সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় কাইট্রা কচ্ছপ বা ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির একটি কচ্ছপ ৩৪টি ডিম দিয়েছে। গত শনিবার রাতে প্রজনন প্রকল্পের পুকুর পাড়ের স্যান্ডবিচে (বালুর মধ্যে) এ ডিম দেয় কচ্ছপটি। বাচ্চা ফোটানোর জন্য ৬৫ থেকে ৭০ দিন এই ডিমগুলো নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হবে।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু অন্যান্য দেশে এই প্রজাতির কচ্ছপ এখন প্রায় দেখাই যায় না। বাংলাদেশেও এই প্রজাতির কচ্ছপ বিলুপ্তির পথে। এই প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ২০১০ সালে ভিয়েনা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তায় বন বিভাগ, আমেরিকান টারটেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স ও বেসরকারি সংস্থা ক্যারিনামের যৌথ উদ্যোগে গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতির বংশবিস্তার রক্ষায় প্রথম কার্যক্রম শুরু হয়।

করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, পরিবেশ কচ্ছপের ডিম দেওয়ার উপযোগী করে আগে থেকেই প্রকল্পের পুকুর পাড়ে স্যান্ডবিচ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে শনিবার রাতে ডিম দেয় প্রকল্পের একটি কচ্ছপ। এরপর রোববার সকালে ডিমগুলো তুলে ইনকিউবেশন (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ) করা হয়েছে। ইনকিউবেশনে ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে।

করমজল কেন্দ্রের কচ্ছপ প্রজনন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, এ কেন্দ্রে ২০১৭ সাল থেকে কচ্ছপগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। সর্বশেষ ২০২১ সালে এ প্রকল্পের চারটি কচ্ছপ ৯৬টি ডিম দেয়। তার মধ্যে ৭৯টি বাচ্চা ফুটে। এ ছাড়া আরও একটি কচ্ছপ দুই একদিনের মধ্যে ডিম দেবে।

তিনি আরও বলেন, এ কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কচ্ছপগুলো একটু বড় হলে পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় নদ-নদীতে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ কেন্দ্রে ছোট বড় মিলিয়ে বর্তমানে ৪৩৬টি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহাবুব আলম বলেন, দেশি ভাষায় পরিচিত কাইট্যা কচ্ছপ বা বড় কাইট্রার বৈজ্ঞানিক নাম বাটাগুর বাসকা। ইংরেজিতে এটিকে নর্দার্ন রিভার টেরাপিন বলে। একটি পূর্ণবয়স্ক বাটাগুর বাসকা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজন হয় ১৮ থেকে ২৩ কেজি পর্যন্ত। এটি মিঠা ও লবণ, দুই পানিতেই থাকতে পারে। এই ক্ষমতা অন্য কোনো কচ্ছপের নেই। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ কচ্ছপের খোলসের রং বাদামি থেকে সবুজ। আর নারী কচ্ছপের জলপাই ধূসর। নারী কচ্ছপ বছরে ৩০ থেকে ৪০টি ডিম দেয়।

প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় এই কচ্ছপের নাম রয়েছে।