চরের বালু অবৈধভাবে উত্তোলন তীরে ভাঙন

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) 
Thumbnail image

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের চর থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ভাংনামারী এলাকা থেকে এই বালু তোলা হচ্ছে।

অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ওই এলাকার অন্তত ৫০টি বাড়িঘর গত এক বছরে ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে। আরও অনেক বাড়িঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে বালু তোলার কারণে কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে ১০-১৫ ফুট গভীর গর্ত।

ইউনিয়নে অন্তত পাঁচটি এলাকায় প্রকাশ্যে দিন-রাত বালু তোলা হলেও নিশ্চুপ স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় প্রশাসন সরকারি আবাসন প্রকল্পের জন্য স্থানীয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে বিনা মূল্যে বালু নিচ্ছে আর সে সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে এসব বালু বিক্রি করছে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ বালু বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আবাসনের বালু নিয়মানুযায়ী ক্রয় করে আনা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি কর্মকর্তার (নাইভ) কার্যালয় থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে। অনন্তগঞ্জ গ্রামে বয়রার বাজারের পাশে টেঙ্গুরাকান্দা, ভাটিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নদের চরে অর্ধশতাধিক গভীর গর্ত হয়েছে।

 বালু তোলার পাশেই রাখা আছে ভেকু মেশিন। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু সরিয়ে নেওয়ার কারণে চরে জেগে ওঠা গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বালু তোলায় তীরে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার অর্ধশতাধিক বাড়িঘর গত এক বছরে ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে চরম হুমকির মুখে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। ভাংনামারী এলাকার আক্কাস আলী বলেন, ভাঙনে গত বছরে তাঁর বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর মতো অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভাংনামারী ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই নাজমুল হক ফিরুজ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে বাপ্পি ও যুব লীগ নেতা রোবেল এসব অবৈধ বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

তবে রোবেল ও বাপ্পির দাবি, তাঁরা আগে বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন আর নেই; বরং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নেজামুল হকের ভাই ফিরুজ এখন এসব নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ ব্যাপারে নাজমুল হক ফিরুজ বলেন, ‘সরকারি আবাসন প্রকল্পে বালুর প্রয়োজন হলে আমি বালু পাঠাই, নিজে বিক্রি করি না।’

ভাংনামারী ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা মো. আবুল হাসিম অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে কমিশন নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে মো. আবুল হাসিম কমিশন নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। একাধিকবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও তাঁদের থামানো যাচ্ছে না।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান ফকির বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল ভাংনামারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। অপরিকল্পিতভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিবছর শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ও সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু বিক্রির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। আবাসনের বালু নিয়মানুযায়ী ক্রয় করে আনা হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত