শোধ নিলেন জীবন বলী

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ২৯
Thumbnail image

বৈশাখের কাঠফাটা রোদ। ২০ বাই ২০ হাতের চতুর্ভুজ আকৃতির রিংয়ের চারপাশ ঘিরে অসংখ্য দর্শকের হই-হুল্লোড়। রেফারির বাঁশি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো শক্তির লড়াই। দাঁতে দাঁত চেপে, মাথায় মাথা লাগিয়ে চলা এই যুদ্ধ বলীখেলায় জয়ী হওয়ার।

ঘামে ভিজে, রোদে পুড়ে অস্থির। তবু যেন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! ৩০ মিনিটেও কেউ কারও পিঠ রিংয়ের বালুতে ছোঁয়াতে না পারায় শেষমেশ রেফারিকে টানতে হলো ইতি।

২৮ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে রেফারি আবদুল মালেক জীবন বলীর হাত উঁচিয়ে বললেন, ‘ওই এবারের আবদুল জব্বার বলীখেলার চ্যাম্পিয়ন’। তাঁতে মন ভাঙলেও মেনে নেন কুমিল্লার শাহজালাল বলী।

একটা সময় জব্বারের বলীখেলা মানেই ছিল কক্সবাজারের দিদার বলীর হাতে ট্রফি। রেকর্ড ১১ বারের চ্যাম্পিয়ন দিদার ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে আসল দ্বৈরথটা হচ্ছে জীবন ও শাহজালালের মধ্যে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের বলীখেলায় ফাইনালে জীবনকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন শাহজালাল। এবার যেন তারই বদলা নিলেন ২৮ বছরের জীবন।

যুবসমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। সময়ের ব্যবধানে লালদীঘির মাঠে বসা ‘জব্বারের বলীখেলা’ হয়ে উঠেছে এই জনপদের অন্যতম আকর্ষণ। শুধু কি তাই? বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলাটিও বসে এখানে। কিন্তু করোনার থাবা এই আনন্দ-উৎসব থামিয়ে দিয়েছিল ২০২০ সালে। এরপর গত বছরও এই মেলা হয়নি একই কারণে। এবারও ঐতিহাসিক এই আয়োজনের ভবিষ্যৎ ঝুলছিল সুতার ওপর। শেষ পর্যন্ত সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় তিন বছর পর বলীখেলা দেখল নগরবাসী।

এবার আবদুল জব্বারের বলীখেলায় অংশ নিতে ৭২ জন বলী নিবন্ধন করেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ বছরের কিশোর যেমন ছিল, তেমনি ছিলেন ৭০ বছরের বলীও। প্রথম রাউন্ডে শখের বশে খেলতে আসা বলীরা অংশ নেন। এরপর হয় চ্যালেঞ্জ রাউন্ড। এই রাউন্ড থেকেই জয়ী হয়ে জীবন, শাহজালাল, মুবিন আর সৃজন চাকমা যান সেমিফাইনালে।

সেমিফাইনাল শেষে গতকাল ফাইনালে মুখোমুখি হন জীবন ও শাহজালাল।ফাইনালে দুই দুরন্ত বলীর লড়াইয়ে এক প্রস্থ নাটকও হলো। ২০ বাই ২০ হাতের চতুর্ভুজ আকৃতির রিংয়ে শক্তির লড়াইয়ে কেউ কাউকে ফেলতে না পেরে দুজনের মধ্যে বেশ কবার ধাক্কাধাক্কিও হলো।

পিঠ নিচে ফেলতে না পারলেও অবশ্য দুবার বয়সে ১০ বছরের বড় শাহজালালকে কুপোকাত করেন জীবন। তাতে তাঁর নামে যোগ হয় ২ পয়েন্ট। খেলার ২৫ মিনিটের মাথায় তাই রেফারি জীবনকে জয়ী ঘোষণা করে বসেন। তাতে চারপাশ থেকে হাজারো দর্শক প্রতিবাদ জানালে মেয়র ঘোষণা দেন আরও তিন মিনিট খেলা হবে। সেই তিন মিনিটেও কেউ কারও পিঠ মাটিতে ছোঁয়াতে পারেননি। সে জন্য জীবনকে চ্যাম্পিয়ন বেছে নিতে সমস্যা হয়নি রেফারির।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত আছেন জীবন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জীবন বলেন, ‘আমার নাম তারেকুল ইসলাম তারেক হলেও বাবা ভালোবেসে ডাকেন জীবন। আবদুল জব্বার বলীখেলার জন্য সেই নামটিই বিখ্যাত হয়ে গেল। সামনের আসরগুলোতে আরও শিরোপা চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত