মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কান পেতে থাকতাম। পদ্মা নদীর ভাঙনকবলিত গ্রামের সব মানুষ একসঙ্গে রেডিও শুনতাম। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। খুব বেশি না বুঝলেও এটা বুঝতাম যে তারা (পাকিস্তানি) আমাদের সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত করছে। জুলুম নির্যাতন করে শোষণ করছে। এরই মধ্যে একদিন শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ। সেই ভাষণের পরই ধরে নিলাম, পরাধীনতার দিন শেষ হতে চলেছে। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও পাড়া-প্রতিবেশী বড় ভাইদের সহযোগিতায় রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম আমিও। এই যুদ্ধে শত্রুর গুলি বুকে এসে লেগেছে আমার। তবু থেমে যাইনি, বুকে গুলি বরণ করে দেশ স্বাধীন করেছি।’
এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইদুর রহমান। তিনি এখনো বুকের ডান পাশে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর আবারও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর মিছিল দেখেছি। তবে চারদিকে লাশের স্তূপ দেখেও আতঙ্কিত হইনি। সব সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। দেশবাসীর সহযোগিতা ও সহযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছি। বাড়ির সবাই জানত যুদ্ধে আমি মারা গেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে বীরের বেশে বাড়ি ফেরার পর সবাই অবাক হয়েছে।’
সাইদুর রহমান ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৩ নম্বর মহদিপুর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কাজী নুরুজ্জামান (২৭ সেপ্টেম্বরের আগে দায়িত্বে ছিলেন, মেজর নাজমুল হক) ও সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন,‘ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের অধীনে যুদ্ধ করলেও তাঁর সঙ্গে সরাসরি কখনো দেখা হয়নি। ক্যাপ্টেন গিয়াস ও ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নির্দেশনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লাবাড়ি-ধোবড়া এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।’
যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার এনায়েতপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ছাত্রসহ অপেশাদার মুক্তিযোদ্ধাদের। এক ব্যাচে ১০০ জন এই প্রশিক্ষণে অংশ নিতেন। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গৌড় বাগানে। সেখানে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। ১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাড়াহুড়ো করে প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়। কারণ, প্রশিক্ষণ নিতে পাইপলাইনে অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের সুযোগ করে দিতেই ১ মাস ৮ দিনে আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়।’
বুকে গুলি ও হাসপাতালের অভিজ্ঞতা: একটি সম্মুখযুদ্ধে ২১ সেপ্টেম্বর শত্রুর একটি গুলি আঘাত করে সাইদুর রহমানের বুকের ডান পাশে। আহত অবস্থায় সহযোদ্ধারা তাঁকে মালদা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে মাসখানেক চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা নেওয়ার সময় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেখতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখলাম কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল তারা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে ১৯৫৮ সালের ১১ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের জন্ম। তাঁর বাবা রিয়াজ উদ্দিন মণ্ডল ও মা মাজেদা বেগম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাইদুর রহমান মোল্লাটোলা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীনের পর তিনি আরও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের চামা গ্রামে। সেই কলেজে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
বর্তমানে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইদুর রহমান কোরআন-হাদিস, বিভিন্ন বই পড়ে অবসর সময় কাটান। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কান পেতে থাকতাম। পদ্মা নদীর ভাঙনকবলিত গ্রামের সব মানুষ একসঙ্গে রেডিও শুনতাম। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। খুব বেশি না বুঝলেও এটা বুঝতাম যে তারা (পাকিস্তানি) আমাদের সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত করছে। জুলুম নির্যাতন করে শোষণ করছে। এরই মধ্যে একদিন শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ। সেই ভাষণের পরই ধরে নিলাম, পরাধীনতার দিন শেষ হতে চলেছে। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও পাড়া-প্রতিবেশী বড় ভাইদের সহযোগিতায় রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম আমিও। এই যুদ্ধে শত্রুর গুলি বুকে এসে লেগেছে আমার। তবু থেমে যাইনি, বুকে গুলি বরণ করে দেশ স্বাধীন করেছি।’
এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইদুর রহমান। তিনি এখনো বুকের ডান পাশে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর আবারও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর মিছিল দেখেছি। তবে চারদিকে লাশের স্তূপ দেখেও আতঙ্কিত হইনি। সব সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। দেশবাসীর সহযোগিতা ও সহযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছি। বাড়ির সবাই জানত যুদ্ধে আমি মারা গেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে বীরের বেশে বাড়ি ফেরার পর সবাই অবাক হয়েছে।’
সাইদুর রহমান ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে ৩ নম্বর মহদিপুর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কাজী নুরুজ্জামান (২৭ সেপ্টেম্বরের আগে দায়িত্বে ছিলেন, মেজর নাজমুল হক) ও সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন,‘ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের অধীনে যুদ্ধ করলেও তাঁর সঙ্গে সরাসরি কখনো দেখা হয়নি। ক্যাপ্টেন গিয়াস ও ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নির্দেশনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লাবাড়ি-ধোবড়া এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।’
যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সাইদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার এনায়েতপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ছাত্রসহ অপেশাদার মুক্তিযোদ্ধাদের। এক ব্যাচে ১০০ জন এই প্রশিক্ষণে অংশ নিতেন। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গৌড় বাগানে। সেখানে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। ১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাড়াহুড়ো করে প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়। কারণ, প্রশিক্ষণ নিতে পাইপলাইনে অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের সুযোগ করে দিতেই ১ মাস ৮ দিনে আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়।’
বুকে গুলি ও হাসপাতালের অভিজ্ঞতা: একটি সম্মুখযুদ্ধে ২১ সেপ্টেম্বর শত্রুর একটি গুলি আঘাত করে সাইদুর রহমানের বুকের ডান পাশে। আহত অবস্থায় সহযোদ্ধারা তাঁকে মালদা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে মাসখানেক চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা নেওয়ার সময় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেখতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখলাম কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল তারা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে ১৯৫৮ সালের ১১ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের জন্ম। তাঁর বাবা রিয়াজ উদ্দিন মণ্ডল ও মা মাজেদা বেগম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাইদুর রহমান মোল্লাটোলা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীনের পর তিনি আরও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের চামা গ্রামে। সেই কলেজে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
বর্তমানে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইদুর রহমান কোরআন-হাদিস, বিভিন্ন বই পড়ে অবসর সময় কাটান। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে