মাহবুব জামান
বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিলগ্নে। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। রাস্তায় নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, পরিকল্পনাবিদ, রিকশাচালক—কে নামেনি রাস্তায়?
আবারও দেখিয়ে দিল নতুন প্রজন্ম—তারা ঘুমিয়ে নেই। তারা ঘুমন্ত বাঘ। গর্জে ওঠে যখন দরকার তখন। শুধু তারা জাগে না। জাগায় সবাইকে—মাঠে নামে সবাই। গর্জে ওঠে তারাও। আজ এমনি এক অবস্থা। শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে। আজ উঠেছে সরকারের পদত্যাগের দাবি!
আন্দোলনকে সরলভাবে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। ১ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত এক অধ্যায়। তারপর থেকে অন্য অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় ছিল ছাত্রদের আন্দোলন সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ অবরোধ। আলোচনা হতে পারত, সমাধানের পথ খোঁজা যেত। নামও ছিল সুন্দর ‘বাংলা ব্লকেড’।
কিন্তু আন্দোলনের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা, ক্ষমতার দম্ভ, জেদ এবং অবশেষে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে আগুনে ঘি ঢালা হলো।আন্দোলন হয়ে উঠল সংঘাতপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠল রণক্ষেত্র। সারা দেশে ৬টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলো। কিন্তু বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। এক দিনে ঝরে পড়ল আরও ২৮ তাজা প্রাণ। রাস্তায় নেমে পড়ল ঢাকার প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে শুরু করে সব স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে অভিভাবক-শিক্ষক সবাই।
এখন আর আন্দোলন ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। পরিস্থিতি হয়ে গেল অগ্নিগর্ভ। একে গণজাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থান—যেকোনো নামেই অভিহিত করা যায়। ধ্বনিত হলো শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার বিচারের দাবি। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হলো গত ১৫ বছরের সব ধরনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। ছাগল-কাণ্ড, বালিশ-কাণ্ড, ক্যাসিনো-কাণ্ড, বেনজীর, আজিজ, দুর্নীতি ও লুটপাট, দলীয়করণ, সুশাসনের অভাব, অর্থ পাচার, মূল্যবোধের ধস, নৈতিক অধঃপতন, সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট, শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা—সব একাকার হয়ে গেল।
এটা সমাজের সর্বস্তরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ম্লান হয়ে গেল সব উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই এর সুযোগ নিল জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ সব বিরোধীপক্ষ। সংঘটিত হলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অভাবনীয় সন্ত্রাস। জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে ছাই করে দিল বিটিভি, সেতু ভবন, মেট্রোরেল, ডেটা সেন্টার ইত্যাদি। এমনকি পরিকল্পিত ‘আরব বসন্ত’ বা ‘শ্রীলঙ্কা ফল’-এর মতো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারত আস্থাবান বিরোধী নেতৃত্ব থাকলে!
আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই। এবারের কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই সুচতুরভাবে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছে। বুঝে হোক না বুঝে হোক, তাদের অনেকেই এই ফাঁদে পা দিয়েছে। নানাভাবে তারা মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা, মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে অসম্মানসূচক স্লোগান দেওয়া, এমনকি ‘আমরা সবাই রাজাকার’ স্লোগান ইত্যাদি। এসব কথা শুনলে আমাদের বুক ভেঙে যায়।
আসলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের দীর্ঘ শাসন অব্যবস্থার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে একাকার করে ফেলেছে সবাই। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল বেশি। হয়েছে তার উল্টোটা। আমি নিশ্চিত এবং শতভাগ নিশ্চিত যে আজ যেসব শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি, খেলোয়াড় তথা সমাজের সর্বস্তরের যাঁরা বিক্ষোভ-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এটা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকেই কেউ কেউ নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীতের ধুয়া তুলছেন। আশা করি আপনারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। সরকার আসবে, সরকার যাবে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যেন কোনোভাবেই অসম্মানিত না হয়। মুক্তিযুদ্ধ চিরঞ্জীব!
সে কারণেই এই ক্রান্তিকাল দ্রুত নিরসনের জন্য সরকার, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে দাবি করছি। এখনো সময় আছে। ইট ইজ নেভার টু লেট!
সরকারের প্রতি...
১. এর আগে কোনো আন্দোলনে এত প্রাণ ঝরেনি। অবিলম্বে নিহত সবার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা।
২. প্রত্যেকের মৃত্যুর কারণ এবং পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিদেশ ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের আনা।
৩. প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার।
৪. নিহতদের পরিবারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা।
৫.পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আটক সব ছাত্রছাত্রীর মুক্তিদান এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা।
৬. মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে অবিলম্বে ভুয়াদের তালিকা অপসারণ করা। তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১২ বছরের নিচে কারও বয়স থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা। অন্যান্য ভুয়া নামও অবিলম্বে বাতিল করা। তাদের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা সমাজে হেয় হচ্ছেন।
৭.৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী সংগঠন আজ দিশেহারা। অবিলম্বে একজন আস্থাশীল, যথাযথ, গ্রহণযোগ্য, সহনশীল মুখপাত্র নিয়োগ করা প্রয়োজন।
৮. সরকারের পক্ষ থেকেও একজন মুখপাত্র হওয়া বাঞ্ছনীয়। চার মন্ত্রী চার কথা বললে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি...
১. তোমাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এসে এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তোমাদের মনের অবস্থা আমরা বুঝি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ধীরে ধীরে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনো।
২. তোমরা পারবে। কারণ, এত রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে হলেও তোমরা জয়ী হয়েছ। তোমাদের অর্জিত সাফল্য যাতে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে লক্ষ রেখো।
৩.তোমাদের দাবিকে এলাস্টিকের মতো আর বাড়িয়ো না। তাতে তোমাদের প্রজ্ঞা, বিবেচনা ও লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
৪. মুক্তিযুদ্ধকে কখনো হেয় কোরো না। এই রক্তক্ষয়ী সাহসী যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। স্বাধীনতা একটা গৌরব, একটা বিশাল অর্জন। এটাই আমাদের মাতৃভূমি, এটাই আমাদের পরিচয়।
৫.মুক্তিযুদ্ধকে জানার জন্য তোমার দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মা ও পরিবারের অগ্রজদের কাছ থেকে শুনে নিয়ো—কী কঠিন সময় তাঁরা পার করেছেন, কীভাবে যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, শরণার্থী জীবনযাপন করেছেন অথবা দেশের অভ্যন্তরে আতঙ্কের বন্দী জীবনযাপন করেছেন।
৬. এর মাধ্যমেই তুমি নিজেকে খুঁজে পাবে মুক্তিযুদ্ধে। তখন আর তোমাদের কণ্ঠে ওই ভয়ংকর স্লোগান আসবে না।
অভিভাবকদের প্রতি...
১. আন্দোলনে নিঃসংকোচে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার জন্য অভিনন্দন।
২. একটি জাতি একবারই স্বাধীনতা লাভ করে। আমরা এক রক্তক্ষয়ী, বীরত্বপূর্ণ লড়াই, অনেক আত্মদানের মধ্য দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের, সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে আমাদের বিজয় দেখেছে, উদ্যাপন করেছে।
৩. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আপনাদের অভিজ্ঞতা বা আপনার বাবা-মা, চাচা-চাচি বা অগ্রজদের অভিজ্ঞতা শুনে আপনার সন্তানকে বলুন। এগুলোই হবে ওদের গৌরবের সম্পদ। তখন তারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য কাজ করবে।
আমাদের ক্রান্তিকাল কেটে উঠুক, শান্তি ফিরে আসুক, স্বাভাবিক হয়ে উঠুক আমাদের জীবন। আসুন, আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী ও মূল্যবোধ নিয়ে নিজ নিজ অঙ্গনে সক্রিয় হই।
লেখক: সভাপতি, আমরা একাত্তর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসু
বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিলগ্নে। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। রাস্তায় নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, পরিকল্পনাবিদ, রিকশাচালক—কে নামেনি রাস্তায়?
আবারও দেখিয়ে দিল নতুন প্রজন্ম—তারা ঘুমিয়ে নেই। তারা ঘুমন্ত বাঘ। গর্জে ওঠে যখন দরকার তখন। শুধু তারা জাগে না। জাগায় সবাইকে—মাঠে নামে সবাই। গর্জে ওঠে তারাও। আজ এমনি এক অবস্থা। শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে। আজ উঠেছে সরকারের পদত্যাগের দাবি!
আন্দোলনকে সরলভাবে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। ১ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত এক অধ্যায়। তারপর থেকে অন্য অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় ছিল ছাত্রদের আন্দোলন সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ অবরোধ। আলোচনা হতে পারত, সমাধানের পথ খোঁজা যেত। নামও ছিল সুন্দর ‘বাংলা ব্লকেড’।
কিন্তু আন্দোলনের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা, ক্ষমতার দম্ভ, জেদ এবং অবশেষে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে আগুনে ঘি ঢালা হলো।আন্দোলন হয়ে উঠল সংঘাতপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠল রণক্ষেত্র। সারা দেশে ৬টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলো। কিন্তু বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। এক দিনে ঝরে পড়ল আরও ২৮ তাজা প্রাণ। রাস্তায় নেমে পড়ল ঢাকার প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে শুরু করে সব স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে অভিভাবক-শিক্ষক সবাই।
এখন আর আন্দোলন ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। পরিস্থিতি হয়ে গেল অগ্নিগর্ভ। একে গণজাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থান—যেকোনো নামেই অভিহিত করা যায়। ধ্বনিত হলো শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার বিচারের দাবি। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হলো গত ১৫ বছরের সব ধরনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। ছাগল-কাণ্ড, বালিশ-কাণ্ড, ক্যাসিনো-কাণ্ড, বেনজীর, আজিজ, দুর্নীতি ও লুটপাট, দলীয়করণ, সুশাসনের অভাব, অর্থ পাচার, মূল্যবোধের ধস, নৈতিক অধঃপতন, সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট, শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা—সব একাকার হয়ে গেল।
এটা সমাজের সর্বস্তরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ম্লান হয়ে গেল সব উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই এর সুযোগ নিল জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ সব বিরোধীপক্ষ। সংঘটিত হলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অভাবনীয় সন্ত্রাস। জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে ছাই করে দিল বিটিভি, সেতু ভবন, মেট্রোরেল, ডেটা সেন্টার ইত্যাদি। এমনকি পরিকল্পিত ‘আরব বসন্ত’ বা ‘শ্রীলঙ্কা ফল’-এর মতো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারত আস্থাবান বিরোধী নেতৃত্ব থাকলে!
আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই। এবারের কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই সুচতুরভাবে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছে। বুঝে হোক না বুঝে হোক, তাদের অনেকেই এই ফাঁদে পা দিয়েছে। নানাভাবে তারা মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা, মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে অসম্মানসূচক স্লোগান দেওয়া, এমনকি ‘আমরা সবাই রাজাকার’ স্লোগান ইত্যাদি। এসব কথা শুনলে আমাদের বুক ভেঙে যায়।
আসলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের দীর্ঘ শাসন অব্যবস্থার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে একাকার করে ফেলেছে সবাই। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল বেশি। হয়েছে তার উল্টোটা। আমি নিশ্চিত এবং শতভাগ নিশ্চিত যে আজ যেসব শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি, খেলোয়াড় তথা সমাজের সর্বস্তরের যাঁরা বিক্ষোভ-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এটা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু এর ফাঁকে ফাঁকেই কেউ কেউ নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীতের ধুয়া তুলছেন। আশা করি আপনারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। সরকার আসবে, সরকার যাবে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যেন কোনোভাবেই অসম্মানিত না হয়। মুক্তিযুদ্ধ চিরঞ্জীব!
সে কারণেই এই ক্রান্তিকাল দ্রুত নিরসনের জন্য সরকার, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে দাবি করছি। এখনো সময় আছে। ইট ইজ নেভার টু লেট!
সরকারের প্রতি...
১. এর আগে কোনো আন্দোলনে এত প্রাণ ঝরেনি। অবিলম্বে নিহত সবার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা।
২. প্রত্যেকের মৃত্যুর কারণ এবং পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিদেশ ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের আনা।
৩. প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার।
৪. নিহতদের পরিবারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা।
৫.পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আটক সব ছাত্রছাত্রীর মুক্তিদান এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা।
৬. মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে অবিলম্বে ভুয়াদের তালিকা অপসারণ করা। তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১২ বছরের নিচে কারও বয়স থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা। অন্যান্য ভুয়া নামও অবিলম্বে বাতিল করা। তাদের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা সমাজে হেয় হচ্ছেন।
৭.৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী সংগঠন আজ দিশেহারা। অবিলম্বে একজন আস্থাশীল, যথাযথ, গ্রহণযোগ্য, সহনশীল মুখপাত্র নিয়োগ করা প্রয়োজন।
৮. সরকারের পক্ষ থেকেও একজন মুখপাত্র হওয়া বাঞ্ছনীয়। চার মন্ত্রী চার কথা বললে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি...
১. তোমাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে এসে এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তোমাদের মনের অবস্থা আমরা বুঝি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ধীরে ধীরে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনো।
২. তোমরা পারবে। কারণ, এত রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে হলেও তোমরা জয়ী হয়েছ। তোমাদের অর্জিত সাফল্য যাতে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে লক্ষ রেখো।
৩.তোমাদের দাবিকে এলাস্টিকের মতো আর বাড়িয়ো না। তাতে তোমাদের প্রজ্ঞা, বিবেচনা ও লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
৪. মুক্তিযুদ্ধকে কখনো হেয় কোরো না। এই রক্তক্ষয়ী সাহসী যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। স্বাধীনতা একটা গৌরব, একটা বিশাল অর্জন। এটাই আমাদের মাতৃভূমি, এটাই আমাদের পরিচয়।
৫.মুক্তিযুদ্ধকে জানার জন্য তোমার দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মা ও পরিবারের অগ্রজদের কাছ থেকে শুনে নিয়ো—কী কঠিন সময় তাঁরা পার করেছেন, কীভাবে যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, শরণার্থী জীবনযাপন করেছেন অথবা দেশের অভ্যন্তরে আতঙ্কের বন্দী জীবনযাপন করেছেন।
৬. এর মাধ্যমেই তুমি নিজেকে খুঁজে পাবে মুক্তিযুদ্ধে। তখন আর তোমাদের কণ্ঠে ওই ভয়ংকর স্লোগান আসবে না।
অভিভাবকদের প্রতি...
১. আন্দোলনে নিঃসংকোচে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার জন্য অভিনন্দন।
২. একটি জাতি একবারই স্বাধীনতা লাভ করে। আমরা এক রক্তক্ষয়ী, বীরত্বপূর্ণ লড়াই, অনেক আত্মদানের মধ্য দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের, সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে আমাদের বিজয় দেখেছে, উদ্যাপন করেছে।
৩. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আপনাদের অভিজ্ঞতা বা আপনার বাবা-মা, চাচা-চাচি বা অগ্রজদের অভিজ্ঞতা শুনে আপনার সন্তানকে বলুন। এগুলোই হবে ওদের গৌরবের সম্পদ। তখন তারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য কাজ করবে।
আমাদের ক্রান্তিকাল কেটে উঠুক, শান্তি ফিরে আসুক, স্বাভাবিক হয়ে উঠুক আমাদের জীবন। আসুন, আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী ও মূল্যবোধ নিয়ে নিজ নিজ অঙ্গনে সক্রিয় হই।
লেখক: সভাপতি, আমরা একাত্তর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ডাকসু
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৬ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে