হাসান মামুন
শীতকালীন সবজি ওঠার সময়টায় এর দাম একটু বেশি থাকবেই। তবে এবার যে হারে দাম বেড়েছে, সেটা কখনো দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ভোক্তার। সবজির মধ্যে পেঁপেই মোটামুটি সহজলভ্য। এটা সবচেয়ে বেশি বিক্রীত সবজি আলুর চেয়ে সস্তা এখন।
২১ অক্টোবরের আজকের পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘আলু, মুলা, পেঁপে ছাড়া সব সবজি ১০০ টাকার ওপর!’ কাঁচা মরিচকে সবজি বিবেচনা করলে অবশ্য বলতে হয়, এর কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকার বেশি। অবশ্য খুচরা ক্রেতারা এক কেজি কাঁচা মরিচ কমই কেনেন। এর দাম তো মাঝে রেকর্ড করেছিল। কাঁচা মরিচ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন। কাঁচা মরিচও যে আমদানি করতে হতে পারে, সেটা এখন অনেকেই জানেন। এসব কৃষিপণ্যেও আমরা সব সময় ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ থাকি না। দেশে কমপক্ষে ১৭ কোটি মানুষ। তাদের সবজি পরিভোগ কত! এর উৎপাদনও বেড়েছে। সময়ে-সময়ে বাজার অস্থির হলে সবজি নিয়ে পৃথক প্রতিবেদনও হয়ে থাকে।
আজকের পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে একজন রিকশাচালকের যে উক্তি রয়েছে, তা পড়ে সংবেদনশীল মানুষ মাত্রই বেদনার্ত হবেন। তিনি বলেছেন, প্রায় সব সবজির দাম একযোগে বাড়ার সময়টায় ভাতের সঙ্গে শুধু পেঁপেভর্তা জুটছে তাঁদের। তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘কয়দিন পর পেঁপেডাও খাইতে পারমু কি না, ভাবতিছি!’ তাঁকে আশ্বস্ত করে বলা যায়, সবজির দাম সামনে কমবে।
কত দিনে আর কতটা কমবে, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। তবে এ পরিস্থিতি থাকবে না সবজির সরবরাহ বাড়লে। কিছুদিন আগে কদিন টানা ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে দেশে। তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার শঙ্কাও ছিল। সেই বিপদ আপাতত কেটেছে। তবে ভারী বৃষ্টিতে জমিতে সবজির ক্ষতি কম হয়নি। রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির ‘আমদানি’ কম।
সবজি সেই অর্থে আমদানি করতে হয় না আমাদের। তবে মাঝে আলুর দাম কিছুতেই কমাতে না পেরে ‘সীমিতভাবে’ এটা আমদানির প্রস্তাব করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। আলুসহ তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য জানাই ছিল, উদ্যোগটি ব্যর্থ হবে। বাজার অর্থনীতিতে এভাবে দাম বেঁধে দিলে অনেক ক্ষেত্রে উল্টো ফল হয়। সেটা না হলেও বাজার তার নিয়মেই চলছে। ডিম, পেঁয়াজের পাশাপাশি আলুর দাম একটুও কমেনি; বরং বাড়তির দিকে। আজকের পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে এ কথাটাও রয়েছে, অন্যান্য সবজির দাম বেশি বলে আলুর চাহিদা বেশি। তাই এর দাম আরও বাড়তেও পারে।
পণ্যবাজারে এসব পর্যবেক্ষণ জরুরি। সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য অবশ্য উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত থাকতে হয়। এই সমালোচনা বাড়ছে যে সরকারের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কম। এর ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন। যেমন আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার সময় এর উৎপাদন নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছিল, তার সঙ্গে একমত হচ্ছিলেন না হিমাগারের মালিকেরা। তাঁরা বলছিলেন, আলুর উৎপাদন এবার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সে কারণে হিমাগারগুলোর একাংশ রয়ে গেছে ফাঁকা। শেষে ভোক্তা অধিদপ্তর আলু আমদানির যে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, এতে কি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যই সত্য বলে বিবেচিত হবে না?
এখন সবজির দাম বেশি থাকলে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর দাম বাড়তে বাড়তে কেজিপ্রতি ৬০ টাকাও হয়ে যেতে পারে। এদিকে আলু আমদানি বোধ হয় হতে যাচ্ছে না। তবে ‘আগাম আলু’ উৎপাদনে লেগে পড়েছেন কৃষক। ভালো দাম পাওয়ার আশা তাঁদের। এখন সেই আলু যত দ্রুত বাজারে আসে, ততই ভালো। হিমাগারে রাখা আলুর দাম তখন হয়তো আর বাড়বে না। কোনো পণ্যের দাম আর বাড়তে না দেওয়াটাও সংশ্লিষ্টদের সাফল্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এর আগে ইলিশের বাড়তে থাকা দাম নিয়ে এখানে লিখেছিলাম। প্রজনন মৌসুম বিবেচনায় ইলিশ ধরা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাজারে ইলিশ না থাকায় মাছের দাম কি আরও বেড়েছে? এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চোখে পড়েনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এমনও হতে পারে, আগে ইলিশের মৌসুমে মাছের বাজারে এর যে একটা প্রভাব থাকত–এখন সেটা আর নেই। কারণ ইলিশ ‘অভিজাত মাছ’ হয়ে উঠেছে। এর ক্রেতাগোষ্ঠী আলাদা। সাধারণ মানুষ যেসব মাছ কেনে, সেগুলোর দাম বাজারে ইলিশ থাকাকালেও বাড়ন্ত। এখনো সে রকমই। চাষের পাঙাশ, তেলাপিয়া, কই প্রভৃতির কথা বলছি। এসবের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ওঠাটা পৃথক খবর হয়েছিল মাঝে।
অক্টোবরের শেষদিকে এসে ওগুলোর দাম কমার কারণ নেই। কমেছে বলে খবরও মিলছে না। দেশে রুই-কাতলার উৎপাদনও ভালো। কিছু আমদানিও হয়ে থাকে প্রতিবেশী দেশ থেকে। সেগুলোও চাষের মাছ। মাছ চাষে খরচ কিন্তু বেড়েছে। প্রধানত বেড়েছে ফিডের দাম। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বাড়ায়ও মাছের দাম বেড়েছে। সঙ্গে অদৃশ্য আর কম আলোচিত কারণও কি নেই?
নতুন আলু বাজারে এলে এর দাম কিছুটা কমবে কিংবা ঊর্ধ্বগতি রোধ হবে। অন্যান্য সবজির বেলায়ও একই কথা। আলুর পর সবচেয়ে বেশি নাকি বিক্রি হয় বেগুন। বেগুনসহ নানা রকম সবজি ফলিয়ে কৃষক নাম করে ফেলেছেন। কিন্তু ‘ভালো দাম’ পাচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদক সবজির খবর দিতে গিয়ে লিখছেন, কৃষক দাম পাচ্ছেন। যাঁরা জমি থেকেই সবজি তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীর হাতে, তাঁরাও কি ভালো দাম পাচ্ছেন? নাকি মোকামে এনে যাঁরা বিক্রি করছেন, তাঁরা? এসব খবর পরিষ্কারভাবে পেলে ভালো হয়।
যারা শহর-বন্দরে কৃষিপণ্য কিনি–তারা তো চাই, এর উৎপাদক যেন চড়া দামের ন্যায্য হিস্যা পান। তাহলে তাঁর জীবনমান ভালো হবে। পরবর্তী উৎপাদনেও উৎসাহ পাবেন কৃষক। তাঁদের তো উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। যাতায়াতব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় কৃষিপণ্যের দামে ব্যাপক তারতম্যটা এখন কমে আসার কথা। আরও ভালো হতো উৎপাদিত পণ্য অধিক দামের আশায় ধরে রাখার ক্ষেত্রে কৃষকের সক্ষমতা বাড়লে। সেই উদ্যোগ প্রয়োজন। আলুর মতো পণ্যের সংরক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণের কিছু আলাপ তো মাঝে শোনা গিয়েছিল।
সবজির দাম এবার এতটা বাড়ল কেন, তার ব্যাখ্যা অবশ্য প্রয়োজন। কোন উপাদানটি এতে বেশি ‘অবদান’ রেখেছে, সেটা খতিয়ে দেখা চাই। চট করে ‘সিন্ডিকেট’কে অভিযুক্ত করার একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে দেশে। অতিমুনাফার প্রবণতা আর সিন্ডিকেটবাজি তো এক নয়। বহু বিক্রেতার বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা করাও কঠিন। এটা অবশ্য থাকতে পারে ভোজ্যতেল, চিনি, আটা-ময়দার বাজারে। ভোজ্যতেল ও আটা-ময়দার দাম কিন্তু কিছুটা কমে এসেছে।
এগুলো সবজির মতো দেশে উৎপাদিত নয়। প্রধানত আমদানি হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এখানেও কমার কথা। কিন্তু সেভাবে কমছে কোথায়! এই অসংগতি নিয়েও মাঝে প্রতিবেদন হয়েছিল। ওই সব পণ্যের হাতে গোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বসেও দাম ‘যৌক্তিক’ করতে পারেনি ট্যারিফ কমিশন। এসব ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট’ আছে বলা যেতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী তো তাদের বিষয়ে কঠোর হতে চাইছেন না। তাতে পণ্যবাজার নাকি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে!
যে ক্রেতা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছেন, সামনে পেঁপেটাও কিনতে পারবেন কি না–তাঁর বক্তব্য কিন্তু সরকারের কাজে অনাস্থার একটা প্রকাশ। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবে বাড়লেও এতটা অনাস্থা বোধ হয় জাগত না। হাতে হাতে সেলফোন থাকার সময়টায় লোকে কিন্তু আশপাশের দেশ আর পরিচিত বিশ্বের খবর পেয়ে যায় মুহূর্তেই।
ঘরের পাশে কলকাতায় কত দামে গরু-মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে, সে খবর মানুষ দ্রুতই পেয়ে যায়–যখন তার পাত থেকে এটা উধাও অনেক দিন ধরে। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই ‘ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে’ এমনটা ঘটছে বলে বয়ানে সে আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। গভীর সংকটে নিপতিত শ্রীলঙ্কাও যখন ঘুরে দাঁড়ায় দ্রুত, তখনো তার মনে সহজেই প্রশ্ন জাগে এ দেশে বাজার পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হচ্ছে দেখে।
সমস্যাটা তাঁদের বেশি, যাঁরা বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলেয়ে আয় বাড়াতে পারছেন না। মজুরি বাড়ছে না, তা নয়। তবে মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সরকারের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ‘ইউরোপীয় মানের’ জীবন কাটাচ্ছেন এ দেশে। সেটা বেঠিক নয়।
চড়তে থাকা পণ্যবাজার থেকে ফায়দা তুলে নেওয়া জনগোষ্ঠীও এর মধ্যে আছে। তাদের সংখ্যাটা দুনিয়ার কোনো কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। কিন্তু এরাই তো বাংলাদেশ নয়। এদের বাইরে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রয়েছে, তাদের নিত্যদিনের ভোগান্তিও গভীর বিবেচনার বিষয়। পণ্যবাজারে অন্তত স্বাভাবিকতা দেখতে পাওয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
শীতকালীন সবজি ওঠার সময়টায় এর দাম একটু বেশি থাকবেই। তবে এবার যে হারে দাম বেড়েছে, সেটা কখনো দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ভোক্তার। সবজির মধ্যে পেঁপেই মোটামুটি সহজলভ্য। এটা সবচেয়ে বেশি বিক্রীত সবজি আলুর চেয়ে সস্তা এখন।
২১ অক্টোবরের আজকের পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘আলু, মুলা, পেঁপে ছাড়া সব সবজি ১০০ টাকার ওপর!’ কাঁচা মরিচকে সবজি বিবেচনা করলে অবশ্য বলতে হয়, এর কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকার বেশি। অবশ্য খুচরা ক্রেতারা এক কেজি কাঁচা মরিচ কমই কেনেন। এর দাম তো মাঝে রেকর্ড করেছিল। কাঁচা মরিচ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন। কাঁচা মরিচও যে আমদানি করতে হতে পারে, সেটা এখন অনেকেই জানেন। এসব কৃষিপণ্যেও আমরা সব সময় ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ থাকি না। দেশে কমপক্ষে ১৭ কোটি মানুষ। তাদের সবজি পরিভোগ কত! এর উৎপাদনও বেড়েছে। সময়ে-সময়ে বাজার অস্থির হলে সবজি নিয়ে পৃথক প্রতিবেদনও হয়ে থাকে।
আজকের পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে একজন রিকশাচালকের যে উক্তি রয়েছে, তা পড়ে সংবেদনশীল মানুষ মাত্রই বেদনার্ত হবেন। তিনি বলেছেন, প্রায় সব সবজির দাম একযোগে বাড়ার সময়টায় ভাতের সঙ্গে শুধু পেঁপেভর্তা জুটছে তাঁদের। তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘কয়দিন পর পেঁপেডাও খাইতে পারমু কি না, ভাবতিছি!’ তাঁকে আশ্বস্ত করে বলা যায়, সবজির দাম সামনে কমবে।
কত দিনে আর কতটা কমবে, সেটা অবশ্য বলা যাবে না। তবে এ পরিস্থিতি থাকবে না সবজির সরবরাহ বাড়লে। কিছুদিন আগে কদিন টানা ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে দেশে। তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার শঙ্কাও ছিল। সেই বিপদ আপাতত কেটেছে। তবে ভারী বৃষ্টিতে জমিতে সবজির ক্ষতি কম হয়নি। রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির ‘আমদানি’ কম।
সবজি সেই অর্থে আমদানি করতে হয় না আমাদের। তবে মাঝে আলুর দাম কিছুতেই কমাতে না পেরে ‘সীমিতভাবে’ এটা আমদানির প্রস্তাব করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। আলুসহ তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য জানাই ছিল, উদ্যোগটি ব্যর্থ হবে। বাজার অর্থনীতিতে এভাবে দাম বেঁধে দিলে অনেক ক্ষেত্রে উল্টো ফল হয়। সেটা না হলেও বাজার তার নিয়মেই চলছে। ডিম, পেঁয়াজের পাশাপাশি আলুর দাম একটুও কমেনি; বরং বাড়তির দিকে। আজকের পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে এ কথাটাও রয়েছে, অন্যান্য সবজির দাম বেশি বলে আলুর চাহিদা বেশি। তাই এর দাম আরও বাড়তেও পারে।
পণ্যবাজারে এসব পর্যবেক্ষণ জরুরি। সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য অবশ্য উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত থাকতে হয়। এই সমালোচনা বাড়ছে যে সরকারের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কম। এর ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন। যেমন আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার সময় এর উৎপাদন নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছিল, তার সঙ্গে একমত হচ্ছিলেন না হিমাগারের মালিকেরা। তাঁরা বলছিলেন, আলুর উৎপাদন এবার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সে কারণে হিমাগারগুলোর একাংশ রয়ে গেছে ফাঁকা। শেষে ভোক্তা অধিদপ্তর আলু আমদানির যে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, এতে কি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যই সত্য বলে বিবেচিত হবে না?
এখন সবজির দাম বেশি থাকলে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর দাম বাড়তে বাড়তে কেজিপ্রতি ৬০ টাকাও হয়ে যেতে পারে। এদিকে আলু আমদানি বোধ হয় হতে যাচ্ছে না। তবে ‘আগাম আলু’ উৎপাদনে লেগে পড়েছেন কৃষক। ভালো দাম পাওয়ার আশা তাঁদের। এখন সেই আলু যত দ্রুত বাজারে আসে, ততই ভালো। হিমাগারে রাখা আলুর দাম তখন হয়তো আর বাড়বে না। কোনো পণ্যের দাম আর বাড়তে না দেওয়াটাও সংশ্লিষ্টদের সাফল্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এর আগে ইলিশের বাড়তে থাকা দাম নিয়ে এখানে লিখেছিলাম। প্রজনন মৌসুম বিবেচনায় ইলিশ ধরা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাজারে ইলিশ না থাকায় মাছের দাম কি আরও বেড়েছে? এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চোখে পড়েনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এমনও হতে পারে, আগে ইলিশের মৌসুমে মাছের বাজারে এর যে একটা প্রভাব থাকত–এখন সেটা আর নেই। কারণ ইলিশ ‘অভিজাত মাছ’ হয়ে উঠেছে। এর ক্রেতাগোষ্ঠী আলাদা। সাধারণ মানুষ যেসব মাছ কেনে, সেগুলোর দাম বাজারে ইলিশ থাকাকালেও বাড়ন্ত। এখনো সে রকমই। চাষের পাঙাশ, তেলাপিয়া, কই প্রভৃতির কথা বলছি। এসবের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ওঠাটা পৃথক খবর হয়েছিল মাঝে।
অক্টোবরের শেষদিকে এসে ওগুলোর দাম কমার কারণ নেই। কমেছে বলে খবরও মিলছে না। দেশে রুই-কাতলার উৎপাদনও ভালো। কিছু আমদানিও হয়ে থাকে প্রতিবেশী দেশ থেকে। সেগুলোও চাষের মাছ। মাছ চাষে খরচ কিন্তু বেড়েছে। প্রধানত বেড়েছে ফিডের দাম। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বাড়ায়ও মাছের দাম বেড়েছে। সঙ্গে অদৃশ্য আর কম আলোচিত কারণও কি নেই?
