আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব নেই ভোক্তা পর্যায়ে

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ১৫
Thumbnail image

আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম কমার প্রভাব দেশের পরিবেশক, পাইকারিতে পড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে এখনো পড়েনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমেছে ৪০-১১০ টাকা। এতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের লোকসানে তা বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে ক্ষেত্রবিশেষে ভোজ্যতেলের দাম উল্টো বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন আগেও তাঁদের বাজারে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫৪৫০-৫৪৬০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৩৪০-৫৩৫০ টাকায়। অর্থাৎ মণপ্রতি দাম কমেছে ১১০ টাকা। এ ছাড়া আগে প্রতি মণ চিনির দাম ছিল ২৬৬০-২৬৭০ টাকা। বর্তমানে তা কমে ২৬২০-২৬৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

পুরান ঢাকার নয়াবাজারের খুচরা চিনি ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, বাজারে চিনির দাম সামান্য কমলেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের বিক্রয়মূল্য ছিল ৭২০-৭৪০ টাকা। এখন তা ৭৩০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বোতলের গায়ে দাম আরও বেশি উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই ব্যবসায়ীর কথার প্রমাণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ছিল ৭০০-৭৫০ টাকা। গত মঙ্গলবার থেকে তা ৭০০-৭৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ২ টাকা পর্যন্ত।

চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম খুচরা বাজারে না কমার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকার ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘আগের দামে পণ্য কেনা রয়েছে। এগুলো শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দাম কমানো সম্ভব নয়। পাইকারিতে কমলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা কমাতে পারি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম কমায় পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়তে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’

তিনি জানান, আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৪৭০ ডলার। বর্তমানে দাম কমে তা ১ হাজার ৩৩০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর পাম অয়েলের দাম ছিল আগে ১ হাজার ৪০০ ডলার। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৮০ ডলারে।

চিনি ও তেলের দাম কমে যাওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‘চিনি ও তেলের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ২ টাকার মতো কমেছে। এতে আমাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

পরিসংখ্যানভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিউজ পোর্টাল ইনডেক্সমুন্ডি ডটকম থেকে জানা যায়, গত আগস্টে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৪৩ দশমিক ১০ সেন্ট। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৪৩ সেন্টে বিক্রি হয়। অক্টোবরে দাম আরও কমে ৪২ সেন্টে বিক্রি হয়। দুই মাসের ব্যবধানে চিনির দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৭-১৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ৬৯ হাজার ৫০০ টন। গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭২ টন এবং পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ৩১ হাজার ৭৮২ টন। আর ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৮-২০ লাখ টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত