জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হামলা ও মারধরে ঘটনা বাড়ছে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সমর্থকদের দ্বারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি। কারোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলেই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউপিতে ভোট আগামীকাল ২৮ নভেম্বর। ভোটের আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। অনেক জায়গায় মারধরও করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন আফছার আলী সরদার। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের প্রধান সমন্বয়ক আবু হানিফ উদ্দিন সরকার নাপিতেরচর বাজারে গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রচারণা চালাতে যান।

এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাকছুদুর রহমান আনছারীর লোকজন আবু হানিফ উদ্দিন সরকারের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে গভীর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আফছার আলী সরদার জানান, ‘আমার নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক আবু হানিফ উদ্দিন সরকারকে বেধড়ক পিটিয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ক্যাডাররা।’ এ ছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাকছুদুর রহমান আনছারীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঘোড়া প্রতীকের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সরদার।

তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা আমার নির্বাচনী প্রচারণা কাজে নিয়মিত বাধা দিচ্ছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অভিযুক্ত মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘আমরা অন্যের প্রচারণায় বাধা দেব কেন? আমাদের বিরুদ্ধে অযথা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেওয়ায় গত ১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন পলবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান কমল ডিহিদার। সিরাজাবাদ বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রে ওই সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য দেন তিনি।

ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান কমল ডিহিদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার আনারস প্রতীকের প্রচারণা কাজে বাধা এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন স্বাধীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা বলেন, আমি যদি নির্বাচন থেকে সড়ে না দাঁড়াই তাহলে আমাকে খুন করে লাশ গুম করা হবে।

একইদিন সন্ধ্যায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন স্বাধীন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কাউকে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৬ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৬ জন, জাতীয় পার্টির ২ জন, স্বতন্ত্র ১৫ জন, জনসহ ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরগোয়ালিনী ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমার মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা তছনছ করে ফেলেছে। মোটরসাইকেল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।’ অভিযুক্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল্লাহ সরকার বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট খবর ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কারো প্রচারণায় বাধা দিইনি।’

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। কারোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলেই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোছা. হোসনে আরা বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’