নতুন আলু বাজারে এলে এর দাম কিছুটা কমবে কিংবা ঊর্ধ্বগতি রোধ হবে। অন্যান্য সবজির বেলায়ও একই কথা। আলুর পর সবচেয়ে বেশি নাকি বিক্রি হয় বেগুন। বেগুনসহ নানা রকম সবজি ফলিয়ে কৃষক নাম করে ফেলেছেন। কিন্তু ‘ভালো দাম’ পাচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদক সবজির খবর দিতে গিয়ে লিখছেন, কৃষক দাম পাচ্ছেন। যাঁরা জমি থেকেই সবজি তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীর হাতে, তাঁরাও কি ভালো দাম পাচ্ছেন? নাকি মোকামে এনে যাঁরা বিক্রি করছেন, তাঁরা? এসব খবর পরিষ্কারভাবে পেলে ভালো হয়।
যারা শহর-বন্দরে কৃষিপণ্য কিনি–তারা তো চাই, এর উৎপাদক যেন চড়া দামের ন্যায্য হিস্যা পান। তাহলে তাঁর জীবনমান ভালো হবে। পরবর্তী উৎপাদনেও উৎসাহ পাবেন কৃষক। তাঁদের তো উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। যাতায়াতব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় কৃষিপণ্যের দামে ব্যাপক তারতম্যটা এখন কমে আসার কথা। আরও ভালো হতো উৎপাদিত পণ্য অধিক দামের আশায় ধরে রাখার ক্ষেত্রে কৃষকের সক্ষমতা বাড়লে। সেই উদ্যোগ প্রয়োজন। আলুর মতো পণ্যের সংরক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণের কিছু আলাপ তো মাঝে শোনা গিয়েছিল।
সবজির দাম এবার এতটা বাড়ল কেন, তার ব্যাখ্যা অবশ্য প্রয়োজন। কোন উপাদানটি এতে বেশি ‘অবদান’ রেখেছে, সেটা খতিয়ে দেখা চাই। চট করে ‘সিন্ডিকেট’কে অভিযুক্ত করার একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে দেশে। অতিমুনাফার প্রবণতা আর সিন্ডিকেটবাজি তো এক নয়। বহু বিক্রেতার বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা করাও কঠিন। এটা অবশ্য থাকতে পারে ভোজ্যতেল, চিনি, আটা-ময়দার বাজারে। ভোজ্যতেল ও আটা-ময়দার দাম কিন্তু কিছুটা কমে এসেছে।
এগুলো সবজির মতো দেশে উৎপাদিত নয়। প্রধানত আমদানি হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এখানেও কমার কথা। কিন্তু সেভাবে কমছে কোথায়! এই অসংগতি নিয়েও মাঝে প্রতিবেদন হয়েছিল। ওই সব পণ্যের হাতে গোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বসেও দাম ‘যৌক্তিক’ করতে পারেনি ট্যারিফ কমিশন। এসব ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট’ আছে বলা যেতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী তো তাদের বিষয়ে কঠোর হতে চাইছেন না। তাতে পণ্যবাজার নাকি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে!
যে ক্রেতা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছেন, সামনে পেঁপেটাও কিনতে পারবেন কি না–তাঁর বক্তব্য কিন্তু সরকারের কাজে অনাস্থার একটা প্রকাশ। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবে বাড়লেও এতটা অনাস্থা বোধ হয় জাগত না। হাতে হাতে সেলফোন থাকার সময়টায় লোকে কিন্তু আশপাশের দেশ আর পরিচিত বিশ্বের খবর পেয়ে যায় মুহূর্তেই।
ঘরের পাশে কলকাতায় কত দামে গরু-মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে, সে খবর মানুষ দ্রুতই পেয়ে যায়–যখন তার পাত থেকে এটা উধাও অনেক দিন ধরে। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই ‘ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে’ এমনটা ঘটছে বলে বয়ানে সে আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। গভীর সংকটে নিপতিত শ্রীলঙ্কাও যখন ঘুরে দাঁড়ায় দ্রুত, তখনো তার মনে সহজেই প্রশ্ন জাগে এ দেশে বাজার পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হচ্ছে দেখে।
সমস্যাটা তাঁদের বেশি, যাঁরা বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলেয়ে আয় বাড়াতে পারছেন না। মজুরি বাড়ছে না, তা নয়। তবে মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সরকারের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ‘ইউরোপীয় মানের’ জীবন কাটাচ্ছেন এ দেশে। সেটা বেঠিক নয়।
চড়তে থাকা পণ্যবাজার থেকে ফায়দা তুলে নেওয়া জনগোষ্ঠীও এর মধ্যে আছে। তাদের সংখ্যাটা দুনিয়ার কোনো কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। কিন্তু এরাই তো বাংলাদেশ নয়। এদের বাইরে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রয়েছে, তাদের নিত্যদিনের ভোগান্তিও গভীর বিবেচনার বিষয়। পণ্যবাজারে অন্তত স্বাভাবিকতা দেখতে পাওয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে