ্কা নেই।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগ থাকছেই
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করে ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য এবারও ভোগান্তির মুক্তির তেমন সম্ভাবনা নেই। এর প্রধান কারণ চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটির কাজের কারণে টঙ্গীতে মহাসড়কের অনেক অংশ সরু হয়ে কার্যত এক লেন হয়ে গেছে।টঙ্গী থেকে টঙ্গী বিসিক এলাকা পর্যন্ত অংশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। অনেক অংশে কার্পেটিং হয়নি। যানবাহনগুলোকে চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে স্বাভাবিক সময়েই তীব্র যানজট থাকছে। ঈদযাত্রায় বাড়তি যানবাহনের চাপে তা আরও দীর্ঘ হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই মহাসড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি ও উত্তরাঞ্চলের ২৩ জেলার যানবাহন চলে। এই মহাসড়কে রাজধানী থেকে তুরাগ সেতুর দুই লেন দিয়ে যানবাহন টঙ্গীতে ঢুকছে। কিন্তু টঙ্গী থেকে এক লেনে ঢাকায় যাওয়ায় ওই লেনে ধীরগতির কারণে যানজট লেগে আছে। বাটার সামনে ফ্লাইওভার, আজমপুর ফ্লাইওভারের সামনে যানজট লেগে থাকছে। এ ছাড়া মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থান সরু হয়ে পড়েছে। রয়েছে খানাখন্দ।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ বিআরটি কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগির এ রাস্তার সংকট দূর করা সম্ভব নয়। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শিগগির সমস্যা কাটবে না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
দুই লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে তীব্র যানজটে পড়তে হয় ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড এই যানজটের অন্যতম কারণ। মহাসড়কটির নারায়ণগঞ্জ অংশের ২৫ কিলোমিটারে সরেজমিন দেখা যায়, কাঁচপুর মোড়ে রাস্তা আটকে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। তারাব বিশ্বরোড মোড় ঘুরতে বেশি সময় নিচ্ছে যানবাহনগুলো। রূপসী মোড়ে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে অবৈধ লেগুনাস্ট্যান্ডের কারণে। বরপা মোড়েও আছে স্ট্যান্ড, সড়কেও খানাখন্দ। ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে বাজার ও লোকাল বাসের চাপে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। ঢাকা-সিলেট পথের বাসের চালক নাবিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারাব বিশ্বরোড আর ভুলতা অংশে যানজট বেশি হয়। এতে অনেক সময় চলে যায়। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দুই লেন হওয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। আমরা এবার বেশ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করেছি। কেউ অনিয়ম করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও জটের শঙ্কা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে অন্তত চারটি স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এই অংশে বছরের বেশির ভাগ সময়ই যানজট থাকে। শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া এবং মেঘনা টোল প্লাজায় এবার ঈদযাত্রায় যানজট আরও তীব্র হতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ অংশের ওপর দিয়ে অন্তত ১৮ হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। ঈদযাত্রার শুরুর দিকে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার। পরে আরও বাড়ে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশ নিয়েই ঈদযাত্রায় দুশ্চিন্তা। এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটির ৬০ কিলোমিটার অংশ ইতিমধ্যে ছয় লেনে উন্নীত করায় যানজটের আশঙ্কা নেই। তবে এলেঙ্গার পর মহাসড়ক দুই লেনের হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে জটও বাড়তে পারে। এ ছাড়া এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে চলমান উন্নয়নকাজও ঈদে যানজট বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এলেঙ্গায় সড়ক উন্নয়নকাজ করা আবদুল মোনেম কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মিজান সারোয়ার বলেন, ঈদের আগেই এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত চার লেনের ১ হাজার ২০০ মিটার কাজ শেষ করা হবে। এতে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমে আসবে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সমন্বয় সভা হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক
ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা জানালেন এই পথে চলাচলকারী বাসচালক ও যাত্রীরা। ইতিমধ্যে এই অংশের ১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে, যা সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের নয়টি জেলামুখী মানুষকে ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ঈদের সময় যানবাহনের চাপ অবশ্যই বাড়বে। তা ছাড়া, টোল আদায়েও সময় লাগে। তবে ব্যবস্থাপনা ভালো করা গেলে যানজট কমে আসবে।
শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক সাব্বির হোসেন বলেন, চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত মহাসড়কে কাজ ধীরগতিতে চলছে। এই গতির কাজে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে বগুড়ার চান্দাইকোনা বাজারের পশ্চিম পাশের দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব পাশের দুই লেনের কাজও শেষ হবে।’
পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে বর্তমানে ছয়টি করে মোট ১২টি টোল বুথ রয়েছে। তবে সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি রয়েছে। এ কারণে প্রায়ই সেতুর দুই প্রান্তে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এই জটও দীর্ঘ করতে পারে। যা ভোগান্তিতে ফেলবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলামুখী যাত্রীদের। মাদারীপুর পরিবহনের সুপারভাইজার বিপুল ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় বুথের সংখ্যা কম হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। ঈদে বুথের সংখ্যা বাড়ানো না গেলে যানজটে ভোগান্তি বাড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক মানসম্মত নয়। যানজটের প্রধান হটস্পট হচ্ছে মোড়। ওখান থেকেই জট শুরু হয়। তবে এই বিজ্ঞানটা আমাদের এখানে যাঁরা রাস্তা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা বোঝেন না। তাঁরা মনে করেন রাস্তা চওড়া করলেই হয়তো যানজট কমে যাবে। বরং তাতে যানজট আরও বাড়ে। রাস্তা চওড়া করে আট লেন হলেও সানারপাড় বা সাইনবোর্ড মোড়–এসব জায়গার যানজট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমাদের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাজীপুর প্রতিনিধি]
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে