সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে চড়াই

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ২৮
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ৪০

আমদানি করা পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সাধারণত বাড়ান দেশের পরিশোধনকারী মিলমালিকেরা। চার মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও দেশে কমার গতি খুবই ধীরে। খোলা সয়াবিন তেল সামান্য কমে বিক্রি হলেও প্যাকেট বা বোতলজাতে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ইনডেক্স মুন্ডি ডটকমের তথ্যমতে, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৬৫১ মার্কিন ডলার। ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় টনপ্রতি ১ হাজার ৪০৯ ডলারে। আর ৫ এপ্রিল প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২১৭ মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি কমেছে ৪৩৪ ডলার।

গত ১৯ মার্চ দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের সভার তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ মার্চ প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৩৮ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ১৬০ ডলার।

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে না কমার কারণ জানতে চাইলে সয়াবিন তেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) মো. রেদোয়ানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারের দাম দেখে লাভ নেই। ডলারের দাম না কমা পর্যাপ্ত বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমানো সম্ভব নয়। ব্যাংক ডলারের দাম ঘোষণা করলেও সে দামে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করছে না। এতে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে এলসি নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে।  

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৭ টাকা। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ৯০৬ টাকা। কোনো কোনো বাজারে লিটারপ্রতি দু-এক টাকা কমেও মিলছে।

খুচরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান জানান, পরিবেশক পর্যায়ে দাম না কমালে তারা কমিয়ে বিক্রি করতে পারেন না। বোতলজাত তেলে পরিবেশকেরা কিছুটা ছাড় দেওয়ায় তাঁরা লিটারপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন। তবে ৫ লিটারের বোতলে দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৮-১৭৫ টাকায়। এক মাস আগে তা ছিল ১৬৮-১৭২ টাকা। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ এবং ৫ লিটারের ৮৭০-৮৯০ টাকায়। এক মাস আগে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ৮৭০-৮৮০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে ২০ লাখ টন। রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩ হাজার টন। অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয় ২০ লাখ টন।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে বাড়ে। এখন যেহেতু কমেছে, দেশেও দাম কমানো উচিত বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর আমদানিকারকদের নিয়ে বৈঠক করে তেল ও চিনির দাম পুনর্নির্ধারণ করার কথা। সে অনুযায়ী সয়াবিন তেলের দাম অনেক আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এখন সমন্বয় করার সময় এসেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও দেশে না কমার জন্য ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফাকে দায়ী করছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান । তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশেও দাম কমানো উচিত। এ বিষয়ে সরকারকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত