গুদামে ধান দিতে কৃষকের অনীহা

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২০
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ০০

ধান হতে হবে শুকনো, চিটামুক্ত, উজ্জ্বল ও সোনালি বর্ণের। যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে এসব গুণাগুণ পাওয়া গেলে তবেই সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করা যাবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কৃষকের থাকতে হবে সোনালি ব্যাংকে নিজস্ব হিসাব। বিক্রির ১৫ থেকে ২০ দিন পর সেই হিসাবে জমা হবে বিক্রীত ধানের মূল্য।

এসব শর্ত আরোপ করে সরকারি গুদামের জন্য ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ। অথচ স্থানীয় বাজারে ৯৩০ টাকা দরে ধান বিক্রি করা যাচ্ছে। এতে সরকারি গুদামের বদলে কৃষকেরা স্থানীয় বাজারের দিকে ঝুঁকছে। সরকারিভাবে ধান কেনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও কৃষকের সাড়া মিলছে না। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ধানের ব্যবসায়ী, কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলা খাদ্য অফিস জানায়, এ বছর হাতিয়ায় ৩ হাজার ৬১২ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার চৌমুহনী খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কেনা উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহেও কোনো ধান কিনতে পারেনি খাদ্য অফিস।

হাতিয়ার সবচেয়ে বড় ধানের আড়ত তমরদ্দি বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কৃষকেরা ভ্যান গাড়িতে বস্তায় বস্তায় ধান এনে বিক্রি করছেন বিভিন্ন আড়তে। শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা ধান বেচা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তমরদ্দি বাজারের ধান ব্যবসায়ী মেসার্স মোবাশ্বের অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জুয়েল (৪০) জানান, বর্তমানে তারা ৯৩০ টাকা মূল্যে ধান কিনছেন। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হয় তাঁর দোকানে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তাঁদের কাছ থেকে ধান কিনে নিয়ে যায়।

তমরদ্দি বাজারের বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের কৃষক নুর উদ্দিন (৫৫) জানান, সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। তিনি সেখানে বিক্রি না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এবার সরকারি ভাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। তবে ধান হতে হবে একেবারে শুকনো, ঝরঝরে। সরকারিভাবে বিক্রির জন্য উপযোগী করতে প্রতি মণ ধানের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয়, তাতে স্থানীয় বাজারে ৯৩০ টাকায় বিক্রি করলেও লাভবান হওয়া যায়। আবার গুদামে ধান বিক্রি করে মূল্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া যায় না। ব্যাংকে হিসাব করতে হয়। তিনি জানান, ধানের মূল্য দ্রুত পেতে ও প্রক্রিয়ার জট থেকে বাঁচতে স্থানীয় বাজার তাঁদের জন্য অনেক ভালো।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, এবার হাতিয়ায় ৬৮ হাজার ৫১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন। এ বছর সরকারি গুদামে প্রতিজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন করে ধান বিক্রি করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে হাতিয়ার চৌমুহনী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) আবদুর রহিম মিজি বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের দেওয়া প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ পর্যালোচনা করে ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে ধানের মূল্য ১ হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করায় স্থানীয় বাজারে কৃষকেরা ৯৩০ টাকা মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছে। যেকোনোভাবেই হোক, কৃষককে লাভবান করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত