রোকেয়া রহমান
প্যারিসের একটি শহরতলিতে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেল এমের নিহত হওয়ার ঘটনাটি ফ্রান্সে এ ধরনের মারাত্মক ঘটনার মধ্যে সর্বশেষ।
খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক পুলিশের হাতে এটি তৃতীয় হত্যাকাণ্ড। গত বছর এ ধরনের ১৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগে, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের আনগোলিম শহরে একইভাবে পুলিশের হাতে ১৯ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হন। দৃশ্যটি কেউ ক্যামেরাবন্দী না করায় ঘটনাটি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়নি।
প্যারিসের নানতেয়ার এলাকায় নাহেলকে গুলি করার দৃশ্যটি একজন পথচারী ভিডিও করেছিলেন। ওই ভিডিও ফুটেজটি পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনকে উল্টে দেয়। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাহেলের আচরণ দুই পুলিশ কর্মকর্তার জন্য ‘সরাসরি হুমকিমূলক’ ছিল। পুলিশের ওই দাবি একেবারে মিথ্যা। নাহেলকে গুলি করা হয়েছিল। কারণ পুলিশ তাকে থামতে বলেছিল, কিন্তু সে তা মানতে অস্বীকার করে।
ফরাসি আইনে, কেউ থামতে অস্বীকৃতি জানালে তা পুলিশকে হত্যা করার অধিকার দেয় না। এ কারণেই, যে পুলিশ কর্মকর্তা নাহেলকে গুলি করেছেন, তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তিনি শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হবেন। কারণ ফরাসি বিচারব্যবস্থা খুব কমই পুলিশ কর্মকর্তাদের নিন্দামন্দ করে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তড়িঘড়ি করে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অমার্জনীয়’ বলে মন্তব্য করেন। ফ্রান্সে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিন্দা করা সবচেয়ে অস্বাভাবিক। দেশটিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেউ পুলিশের সমালোচনা করার সাহস পায় না। আসলে এটা ছিল জনগণকে খুশি করার একটি প্রয়াস মাত্র। মাখোঁ আশঙ্কা করেছিলেন যে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে এবং প্রকৃতপক্ষে সেটাই হয়েছে।
ফ্রান্সে কয়েক দশক ধরে বর্ণবাদী পুলিশি বর্বরতা চলছে। বর্তমান দাঙ্গা ২০০৫ সালের ঘটনাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। সে বছর প্যারিসের শহরতলিতে আরব বংশোদ্ভূত দুই ফরাসি কিশোর জায়েদ বেন্না ও বোনা ট্রাউরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে লুকানোর চেষ্টা করলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। অ্যাদামা ট্রাউরের কেসটির কথাও ভাবুন: ২৪ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক পুলিশ হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শ্বাসরোধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বহু বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে, যা লিখলে এ নিবন্ধ দীর্ঘ হবে।
পুলিশি সহিংসতা কেন সম্প্রতি খবরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে? কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, শুধু শহরতলিতে বসবাসকারী লোকেরাই পুলিশের সহিংসতার শিকার হতো। গণমাধ্যমে এসব ঘটনা খুব একটা জায়গা পেত না। মূলধারার রাজনীতিবিদেরাও পুলিশের কোনো দোষের কথা স্বীকার করতেন না; বরং তাঁরা এটা বলতেন, পুলিশ এই প্রজাতন্ত্রের একটি বাহিনী এবং তারা সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ তাই কোনো অন্যায় করতে পারে না।
গত ১০ বছরে বা তারও বেশি সময় ধরে ফ্রান্সের ক্ষমতাপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী ক্রমবর্ধমানভাবে শহরের কেন্দ্রে রাজনৈতিক বিক্ষোভ দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর কৌশল ব্যবহার করেছে। ২০১৮ সালে ইয়েলো ভেস্টস বা হলুদ পোশাক আন্দোলন এবং ২০২২-২৩ সালে পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের নৃশংস ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশের বর্বরতা ও নির্বিচার গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের ‘ফ্ল্যাশ-বল’ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে গেছেন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড অনেককে পঙ্গু করে দিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত। মানুষ এখন বুঝতে পারছে, যে কেউ পুলিশের এই বর্বরতার শিকার হতে পারে। বামপন্থীদের বড় অংশ পুলিশের প্রতি আরও সরব হয়ে উঠেছে এবং ‘পুলিশের বর্বরতা’ কথাটি এখন গণমাধ্যমেও ব্যবহৃত হয়।
নাহেলকে নির্মমভাবে গুলি করা হয়েছিল। কারণ সে আলজেরীয় বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি কিশোর ছিল। তার মা ফরাসি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যে পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ছেলেকে গুলি করেছেন, তিনি ‘একটি আরব মুখ, একটি ছোট বাচ্চা দেখেছিলেন এবং তিনি তার জীবন নিতে চেয়েছিলেন।’
প্যারিসের শহরতলিতে অনেক জাতিগত সংখ্যালঘু যুবক প্রতিদিন পুলিশের হাতে উত্ত্যক্ত, হয়রানি এবং মারধরের শিকার হন। নাহেলের মায়ের এই বক্তব্য অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতি আমেরিকান জনসাধারণের কাছে পরিচিত হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ইউরোপীয় গণতন্ত্রে এটি ব্যতিক্রমী এবং মর্মান্তিক হিসেবে দেখা হয়।
ফরাসি পুলিশ বাহিনীতে প্রকৃতপক্ষে বর্ণবাদ বিষয়টি প্রবলভাবে বিদ্যমান; বিশেষ করে আপনি যদি আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ হন, তাহলে আপনি অবশ্যই প্রতিদিন পুলিশের বর্বরতার শিকার হবেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের ব্যাপক চর্চায় জড়িত, যা পদ্ধতিগত বৈষম্যের ফল। একটি বিরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ রায়ে ২০২১ সালে প্যারিস কোর্ট অব আপিল দেখেছে যে ২০১৭ সালে একটি ট্রেন স্টেশনে মরক্কোন, মালিয়ান ও কমোরিয়ান বংশোদ্ভূত তিনজন হাইস্কুল ছাত্রের পুলিশ আইডি পরীক্ষার পেছনে বৈষম্য ছিল।
পুলিশের এ ধরনের আচরণের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কোনো সরকারই সমস্যাটি সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের এই আইডি পরীক্ষার লক্ষ্য জাতিগত সংখ্যালঘু তরুণদের ‘অপমানিত’ করা। নাহেলের হত্যার পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় আবারও ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষকে ‘আইন প্রয়োগে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের গভীর সমস্যাগুলোকে গুরুত্বসহকারে সমাধান করার জন্য’ আহ্বান জানিয়েছে।
বরাবরের মতো, ফরাসি সরকার অস্বীকার করেছিল যে ‘পুলিশ বাহিনীতে বর্ণবাদ বা পদ্ধতিগত বৈষম্যের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ এটি অত্যন্ত বিদ্রূপাত্মক: ফ্রান্সের অভিজাতেরা বিশ্বাস করেন, ফরাসি প্রজাতন্ত্রের আদর্শের কেন্দ্রস্থলে ‘বর্ণ-অন্ধ’ নীতি প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষেধক। এটি ফরাসি বিপ্লবের উত্তরাধিকারগুলোর মধ্যে একটি, যা শ্রেণিপ্রবণ প্রাচীন শাসনকে ভেঙে সবার সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
তাই বলে রাষ্ট্র কারও ঠিকুজি-কোষ্ঠী বিচার করবে না এই বলে যে, ভিন্ন জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণে সে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই কারণেই তো মূলধারার রাজনীতিতে কেউই সেই ফরাসি বিপ্লবের সাম্যের এই বিমূর্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে রাজি নয়। অনেকেই জানেন যে এটি একটি অলীক কল্পনা, কিন্তু সবাই চুপ করে থাকে। কারণ ফ্রান্সে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং এর ‘মূল্যবোধ’ পবিত্র।
২০১৭ সালের একটি বিল পাসের পর থেকে ফ্রান্সে পুলিশি বর্বরতা আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের আইন করে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, যদি তাঁরা দেখেন চালক বা গাড়ির যাত্রীরা ‘পুলিশের জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’। পুলিশ ইউনিয়ন তৎকালীন বাম ঘরানার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং তারা যা চেয়েছিল তা পেয়েছে। ফ্রান্সের একটি বামপন্থী সরকারও পুলিশ অফিসারদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আইন পরিবর্তন করেছে এবং পুলিশের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য পেনাল কোডটি আবার লিখেছে।
ফরাসি বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস লিগ বলেছে, আইনটিতে অফিসারদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে কোনো বাধা না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ এটি তাদের গুলি এবং হত্যার জন্য আইনি সুরক্ষা দেয়। এটি সত্য যে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে পুলিশের গুলিতে হতাহত মানুষের সংখ্যা (তাদের বেশির ভাগই আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ) বেড়েই চলেছে: ২০১৭ সালে ২৭, ২০২০ সালে ৪০ ও ২০২১ সালে ৫২ জন নিহত হয়েছে।
নাহেল হত্যাকাণ্ডে গোটা ফ্রান্স এখন বিক্ষোভে উত্তাল। কিন্তু বর্ণবাদী আচরণের শিকার অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁরা ভয় পান যে এসব বিক্ষোভ তাঁদের বিরোধিতাকারীদের সঠিক প্রমাণ করবে এবং জনস্বাধীনতা খর্ব করার আরও বিল পাসের মাধ্যমে তাঁদের ওপর নিপীড়ন আরও জোরদার করবে। দেখা যাচ্ছে খোদ রাষ্ট্রই পুলিশকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের হাত থেকে ফ্রান্সের এসব জাতিগত সংখ্যালঘু শিশুদের তাহলে রক্ষা করবে কে?
ফিলিপ মারলিয়ার, অধ্যাপক, ফরাসি ও ইউরোপীয় রাজনীতি, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন
(কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
প্যারিসের একটি শহরতলিতে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেল এমের নিহত হওয়ার ঘটনাটি ফ্রান্সে এ ধরনের মারাত্মক ঘটনার মধ্যে সর্বশেষ।
খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়। এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক পুলিশের হাতে এটি তৃতীয় হত্যাকাণ্ড। গত বছর এ ধরনের ১৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগে, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের আনগোলিম শহরে একইভাবে পুলিশের হাতে ১৯ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হন। দৃশ্যটি কেউ ক্যামেরাবন্দী না করায় ঘটনাটি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়নি।
প্যারিসের নানতেয়ার এলাকায় নাহেলকে গুলি করার দৃশ্যটি একজন পথচারী ভিডিও করেছিলেন। ওই ভিডিও ফুটেজটি পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনকে উল্টে দেয়। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাহেলের আচরণ দুই পুলিশ কর্মকর্তার জন্য ‘সরাসরি হুমকিমূলক’ ছিল। পুলিশের ওই দাবি একেবারে মিথ্যা। নাহেলকে গুলি করা হয়েছিল। কারণ পুলিশ তাকে থামতে বলেছিল, কিন্তু সে তা মানতে অস্বীকার করে।
ফরাসি আইনে, কেউ থামতে অস্বীকৃতি জানালে তা পুলিশকে হত্যা করার অধিকার দেয় না। এ কারণেই, যে পুলিশ কর্মকর্তা নাহেলকে গুলি করেছেন, তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তিনি শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হবেন। কারণ ফরাসি বিচারব্যবস্থা খুব কমই পুলিশ কর্মকর্তাদের নিন্দামন্দ করে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তড়িঘড়ি করে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অমার্জনীয়’ বলে মন্তব্য করেন। ফ্রান্সে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিন্দা করা সবচেয়ে অস্বাভাবিক। দেশটিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেউ পুলিশের সমালোচনা করার সাহস পায় না। আসলে এটা ছিল জনগণকে খুশি করার একটি প্রয়াস মাত্র। মাখোঁ আশঙ্কা করেছিলেন যে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে এবং প্রকৃতপক্ষে সেটাই হয়েছে।
ফ্রান্সে কয়েক দশক ধরে বর্ণবাদী পুলিশি বর্বরতা চলছে। বর্তমান দাঙ্গা ২০০৫ সালের ঘটনাগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। সে বছর প্যারিসের শহরতলিতে আরব বংশোদ্ভূত দুই ফরাসি কিশোর জায়েদ বেন্না ও বোনা ট্রাউরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে লুকানোর চেষ্টা করলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। অ্যাদামা ট্রাউরের কেসটির কথাও ভাবুন: ২৪ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক পুলিশ হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শ্বাসরোধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বহু বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে, যা লিখলে এ নিবন্ধ দীর্ঘ হবে।
পুলিশি সহিংসতা কেন সম্প্রতি খবরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে? কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, শুধু শহরতলিতে বসবাসকারী লোকেরাই পুলিশের সহিংসতার শিকার হতো। গণমাধ্যমে এসব ঘটনা খুব একটা জায়গা পেত না। মূলধারার রাজনীতিবিদেরাও পুলিশের কোনো দোষের কথা স্বীকার করতেন না; বরং তাঁরা এটা বলতেন, পুলিশ এই প্রজাতন্ত্রের একটি বাহিনী এবং তারা সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ তাই কোনো অন্যায় করতে পারে না।
গত ১০ বছরে বা তারও বেশি সময় ধরে ফ্রান্সের ক্ষমতাপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী ক্রমবর্ধমানভাবে শহরের কেন্দ্রে রাজনৈতিক বিক্ষোভ দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর কৌশল ব্যবহার করেছে। ২০১৮ সালে ইয়েলো ভেস্টস বা হলুদ পোশাক আন্দোলন এবং ২০২২-২৩ সালে পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের নৃশংস ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশের বর্বরতা ও নির্বিচার গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের ‘ফ্ল্যাশ-বল’ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে গেছেন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যবহৃত গ্রেনেড অনেককে পঙ্গু করে দিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত। মানুষ এখন বুঝতে পারছে, যে কেউ পুলিশের এই বর্বরতার শিকার হতে পারে। বামপন্থীদের বড় অংশ পুলিশের প্রতি আরও সরব হয়ে উঠেছে এবং ‘পুলিশের বর্বরতা’ কথাটি এখন গণমাধ্যমেও ব্যবহৃত হয়।
নাহেলকে নির্মমভাবে গুলি করা হয়েছিল। কারণ সে আলজেরীয় বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি কিশোর ছিল। তার মা ফরাসি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যে পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ছেলেকে গুলি করেছেন, তিনি ‘একটি আরব মুখ, একটি ছোট বাচ্চা দেখেছিলেন এবং তিনি তার জীবন নিতে চেয়েছিলেন।’
প্যারিসের শহরতলিতে অনেক জাতিগত সংখ্যালঘু যুবক প্রতিদিন পুলিশের হাতে উত্ত্যক্ত, হয়রানি এবং মারধরের শিকার হন। নাহেলের মায়ের এই বক্তব্য অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। এই ভয়ংকর পরিস্থিতি আমেরিকান জনসাধারণের কাছে পরিচিত হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ইউরোপীয় গণতন্ত্রে এটি ব্যতিক্রমী এবং মর্মান্তিক হিসেবে দেখা হয়।
ফরাসি পুলিশ বাহিনীতে প্রকৃতপক্ষে বর্ণবাদ বিষয়টি প্রবলভাবে বিদ্যমান; বিশেষ করে আপনি যদি আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ হন, তাহলে আপনি অবশ্যই প্রতিদিন পুলিশের বর্বরতার শিকার হবেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের ব্যাপক চর্চায় জড়িত, যা পদ্ধতিগত বৈষম্যের ফল। একটি বিরল কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ রায়ে ২০২১ সালে প্যারিস কোর্ট অব আপিল দেখেছে যে ২০১৭ সালে একটি ট্রেন স্টেশনে মরক্কোন, মালিয়ান ও কমোরিয়ান বংশোদ্ভূত তিনজন হাইস্কুল ছাত্রের পুলিশ আইডি পরীক্ষার পেছনে বৈষম্য ছিল।
পুলিশের এ ধরনের আচরণের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কোনো সরকারই সমস্যাটি সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের এই আইডি পরীক্ষার লক্ষ্য জাতিগত সংখ্যালঘু তরুণদের ‘অপমানিত’ করা। নাহেলের হত্যার পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় আবারও ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষকে ‘আইন প্রয়োগে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের গভীর সমস্যাগুলোকে গুরুত্বসহকারে সমাধান করার জন্য’ আহ্বান জানিয়েছে।
বরাবরের মতো, ফরাসি সরকার অস্বীকার করেছিল যে ‘পুলিশ বাহিনীতে বর্ণবাদ বা পদ্ধতিগত বৈষম্যের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ এটি অত্যন্ত বিদ্রূপাত্মক: ফ্রান্সের অভিজাতেরা বিশ্বাস করেন, ফরাসি প্রজাতন্ত্রের আদর্শের কেন্দ্রস্থলে ‘বর্ণ-অন্ধ’ নীতি প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষেধক। এটি ফরাসি বিপ্লবের উত্তরাধিকারগুলোর মধ্যে একটি, যা শ্রেণিপ্রবণ প্রাচীন শাসনকে ভেঙে সবার সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
তাই বলে রাষ্ট্র কারও ঠিকুজি-কোষ্ঠী বিচার করবে না এই বলে যে, ভিন্ন জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণে সে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই কারণেই তো মূলধারার রাজনীতিতে কেউই সেই ফরাসি বিপ্লবের সাম্যের এই বিমূর্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে রাজি নয়। অনেকেই জানেন যে এটি একটি অলীক কল্পনা, কিন্তু সবাই চুপ করে থাকে। কারণ ফ্রান্সে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং এর ‘মূল্যবোধ’ পবিত্র।
২০১৭ সালের একটি বিল পাসের পর থেকে ফ্রান্সে পুলিশি বর্বরতা আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের আইন করে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, যদি তাঁরা দেখেন চালক বা গাড়ির যাত্রীরা ‘পুলিশের জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’। পুলিশ ইউনিয়ন তৎকালীন বাম ঘরানার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং তারা যা চেয়েছিল তা পেয়েছে। ফ্রান্সের একটি বামপন্থী সরকারও পুলিশ অফিসারদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আইন পরিবর্তন করেছে এবং পুলিশের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য পেনাল কোডটি আবার লিখেছে।
ফরাসি বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস লিগ বলেছে, আইনটিতে অফিসারদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে কোনো বাধা না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ এটি তাদের গুলি এবং হত্যার জন্য আইনি সুরক্ষা দেয়। এটি সত্য যে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে পুলিশের গুলিতে হতাহত মানুষের সংখ্যা (তাদের বেশির ভাগই আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ) বেড়েই চলেছে: ২০১৭ সালে ২৭, ২০২০ সালে ৪০ ও ২০২১ সালে ৫২ জন নিহত হয়েছে।
নাহেল হত্যাকাণ্ডে গোটা ফ্রান্স এখন বিক্ষোভে উত্তাল। কিন্তু বর্ণবাদী আচরণের শিকার অনেকে সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁরা ভয় পান যে এসব বিক্ষোভ তাঁদের বিরোধিতাকারীদের সঠিক প্রমাণ করবে এবং জনস্বাধীনতা খর্ব করার আরও বিল পাসের মাধ্যমে তাঁদের ওপর নিপীড়ন আরও জোরদার করবে। দেখা যাচ্ছে খোদ রাষ্ট্রই পুলিশকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের হাত থেকে ফ্রান্সের এসব জাতিগত সংখ্যালঘু শিশুদের তাহলে রক্ষা করবে কে?
ফিলিপ মারলিয়ার, অধ্যাপক, ফরাসি ও ইউরোপীয় রাজনীতি, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন
(কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে