রাহুল শর্মা, ঢাকা
প্রথম শ্রেণিতে সরকার-নির্ধারিত পাঠ্যবই তিনটি। এগুলো সরকার বিনা মূল্যে দেয়। তবে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ তিন বইয়ের বাইরে আরও চারটি বই কিনতে হয়েছে। এগুলোকে বলা হচ্ছে সহায়ক বই। এর দুটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি বই।
শুধু ভিকারুননিসা নয়, দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইবহির্ভূত একাধিক সহায়ক বই ও নোট-গাইড কিনতে হচ্ছে। কোনো কোনো বইয়ের মানও নিম্ন। নোট-গাইড ছাপানো ও বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, নজরদারি না থাকায় শিক্ষকেরা নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য সহায়ক-গাইডবই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের। অনেক ক্ষেত্রে নোট-গাইডবইকেই সহায়ক নামে চালানো হচ্ছে। প্রকাশক-শিক্ষকদের স্বার্থের এই ব্যবসা সারা বছরই রমরমা। যার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, যা কাটা যাচ্ছে অভিভাবকদের পকেট থেকে।
প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) আইনে রয়েছে, বোর্ডের প্রণীত ও প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক নয় অথবা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদিত নয়, এমন কোনো বইকে কোনো বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এই আইন সব সময় কার্যকর। এ ছাড়া ১৯৮০ সালের বই নিষিদ্ধকরণ আইনে নোট-গাইডবই ছাপা ও বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) মশিউজ্জামান বলেন, এনসিটিবির পাঠ্যক্রমের বাইরে অতিরিক্ত কোনো বই পড়ানো আইনবিরুদ্ধ। এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
আইনে নিষিদ্ধ হলেও বিদ্যালয় থেকে দেওয়া বইয়ের তালিকাতেই থাকছে সহায়ক বইয়ের নাম। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রথম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্লাস শুরুর আগে দেওয়া বইয়ের তালিকায় চারটি সহায়ক
বইয়ের নাম ছিল। তাই বাধ্য হয়ে বইগুলো কিনতে হয়েছে।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর কোনো ক্লাসেই সহায়ক বই পড়ানো হয় না। কেউ এসব বই কিনে থাকলে তা আগের কেনা।’
নিষিদ্ধ হলেও বাধ্য হয়ে গাইডবই কিনতে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কামাল উদ্দীন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে জানায়, ক্লাস শুরুর দিন নোট-গাইডবই কিনতে শ্রেণিশিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। প্রকাশক-লেখকের নামও বলে দেওয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে ১৪টি বইয়ের জন্য ১৪টি গাইডবই কিনতে হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিন্তপুর আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীও শিক্ষকদের দেওয়া বইয়ের তালিকা অনুযায়ী ১০টি বিষয়ের গাইডবই কিনেছে। তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. দলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক সমিতির দেওয়া বুকলিস্ট শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। সহায়ক বা গাইডবই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়নি। মূল বইয়ের পাশাপাশি শুধু বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার সহায়ক হিসেবে পড়ানো হয়।
সহায়ক ও গাইডবই সৃজনশীল জ্ঞান বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীরা এসব বই পড়ছে। এই বইগুলো মানসম্মত নয়। বইগুলো প্রণয়নের প্রক্রিয়াও যথাযথ নয়। কারণ, এসব বইয়ের লেখকদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
নিষিদ্ধ হলেও রমরমা বাজার
রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, ফার্মগেটের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায়, গাইডবই নিষিদ্ধ হলেও সহায়ক বইয়ের মতো প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের জন্য গাইড কিনতে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে আসা রাফিউর রহমান বলেন, স্কুল থেকে গাইডবই কিনতে বলেছে।
নোট-গাইড বিক্রি সারা বছর চলে বলে জানান নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ী আবুল মিয়া। তিনি বলেন, ভালো লাভ হওয়ায় নোট-গাইডবই বিক্রি করতে দোকানিরা উৎসাহ পান। গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বলেন, এগুলো গাইড নয়, সহায়ক বই।
নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের একাধিক বই ব্যবসায়ী জানান, সাধারণত প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়ক বা নোট-গাইডবই বেশি প্রয়োজন হয়। বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় এসব বইয়ের বিক্রিও অনেক। একেকজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৫০০ টাকার সহায়ক বা নোট-গাইডবই কেনে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার ১৪৩ জন। বছরে জনপ্রতি ৫০০ টাকার বই কিনলে ৫০০ কোটি টাকার বেশি এসব বই বিক্রি হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, বাজারে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো নোট-গাইড নয়, সহায়ক বই। ১৯৮০ সালের সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে নোট-গাইডবই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন সেই সিলেবাস নেই। তাই ওই আইনের কার্যকারিতাও নেই।
‘কমিশনে’ পাশে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি
অভিযোগ রয়েছে, সহায়ক বই ও নোট-গাইড বের করা প্রকাশনীগুলোর মালিকেরা মোটা অঙ্কের ‘কমিশনে’ হাত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের। কেউ কেউ হাত করেন জেলা, উপজেলা শিক্ষক সমিতিকে। এ কারণে শিক্ষকেরাও তাঁদের ‘পছন্দের’ বই কিনতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কিছু বিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় নিজেদের প্রকাশিত বই অন্তর্ভুক্ত করার বিনিময়ে প্রকাশনীগুলো শিক্ষক সমিতিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেয়। এর বাইরে শিক্ষকদের হাত করেও এমন বই অন্তর্ভুক্ত করানো হয়।
দেশের বেশির ভাগ জেলায় একই অবস্থা। বিষয়টি স্বীকার করেন কুমিল্লার মোগলটুলি বই বিপণির স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াদ হোসেন। তিনি বলেন, সহায়ক-গাইডবই ব্যবসার মধ্যস্বত্বভোগী হলেন শিক্ষকেরা। প্রকাশনীর এজেন্টরা বই বিক্রির জন্য সরাসরি শিক্ষকদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ৪০ টাকার বই ১০০ টাকায় বিক্রি করে লাভের ৬০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা পান শিক্ষকেরা। প্রকাশনীর লাভ কম। সহায়ক বই বেশি বিক্রি হলে তাই শিক্ষকদের লাভও বেশি।
টাঙ্গাইলের একটি বইয়ের দোকানের মালিকও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সহায়ক-গাইডবই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে নিলামের মতো দর হাঁকা হয়। ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর ওঠে। যে প্রকাশনী বেশি টাকা দেয়, তাদের বই পাঠ্য করা হয়।
পাঠ্যবইয়ের অতিরিক্ত বই পড়ানো বন্ধ করা দেখভালের দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এনসিটিবির অনুমোদিত পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতও।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মুহাম্মদ মাসুদ আলম (চাঁদপুর), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), দেলোয়ার হোসেন আকাইদ (কুমিল্লা), সাজন আহম্মেদ পাপন (কিশোরগঞ্জ), আবুল কাসেম (সাতক্ষীরা), গনেশ দাস (বগুড়া), মো. আতাউর রহমান (জয়পুরহাট), সাদ্দাম হোসেন (ঠাকুরগাঁও), আয়শা সিদ্দিকা আকাশী (মাদারীপুর), তারেক রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।
প্রথম শ্রেণিতে সরকার-নির্ধারিত পাঠ্যবই তিনটি। এগুলো সরকার বিনা মূল্যে দেয়। তবে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ তিন বইয়ের বাইরে আরও চারটি বই কিনতে হয়েছে। এগুলোকে বলা হচ্ছে সহায়ক বই। এর দুটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি বই।
শুধু ভিকারুননিসা নয়, দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইবহির্ভূত একাধিক সহায়ক বই ও নোট-গাইড কিনতে হচ্ছে। কোনো কোনো বইয়ের মানও নিম্ন। নোট-গাইড ছাপানো ও বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, নজরদারি না থাকায় শিক্ষকেরা নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য সহায়ক-গাইডবই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীদের। অনেক ক্ষেত্রে নোট-গাইডবইকেই সহায়ক নামে চালানো হচ্ছে। প্রকাশক-শিক্ষকদের স্বার্থের এই ব্যবসা সারা বছরই রমরমা। যার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, যা কাটা যাচ্ছে অভিভাবকদের পকেট থেকে।
প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) আইনে রয়েছে, বোর্ডের প্রণীত ও প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক নয় অথবা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদিত নয়, এমন কোনো বইকে কোনো বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এই আইন সব সময় কার্যকর। এ ছাড়া ১৯৮০ সালের বই নিষিদ্ধকরণ আইনে নোট-গাইডবই ছাপা ও বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) মশিউজ্জামান বলেন, এনসিটিবির পাঠ্যক্রমের বাইরে অতিরিক্ত কোনো বই পড়ানো আইনবিরুদ্ধ। এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
আইনে নিষিদ্ধ হলেও বিদ্যালয় থেকে দেওয়া বইয়ের তালিকাতেই থাকছে সহায়ক বইয়ের নাম। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রথম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্লাস শুরুর আগে দেওয়া বইয়ের তালিকায় চারটি সহায়ক
বইয়ের নাম ছিল। তাই বাধ্য হয়ে বইগুলো কিনতে হয়েছে।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর কোনো ক্লাসেই সহায়ক বই পড়ানো হয় না। কেউ এসব বই কিনে থাকলে তা আগের কেনা।’
নিষিদ্ধ হলেও বাধ্য হয়ে গাইডবই কিনতে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কামাল উদ্দীন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে জানায়, ক্লাস শুরুর দিন নোট-গাইডবই কিনতে শ্রেণিশিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। প্রকাশক-লেখকের নামও বলে দেওয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে ১৪টি বইয়ের জন্য ১৪টি গাইডবই কিনতে হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিন্তপুর আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীও শিক্ষকদের দেওয়া বইয়ের তালিকা অনুযায়ী ১০টি বিষয়ের গাইডবই কিনেছে। তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. দলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক সমিতির দেওয়া বুকলিস্ট শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। সহায়ক বা গাইডবই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়নি। মূল বইয়ের পাশাপাশি শুধু বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার সহায়ক হিসেবে পড়ানো হয়।
সহায়ক ও গাইডবই সৃজনশীল জ্ঞান বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীরা এসব বই পড়ছে। এই বইগুলো মানসম্মত নয়। বইগুলো প্রণয়নের প্রক্রিয়াও যথাযথ নয়। কারণ, এসব বইয়ের লেখকদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
নিষিদ্ধ হলেও রমরমা বাজার
রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, ফার্মগেটের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায়, গাইডবই নিষিদ্ধ হলেও সহায়ক বইয়ের মতো প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের জন্য গাইড কিনতে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে আসা রাফিউর রহমান বলেন, স্কুল থেকে গাইডবই কিনতে বলেছে।
নোট-গাইড বিক্রি সারা বছর চলে বলে জানান নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ী আবুল মিয়া। তিনি বলেন, ভালো লাভ হওয়ায় নোট-গাইডবই বিক্রি করতে দোকানিরা উৎসাহ পান। গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বলেন, এগুলো গাইড নয়, সহায়ক বই।
নীলক্ষেত ও বাংলাবাজারের একাধিক বই ব্যবসায়ী জানান, সাধারণত প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সহায়ক বা নোট-গাইডবই বেশি প্রয়োজন হয়। বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় এসব বইয়ের বিক্রিও অনেক। একেকজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৫০০ টাকার সহায়ক বা নোট-গাইডবই কেনে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার ১৪৩ জন। বছরে জনপ্রতি ৫০০ টাকার বই কিনলে ৫০০ কোটি টাকার বেশি এসব বই বিক্রি হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, বাজারে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো নোট-গাইড নয়, সহায়ক বই। ১৯৮০ সালের সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে নোট-গাইডবই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন সেই সিলেবাস নেই। তাই ওই আইনের কার্যকারিতাও নেই।
‘কমিশনে’ পাশে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি
অভিযোগ রয়েছে, সহায়ক বই ও নোট-গাইড বের করা প্রকাশনীগুলোর মালিকেরা মোটা অঙ্কের ‘কমিশনে’ হাত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের। কেউ কেউ হাত করেন জেলা, উপজেলা শিক্ষক সমিতিকে। এ কারণে শিক্ষকেরাও তাঁদের ‘পছন্দের’ বই কিনতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কিছু বিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় নিজেদের প্রকাশিত বই অন্তর্ভুক্ত করার বিনিময়ে প্রকাশনীগুলো শিক্ষক সমিতিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেয়। এর বাইরে শিক্ষকদের হাত করেও এমন বই অন্তর্ভুক্ত করানো হয়।
দেশের বেশির ভাগ জেলায় একই অবস্থা। বিষয়টি স্বীকার করেন কুমিল্লার মোগলটুলি বই বিপণির স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াদ হোসেন। তিনি বলেন, সহায়ক-গাইডবই ব্যবসার মধ্যস্বত্বভোগী হলেন শিক্ষকেরা। প্রকাশনীর এজেন্টরা বই বিক্রির জন্য সরাসরি শিক্ষকদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ৪০ টাকার বই ১০০ টাকায় বিক্রি করে লাভের ৬০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা পান শিক্ষকেরা। প্রকাশনীর লাভ কম। সহায়ক বই বেশি বিক্রি হলে তাই শিক্ষকদের লাভও বেশি।
টাঙ্গাইলের একটি বইয়ের দোকানের মালিকও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সহায়ক-গাইডবই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে নিলামের মতো দর হাঁকা হয়। ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর ওঠে। যে প্রকাশনী বেশি টাকা দেয়, তাদের বই পাঠ্য করা হয়।
পাঠ্যবইয়ের অতিরিক্ত বই পড়ানো বন্ধ করা দেখভালের দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এনসিটিবির অনুমোদিত পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতও।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মুহাম্মদ মাসুদ আলম (চাঁদপুর), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), দেলোয়ার হোসেন আকাইদ (কুমিল্লা), সাজন আহম্মেদ পাপন (কিশোরগঞ্জ), আবুল কাসেম (সাতক্ষীরা), গনেশ দাস (বগুড়া), মো. আতাউর রহমান (জয়পুরহাট), সাদ্দাম হোসেন (ঠাকুরগাঁও), আয়শা সিদ্দিকা আকাশী (মাদারীপুর), তারেক রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে