ময়মনসিংহ-২: প্রতিমন্ত্রী শরীফে ঐক্যবদ্ধ আ.লীগ

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
Thumbnail image

তারাকান্দা বাজারে মুকুলের চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয়বস্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ষাটোর্ধ্ব রমিজ উদ্দিন চায়ে চুমুক দিয়ে পাশে বসা ইসলাম উদ্দিনকে বলছিলেন, ‘জীবনে বহু নির্বাচন দেখেছি। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে হয়তো আগামী নির্বাচনও দেখে যেতে পারব। এবার শরীফ আহমেদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফেয়ার নির্বাচন হলেও নানা ভাগে বিভক্ত বিএনপি তাঁর কাছে পাত্তাই পাবে না। শরীফ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।’ সায় দিচ্ছিলেন ইসলাম উদ্দিনও।

নির্বাচন নিয়ে ময়মনসিংহ-২ আসনের ভোটের মাঠ ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলায় চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে পরিচিত। একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাষাসংগ্রামী  এবং আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে নির্বাচিত সাবেক এমপি এম শামছুল হকের ছেলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। নেতা-কর্মীরা বলছেন, তিনি ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে শক্ত অবস্থান ও নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন।

মুখে মনোনয়ন চাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানালেও এই আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী নেই বললেই চলে। মনোনয়নের আশায় কাউকে মাঠেও দেখা যায়নি। নির্বাচন এলে ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ এলাকায় আসেন। এবারও আসতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। এর বাইরে সাবেক এমপি হায়াতুর রহমান খান বেলাল মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে দলের জন্য তিনি সময় দিতে পারছেন না। অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

বিএনপি থেকে এই আসনে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চান একাধিক নেতা। ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ এনায়েতুর রহমান, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল বাশার আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার এবং সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল হক আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত রজব আলী ফকিরের ছেলে সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ারও মনোনয়ন চাইবেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আমাকে পুনরায় মনোনয়ন দিলে এই আসন থেকে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি হায়াতুর রহমান খান বেলাল বলেন, ‘জীবনের পুরোটা সময় রাজনীতিতে কাটিয়েছি। এখনো মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণ আমাকে চাইলে পুনরায় নির্বাচন করব।’ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দল মনে করলে আমাকে দেবে, না হয় যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর হয়ে কাজ করব।’

আওয়ামী লীগের এ দুর্গে হানা দিয়ে আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় বিভক্ত ও কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে নানা তৎপরতা চালিয়ে  প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। একক আধিপত্য প্রমাণের চেষ্টার উদাহরণ এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। শাহ শহীদ সারোয়ার ও মোতাহার হোসেন তালুকদারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

তবে শাহ শহীদ সারোয়ার স্থানীয় বিএনপিতে কোন্দল-দলাদলির কথা অস্বীকার করে জানান, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ফুলপুর ও তারাকান্দা বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ এবং সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হলে তাঁর বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমি এমপি ছিলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মেয়াদে ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার যোগাযোগ এবং অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।’

মোতাহার হোসেন তালুকদার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করে বলেন, ‘দলের এই দুঃসময়ে মাঠে থেকে সকল বাধা মোকাবিলা করে কাজ করছি। অনেকে ঢাকায় বসে মনোনয়ন চায়, সারা বছর দলের কোনো কাজে আসে না। এসব মানুষ মনোনয়ন পেলে ত্যাগী নেতারা আস্থা হারাবেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে এখন পর্যন্ত মাঠ নিজের দখলে রেখেছি। কেন্দ্রীয় নেতারা এর বিচার-বিশ্লেষণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত