অস্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ওপর। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গত বৃহস্পতিবারের বোর্ড সভা শেষে জানিয়েছিলেন, বাজেটে ভারসাম্য আনতে তাঁরা ব্যয় সংকোচন নীতিতে যেতে চান। আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনতে এখন থেকে বিদেশ সফরে বাংলাদেশ দলের বহর কিছুটা ছোট করতে চায় বিসিবি।

সে কারণেই এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের বহর থেকে বাদ গেছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর নাম। পেসার শহীদুল ইসলামের জায়গায় সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও পেসার হাসান মাহমুদকেও পাঠানো হচ্ছে না। দলের সঙ্গে থাকছেন না চিকিৎসক ও মিডিয়া ম্যানেজার। সাপোর্টিং স্টাফদের মধ্যেও কমেছে একজন।

বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ দলের বহর কিছুটা ছোট করেও ৪০-৪২ দিনের এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বোর্ডের খরচ বেড়েছে ৫ কোটি টাকারও বেশি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ দলের উইন্ডিজ সফরে মোট খরচ ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একটি সফরে চার গুণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে অস্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি তো আছেই, আইসিসির একটি সিদ্ধান্তও সফরকারী দলের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে কোনো আয়োজক বোর্ড সফরকারীদের দৈনিক ভাতা (ডিএ) দেবে না। সিরিজের জন্য হওয়া সমঝোতা চুক্তির (এমওইউ) বাইরে থাকা সদস্যদের হোটেল-খরচ ও ভ্রমণের ব্যয় বহন করবে না আয়োজক বোর্ড। সেটি সফরকারী দলকেই করতে হবে। এমনিতে যেকোনো আন্তর্জাতিক সিরিজে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা বিমান ভ্রমণ করে থাকেন ‘বিজনেস ক্লাসে’ আর পাঁচ তারকা হোটেলে থাকার বিষয় তো আছেই। লম্বা ও জটিল এই ভ্রমণে বিমানের টিকিটপ্রতি যে ৭-৮ লাখ টাকা বেড়েছে, হোটেলভাড়া ২২-২৩ হাজার টাকার জায়গায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা হয়েছে, গত সপ্তাহে বিসিবির সভাপতি নিজেই জানিয়েছেন। আরও জানা গেছে, পুরো সফরে একজন সদস্যের পেছনে খরচ ২৫-২৮ লাখ টাকা। আর যেহেতু ডিএ (দৈনিক ৭৫ কিংবা ১০০ ডলার) সফরকারী দলকে বহন করতে হবে, একজন খেলোয়াড়কেই দেখা যাচ্ছে পুরো সফরে প্রায় চার হাজার ডলার (সাড়ে ৩ লাখ টাকা) দৈনিক ভাতা দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সদস্যের বাইরে যত বেশি সদস্য থাকবে, প্রতিজনে ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হবে।

খরচ চার-পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তাটা শুধু এই সফর নিয়েই নয়, এর প্রভাব পড়ছে বিসিবির বার্ষিক বাজেটেও। এখন সফর যত বেশি হবে, বোর্ডের খরচও তত বাড়বে। এ বছরের বাকি ৬ মাসে বাংলাদেশ দলের অন্তত চারটি বিদেশ সফর আছে। এর তিনটিই আবার এশিয়ার বাইরে। বিপরীতে বাংলাদেশ দেশে আয়োজন করবে একটি সিরিজ। প্রতিটি বিদেশ সফরে অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সম্পূরক বাজেট লাগছে ক্রিকেট বোর্ডের। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিসিবি শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে যে ২৬১ কোটি টাকার বার্ষিক ব্যয় ধরা হয়েছিল, সেটির চেয়ে ৩০ কোটি বেশি খরচ হচ্ছে তাদের। বিপরীতে আয় ধরা হয়েছিল ২৬০ কোটি টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়াটা অশনিসংকেত মনে করছেন বিসিবির নীতিনির্ধারকেরা।

অথচ গত দুই বছরে করোনা পরিস্থিতিতেও আয় বেড়েছিল বিসিবির। মহামারিতে তাই আর্থিকভাবে ধাক্কা খেতে হয়নি তাদের। প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত তহবিল থাকার পরও এখন ব্যয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বোর্ডকে। বিসিবির একজন পরিচালক বলেন, ‘আমাদের যে আয়, সেটির তুলনায় এভাবে খরচ বাড়লে সেটা অশনিসংকেত। টাকা তো কমছে, এভাবে ফিক্সড থাকে না।’

তিন দিন আগে আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য নিয়ে বিসিবি সভাপতি পাপন বলেছিলেন, ‘বলেছি, প্রতিটি বিভাগের বাজেট যেন আগের বাজেটের চেয়ে না বাড়ে। আমাদের নতুন নতুন অনেক কিছু করার কথা ছিল। সেগুলো আপাতত ৩-৪ মাসের জন্য স্থগিত রাখা হচ্ছে।’ বিষয়টি নিয়ে বিসিবির অর্থ বিভাগের প্রধান ইসমাইল হায়দার মল্লিক গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খরচ না করতে। এখন সবকিছুরই ব্যয় বেড়েছে। আমাদেরও বেড়েছে। বিমান, থাকা-খাওয়া; সবকিছুরই খরচ বেড়েছে। বিলাসী কিছু করা যাবে না। যতটা করা দরকার, আমরা সেটাই করছি।’