বঙ্গবাজারের সঙ্গে সূত্র মেলাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৮: ২৬
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৮: ৩১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় গত দুই সপ্তাহে (১২ দিনে) পাঁচটি মার্কেটে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সব ঘটনা মধ্যরাত থেকে ভোরের আলো ফোটার আগে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল প্রায় একই সময়।

এ নিয়ে গতকাল শনিবার দিনভর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন কানাঘুষা ছিল। কেউ কেউ বড় দুই ঘটনা অর্থাৎ বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মধ্যে সূত্র মেলানোর চেষ্টা করেছেন। তা ছাড়া, পরপর একই ধাঁচে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, ‘নাশকতা না তো?’ ইতিমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’

ঈদকে কেন্দ্র করে বছরব্যাপী ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা থাকে, ঠিক সেই ঈদের আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বড় দুই মার্কেটসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে অল্প সময়ের ব্যবধানে। এসব ঘটনায় কয়েক হাজার ব্যবসায়ী পথে বসেছেন। ঈদের আগে ধারাবাহিকভাবে মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসও সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানীতে একের পর এক মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা নাশকতার ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঘটনার শুরু ৪ এপ্রিল ভোরে। ওই দিন ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাতটি মার্কেট পুড়ে যায়। মার্কেটগুলো হলো বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগরী মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও ঢাকা সুপার মার্কেট। এ ছাড়া বহুতল মার্কেট এনেক্সকো টাওয়ার ও বঙ্গ হোমিও টাওয়ার মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভয়াবহ এই আগুনে প্রায় ৬ হাজার দোকান পুড়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন বঙ্গবাজারে খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে ব্যবসা শুরু করেছেন। আদর্শ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মার্কেটের কোনো কিছুই নেই। মার্কেটের কেবল ছাই মিলছে। ছাই নিয়ে আর কিছু বলার নেই। পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া চলছে।’

বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের রেশ না কাটতেই ৮ এপ্রিল বঙ্গবাজারের পাশে বরিশাল প্লাজা মার্কেটের চতুর্থ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশত দোকান পুড়ে যায়। এরপর ১১ এপ্রিল চকবাজারের বিসমিল্লাহ টাওয়ারের পাশে পাঁচতলা ভবনের সিরামিক গোডাউনে আগুন লেগে পুরো গোডাউনটি পুড়ে যায়। ১৪ এপ্রিল গভীর রাতে নবাবপুর মোহাম্মদিয়া মার্কেটে আগুনের ঘটনায় ২০টি সেমিপাকা দোকান ও গোডাউন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সর্বশেষ গতকাল ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েক শ দোকান পুড়ে গেছে। নিউ সুপার মার্কেটের আহ্বায়ক মারুফ হোসেন বলেন, মার্কেটের ভেতর ও বাহির মিলিয়ে ১ হাজার ৩০০ ছোট-বড় দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ দোকান পুড়ে গেছে।

গতকাল ভোরের এই আগুন নিয়ে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের মনে নানা প্রশ্ন। মামুন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বঙ্গবাজারে ভোরে আগুন লাগল, এখানেও ভোরে আগুন লাগল, আবার দুটি মার্কেটই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে।’ ভোরের আগুন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট, ঈদের আগে—এসব বিষয় নিয়ে নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বঙ্গবাজারের ঘটনার সঙ্গে সূত্র মেলানোর চেষ্টা করছেন।

নিউ সুপার মার্কেটে একটি গেঞ্জির দোকান আছে বিল্লাল হোসেনের। তিনি বলেন, ‘সব মার্কেটে ভোরে আগুন লাগে, আমরা বুঝতেছি না বিষয়টা আসলে কী? সন্দেহ করার অনেক কারণ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, সব ঝুঁকিপূর্ণ এবং পুনরায় ভেঙে মার্কেট করার কথা রয়েছে। এত মিল কেন?’

ডিএসসিসির আওতাধীন মার্কেটেই কেবল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে শঙ্কিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নিজেও। মেয়র বলেন, ‘বারবার এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটায় আমরা শঙ্কিত। নাশকতা সৃষ্টির জন্য এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটছে কি না আমরা সেদিকে লক্ষ রাখছি। এই বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা ও সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত