মানবতার মড়ক

রহমান মৃধা
Thumbnail image

দেশ ও জাতিকে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম কাজ। সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের ব্যর্থতায়, বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বস্তরে দুর্নীতির ছোঁয়া লেগেছে। যে দেশে কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন, লাখ লাখ কর্মকর্তা থাকতেও ভেজালবিরোধী অভিযানে সফলতা নেই, সেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের এই দুর্দিনে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।

যে দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা জীবন্ত মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করে, যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যে দেশে শিক্ষকসমাজ আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী, স্বার্থপর ও চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে, বঙ্গবন্ধুর সে দেশে এ নিশ্চয়ই ষড়্‌যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। মনে হচ্ছে এ ধরনের শকুনের দল দেশে জন্মেছে সুশাসনকে ধ্বংস করতে।

এদিকে পৃথিবীর সব দেশের কূটনীতিকেরা সবকিছু দেখছেন, তারপরও তাঁরা নীরবতা পালন করছেন, কারণ কী? তাঁরা কি চান যেসব দেশ সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবাজদের কবলে 
পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, নিজেরা নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে, বাংলাদেশও ঠিক সেই পথে যাক? সারাক্ষণ দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে দেশের উদীয়মান পথকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে যারা উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের মেনে নিয়ে কীভাবে দেশপ্রেমিক জাতি নীরবতা পালন করছে?

শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে দেশ থেকে পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কারও শত শত কোটি টাকা ব্যাংকে। তদন্ত চলে, দুদক নোটিশ জারি করে যেন তারা দেশ ত্যাগ করতে না পারে। তারপরও তারা ইমিগ্রেশনের চোখের সামনে দিয়ে শত শত কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়! স্যাটেলাইটের তাহলে কি ব্যবহার হচ্ছে? নাকি সেই দুর্নীতির টাকার কিছু অংশ ঘুষ দিয়ে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়? মেহনতি মানুষ, কৃষক কিংবা মজুরের টাকা দিয়ে যাদের দেশের বর্ডার রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে, আজ তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন আসে—কী দরকার আছে তাহলে এসব জীবন্ত প্রতিমূর্তি লালন-পালন করে? দুদক যদি না পারে তার দায়িত্ব পালন করতে, পুলিশ যদি না পারে সৎপথে থেকে দেশকে রক্ষা করতে, সচিবেরা যদি না পারে দেশ চালাতে, রাজনীতিবিদেরা যদি না পারে দেশ সামলাতে, তবে পুরো দেশের মানুষের কাছে একটিই অনুরোধ—নতুন করে স্বাধীনতার জন্য ঘরে ঘরে দুর্গ তুলে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।

অথচ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সবাই নীরব, মুখোশ খুলে দেওয়ার কাজে মন দেবে কী? জনগণ ভোট দেওয়া থেকে বিরত, জনগণ প্রতিবাদ করা থেকে বিরত হয়ে পুতুলের মতো নীরবতা পালন করছে। কারণ কী? তাহলে কি এই জনগণের আপনজনেরাই এসব অরাজকতার জন্য দায়ী?

বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে আর কিছু বাকি নেই যেন। বিবেকের মৃত্যু হয়েছে, অথবা তাকে নিথর করে রাখা হয়েছে। যে দেশে ডজন ডজন মন্ত্রী, শত শত এমপি থাকতেও বিপদগ্রস্ত মানুষ সাহায্যের জন্য আকুতি-মিনতি করে, সে দেশের মানুষ আদৌ কি বিপদমুক্ত হতে পারবে? দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কার কাজ? প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবাই বিচার চায়। অথচ যাঁরা বিচার করার জন্য বেতন নিচ্ছেন, কী করছেন তাঁরা? কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে? আর সুশাসন ব্যতীত কীভাবে কাঙ্ক্ষিত 
উন্নয়ন সাধিত হবে?  

দেশের কিছু মানুষ যখন বেইমান হয়ে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বকে, ঠিক তখন মরণ হয় মানবতার। মড়ক হয়েছে মানবতার আর আবির্ভাব হয়েছে শকুনদের। মড়কের অবসান ঘটিয়ে কখন এই শকুনের দল দূর হবে বাংলাদেশ থেকে—সেটাই এখন প্রশ্ন!

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত