অস্তিত্ব সংকটে বানার-বাজুয়া

সেলিম হোসাইন, ফুলবাড়িয়া
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২২
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৩

ফুলবাড়িয়ার একসময়ের খরস্রোতা নদ বানার ও বাজুয়া। দখল আর ভরাটে অনেক আগেই নাব্যতা হারিয়েছে। এখন অস্তিত্বই হারাতে বসেছে বানার। সমানে চলছে নদীদূষণ। মুরগির বিষ্ঠা ও আবর্জনা সরাসরি ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ড্রেনের সংযোগও মিশছে নদের পানিতে। ফলে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, উপজেলায় নদ-নদী ও খাল-বিল দখলকারীর সংখ্যা ২৯।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বানার নদের একসময় প্রস্থ ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ ফুট। তবে বাজার এলাকায় দুই পাড় দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাসাবাড়িসহ দোকানপাট গড়ে তোলেন। অথচ নদের বুক চিরে একসময় চলাচল করেছে লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু দখল ও ভরাটের কারণে নদীগুলো কোথাও কোথাও মৃত খালে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যেই বানার নদের নাব্যতা ফেরাতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার নদী খননকাজ শেষ পর্যায়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণুরামপুর মৌজার নকশা অনুযায়ী বানার নদের প্রস্থ ৮২ ফুট। কিন্তু অবৈধভাবে বসতবাড়ি ও দোকানঘর নির্মাণ করায় বর্তমানে মূল নদের ১৫ ফুট প্রস্থও নেই। বাবুগঞ্জ বাজারে বানার ও বাজুয়া নদের দুই পাড়ে বাসাবাড়িসহ দুই ডজন হাফ বিল্ডিং ঘর রয়েছে। এসব ঘর দোকান হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাবুগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় রোডে নদের ওপর একসঙ্গে ১৪-১৫টি ভবন রয়েছে।

এদিকে করোনাকালে সেতুর পশ্চিম ও উত্তর পাশে বানার নদীতে নতুন করে টিনশেড ঘর করে দখলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন বাজুয়া নদে নতুন করে মাটি ভরাট করছেন। নদ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ কিছু বলেন না।

বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেভাবে প্রতিনিয়ত নদ দখল হচ্ছে, একসময় নদ বলতে আর কিছু থাকবে না।’

নদ দখলে একজন অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, ‘নোটিশ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমিসহ ৩-৪ জন দোকানমালিক আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর আমি ছাড়া সবাই আবার নিজ নিজ ঘরে উঠেছে।’

বাবুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. আশরাফুল ইসলাম লিমন চৌধুরী বলেন, ‘ভরাট ও দখলের কারণে নদটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই, একসময় খরস্রোতা ছিল বানার। দখলের ফলে বর্ষা মৌসুমে শত শত একর জমির ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে যায়।’

বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মির্জা মো. ফজলুল হক বলেন, ‘প্রভাবশালীরা ইউএনও স্যারের কথাও মানেনি। ঠিকই নদ দখল করে গেছেন।’

বাবুগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বানার নদে মুরগির বিষ্ঠা ফেলায় বাবুগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রভাব পড়ছে। দুর্গন্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে চায় না। মানুষ বাজারে আসতে পারে না।’

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘কোনোভাবেই নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিলরুবা ইসলাম বলেন, ‘আমার আসলে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা নদ দখলকারীদের তালিকা করেছি।’

ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এখনো দেখিনি নদ দখল হয়েছে কি না। তবে কেউ তা করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত